আতিকুর রহমান মানিক :

অাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির এ যুুুগে দেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে থাকা কক্সবাজার জেলাবাসীর ভার্চুয়াল ঠিকানা কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)। ২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী যাত্রা শুরু করা সিবিএন এখন দশকপূর্তির পথে। সিবিএন এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে লেখাটা শেষ করতে কয়েকদিন দেরী হয়ে গেল। তাই সহৃদয় পাঠকদের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমার মত নিতান্ত অদক্ষ ও নগন্য এক সংবাদকর্মীকে সিবিএন এ কাজ করার সূযোগ দিয়েছিলেন সব্যসাচী সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী। যার ফলশ্রুতিতে ২০১১ সাল থেকে আমার আনাড়ি হাতের করা নিউজগুলো শোভা পাচ্ছিল জনপ্রিয় এ পোর্টালে। সিবিএন এ কাজের সুবাদে বিগত অর্ধযুগেরও বেশী সময় ধরে জমা হয়েছে হাজারো সুখস্মৃতি। তারই কিছু জাবর কাটার জন্য এ লেখা।
২০১৬ সালের ১৭ মে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এক নিম্নচাপের উপস্হিতি রাডারে ধরা পড়ল। একদিন পার না হতেই নিম্নচাপটি প্রবল ঘূর্নিঝড়ে রূপান্তরিত হলে আবহাওয়াবিদরা এর নাম দিলেন “রোয়ানু”। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ সংক্রান্ত প্রথম নিউজটি করেছিলাম। “ধেয়ে আসছে রোয়ানু” শিরোনামে উপরোক্ত নিউজ ১৮ মে সন্ধ্যা ৬.১৯ মিনিটে কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন) এ প্রকাশিত হল। তখনো কক্সবাজার উপকূল থেকে ১,৫৫০ কিলোমিটার দুরে ছিল এর অবস্হান। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রবিন্দুতে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৪৪ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার বেগে ৬০ কিলোমিটারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এরপরদিন ১৯ মে বিকাল ৪.৪৫ মিনিটে “প্রবল শক্তিতে এগুচ্ছে রোয়ানু ; কক্সবাজারে ৪ নং সতর্কতা সংকেত” শিরোনামে ২য় নিউজটি সিবিএন এ আপলোড হল। দেশ-বিদেশের পাঠকরা এবার হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। ক্লিক আর ক্লিক ! একই দিন রাত ১১.৪৫ মিনিটে “শক্তি সঞ্চয় করে এগুচ্ছে ঘূর্নিঝড় রোয়ানু” শিরোনামে আরেকটি নিউজ প্রকাশিত হলে সর্বশ্রেণীর পাঠকদের সাড়া ছিল লক্ষ্য করার মত। এরপরদিন ২০ মে পবিত্র শবে বরাত। এদিকে জনমনে প্রবল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। ততক্ষনে আরো কাছে চলে এসেছিল ঘূর্ণিঝড়টি। “কক্সবাজারের আরো নিকটে রোয়ানু ; দূর্যোগ মোকাবেলায় কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল” শিরোনামে আরেকটি নিউজ সিবিএন এ সকাল ১১ টা ৫১ মিনিটে প্রকাশিত হল। এক-একটা নিউজ আপডেট হচ্ছে আর ক্লিক বাড়ছে। আমাকেও কেমন যেন নেশায় পেয়ে বসল। এদিকে সিবিএন সম্পাদক ফোন দিয়ে বলে দিয়েছিলেন আপডেট নিউজগুলো করতে। এরপর দুপুর ২:৩৯ মিনিটে “জেলা প্রশাসনের জরুরী বৈঠক ; প্রস্তুত ৫১৬ আশ্রয় কেন্দ্র, ১৬৫ টন চাল মজুদ”, ও সন্ধ্যা ৭:৪৯ মিনিটে “শনিবার অতিক্রম করতে পারে রোয়ানু ; সাথে জলোচ্ছাস”, শিরোনামে আরো দুটি নিউজ আপ হলে গায়ের উপর এসে পড়া ঘূর্নিঝড়ের বিপদ সম্পর্কে সবাই আাঁচ করতে পারল। ততক্ষনে ৬ নং বিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে। এক একটা নিউজ আপ হচ্ছে আর দেশ-বিদেশ থেকে ফোনে ম্যাসেঞ্জারে-ইমুতে অনবরত কল্ আসছে। সবাই চরম উদ্বিগ্ন। এরপর এল সেই ২১ মে। থমথমে আতংকের সেই রাতে সরারাত সম্পাদক অাকতার ভাই নিউজরুমে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। আবহাওয়া অফিসের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রেখে আমি নিউজগুলো রেডি করছিলাম আর সম্পাদক আপডেট দিচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। রাত ০১: ০৫ মিনিটে ” দ্বারপ্রান্তে রোয়ানু ; প্রশাসনের সর্বাত্নক প্রস্তুতি” শিরেনামে আরেকটি নিউজ সিবিএন এ ভেসে উঠল। জনগনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া ও দূর্যোগ মোলাবেলায় সচেতন করতে রেড ক্রিসেন্ট, মেডিকেল টীম, ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং শুরু করল। এদিকে দমকা হাওয়া শুরু হয়েছে কক্সবাজার শহরজুড়ে। ল্যাপটপ-মোবাইলে চার্জও কমে আসছে। এদিকে মাত্র সাত ঘন্টায় ৯৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে উপকূলে আছড়ে পড়েছে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টি। উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার জনগন, জেলা প্রশাসন ও আবহাওয়া অফিস থেকে সর্বশেষ আপডেট নিয়ে ১০:১২ মিনিটে “কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করছে রোয়ানু” শীর্ষক নিউজটি আপ হল।
এরপর সম্পাদকের ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর আপডেট দেয়া সম্ভব হলনা। এদিকে নিউজ আপডেট না পেয়ে সম্পাদকের মোবাইলে দেশ-বিদেশ থেকে ফোন আর ফোন। সবাই ঘূর্ণিঝড়ের অবস্হা জানতে উদগ্রীব। আসলে সে দিনই বুঝা গিয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাংলাভাষীদের কাছে সিবিএন কতটুকু জনপ্রিয়। রোয়ানোর নিউজ আপডেট রাখতে সার্বক্ষনিক তথ্য সহায়তা পেয়েছিলাম কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের তৎকালীন সহকারী আবহাওয়াবিদ নাজমুল ভাই ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের থেকে। পাঠকদের আগ্রহ দেখে সেদিন সিবিএন সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী যেন একপ্রকার মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। অামিও যেন নেশাগ্রস্হ হয়ে পড়েছিলাম। না হলে সারারাত জেগে কেউ নিউজ লেখে ও আপডেট করে ?
এরকম আরো অনেক সুখস্মৃতি জমা হয়ে আছে। সময় সুযোগ হলে কোনদিন আবার স্মৃতির ডালি নিয়ে উপস্হিত হব পাঠকদের দরবারে। ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে সিবিএন আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এ যুগ আপডেট নিউজের জন্য পাঠকরা আজ সিবিএন এর উপর নির্ভরশীল। স্হানীয় পত্রিকাগুলো অনেকাংশে নিউজের জন্য এই পোর্টালের উপরই নির্ভরশীল। তবে নিউজের ক্রেডিটে সিবিএন এর নাম দিতে প্রচন্ড নারাজ তাঁরা। আমরাও মাঝে মধ্যে কৌশল অবলম্বন করি। নিউজের সোর্স উল্লেখ করার সময় “সিবিএন’কে জানান” উল্লেখ করি। আর অন্ধভাবে কপি করার সময় অবধারিতভাবেই সিবিএন এর স্বীকৃতিটুকু তাঁরা নিজের অজান্তেই দিয়ে দেন, পরের দিন পত্রিকার পাতায়ও “সিবিএন’কে জানান” শোভা পায়!
একসময় প্রচুর নিউজ করতাম। কারেন্ট, এক্সক্লুসিভ, কলাম, ফিচার আর্টিকল কতকিছু। কিন্তু এখন ব্যস্ততার বৃত্তে বন্দী হওয়ার কারনে আগের মত আর নিউজে সময় দেয়া যায়না। তবু চেষ্টা করি প্রিয় সিবিএন এর সাথে আপডেটেট থাকতে। সম্পাদকের পাশাপাশি আন্তরালে থেকে সিবিএনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তুখোড় মেধাবী যুগ্ন বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইর। কিছুদিন আগে সিবিএন এর সাথে যুক্ত হয়েছে অনুজ প্রতিম দক্ষ সাংবাদিক শাহেদ মিজান।
চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ সফলতা ও পূর্ণতার মধ্যগগনে সিবিএন। আনন্দের এ দিনে অনেক খন্ডস্মৃতিই মনে পড়ছে। কিন্তু লেখাটা বেঢপ দীর্ঘ হয়ে যাওয়ায় ইতি টানতে হচ্ছে। আবারো হাজির হব সহৃদয় পাঠকদের কাছে, কথা দিলাম।
সাংবাদিক, লেখক, বিজ্ঞাপন দাতা, পাঠক সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবে প্রিয় কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)। এ অগ্রযাত্রা অব্যহত থাকুক ।