এম.আর মাহমুদ

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর অবিভক্ত চকরিয়ার উপকূল থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী অফিসে পৌঁছাতে হতো। কারণ সে সময় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংবাদ প্রেরণের সুযোগ ছিল না। এছাড়া এনালগ পদ্ধতির টিএন্ডটি ফোন দীর্ঘদিন অচলই ছিল। তাই বাধ্য হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলি অফিসে গিয়ে পৌঁছানো ছাড়া কোন গতি ছিল না। একদিন বাসে করে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে পাশে বসা এক প্রবীণ ব্যক্তি হঠাৎ বলে বসলেন, গাড়ীর অর্ধেক যাত্রী পাগল হলেও সমস্যা হয় না, তবে চালক পাগল হলে বিপদ হয়। কারণ চালকের উপর নির্ভর করে বাসের সব যাত্রীর ভাগ্য। কথাটি অপ্রাসঙ্গিক হলেও “চিরন্তন সত্যকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই।” তাই অনিচ্ছা স্বত্বেও পাঠকদের সামনে ওই উক্তিটি তুলে ধরতে হয়েছে। ক’দিন আগে বেশক’টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক এস.এস.সি পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন শেষে একটি হোটেলে নাস্তা করার সময় এক শিক্ষকের অনুরোধে তাদের সাথে বসে আমিও এককাপ চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েই হঠাৎ এক শিক্ষক বলে বসলেন, বড় মানসিক নির্যাতনে আছি। কোন ধরণের মানসিক নির্যাতন জানতে চাইতে ওই সম্মানিত শিক্ষক বলে বসলেন, চকরিয়ার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কর্মকান্ড, অনৈতিক আচরণ ও অশ্লীল গালাগালিতেই চকরিয়ার ৭০-৮০টি এম.পি.ও ও নন-এম.পি.ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ শিক্ষক-শিক্ষিকারা অতিষ্ট। ওই শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিমাসে ২ বার বিদ্যালয় পরিদর্শনের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবারে ১ হাজার টাকা করে ‘জিজিয়াকর’ আদায় করছে। এ পরিমাণ টাকা ওই গুণধর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজ হাতে গ্রহণ করে না, তার পকেটে ঢুকিয়ে দিতে হয়। কি চমৎকার এ দেশ! অনৈতিক অর্থ আদায়ে আজব একটি নিয়ম। এ মাধ্যমিক কর্মকর্তা সারাদিন মাতাল অবস্থায় থাকলেও নিজেকে দাবী করেন ‘একজন অধ্যাত্মিক সাধক’। ধর্মে সম্পর্কে তিনি যা জানে তা আর কেউ জানে না। তার অবস্থা দেখে বেরসিক অনেকে মন্তব্য করতে শোনা গেছে, এ যেন ‘ঘটি ডুবে না নামে তাল-পুকুর’। চকরিয়ার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খাঁন মাতাল অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লীদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়াসহ সরকারী পাঠ্যবই পাচার করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিল। সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবদীন সাহেবের তদবিরে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে দীর্ঘদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘোর ঘোর করেছে। তারপরও অজ্ঞাত কারণে পুনরায় চাকুরীতে বহাল হয়ে তার পুরানো অভ্যাসগুলো ছাড়তে পারেনি। কথায় আছে ‘স্বভাব যায় না মলে, ইল্লত যায় না ধুলে’।

চকরিয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান ও মাদ্রাসার সুপারসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা তার এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা-কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছে। কিন্তু ওই কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত দিব্বি আরামে চকরিয়ার শিক্ষকদের নির্যাতন করে যাচ্ছে। অনেকেরই প্রশ্ন এ মাতাল শিক্ষা কর্মকর্তার খুঁটির জোর কোথায়? তার কোমরে এত শক্তি আসে কোত্থেকে? শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খাঁন ধমক দিয়ে বলে বেড়ায়, তাকে টাকা না দিলে কিল ঘুষি খেতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশক’জন বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রধান স্বীকার করেছেন, ওই শিক্ষা কর্মকর্তা এম.পি.ও’র একটি ফাইল সেন্ট ও ডিও পোস্ট ও কোন বিদ্যালয়ের শূন্যপদে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং কর্মচারী কিংবা অফিস সহকারী নিয়োগ কমিটিতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে রাখার বিধান থাকায় ওই বিতর্কিত কর্মকর্তাকে নগদ নারায়ণ হিসেবে ১০-১৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়। অন্যথায় ফাইলে স্বাক্ষর করে না। এভাবে অবৈধ টাকা নেয়ার সময় দাম্ভিকতার সাথে বলেন ‘আজ নগদ কাল বাকী, আমাকে দিতে পারবে না ফাঁকি’। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নন-এম.পি.ও ভূক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খাঁনের এসব অনিয়ম ও অসদাচরণের সত্যতা স্বীকার করেছেন, কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদুল হক ও বি.এম.এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম। তারা দাবী করেছেন, এ ধরণের অনৈতিক কাজে জড়িত ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে অনতিবিলম্বে চকরিয়া থেকে প্রত্যাহার করা না হলে চকরিয়ার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা তার বিরুদ্ধে কর্মসূচী গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছেন। অন্যথায় যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছে।