ডেস্ক নিউজ:

এতিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি বিশেষ আদালত।

রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার পর ওই দিনই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আইন অনুযায়ী রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি (সার্টিফাইড কপি) পাওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এ জন্য ওকালতনামায় খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি না পাওয়ায় আপিল করা যাচ্ছে না। অবশ্য আইনজীবীদের প্রত্যাশা, আগামী রোববার অথবা সোমবার রায়ের কপি পাওয়া যাবে। রায়ের কপি পেলে আপিল আবেদন করবেন তারা। সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করার কৌশল কী- জানতে চাইলে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আদালতের যে সব প্রক্রিয়া রয়েছে আমাদের আইনজীবীরা সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন।

তাহলে অনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি কেন- এমন প্রশ্নের জবাব আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এটা তো আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। দলের প্রধানের মুক্তির পাশাপাশি সামনে নির্বাচন রয়েছে। এ কারণে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি সভা-সমাবেশ করছি। রাজপথে যখন যেটা প্রয়োজন সেটা আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে পালনের চেষ্টা করছি।’

রয়েছে জামিন আবেদনের প্রস্তুতি

নিম্ন (বিচারিক) আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যেহেতু আপিল করতেই হবে সে মোতাবেক আপিলের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা। তারা জানান, আপিলের ফাইল প্রস্তুত রয়েছে। রায়ের কপি পাওয়ার পর সেটি পর্যালোচনা করে আপিলের গ্রাউন্ড ঠিক করা হবে।

জামিনের জন্য যে সব যুক্তি থাকতে পারে সে বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন জামিন পাওয়ার যোগ্য। কেননা এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ কম। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একজন নারী, তার বয়স ও স্বাস্থ্যগত বিষয়টি জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচনার বিষয় হবে।

আইনজীবী এহসানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনের চেম্বারে এ মামলার আপিল আবেদনের প্রস্তুতি রয়েছে। এসব বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী।

আপিল নাকি জামিন, প্রথমে কোনটা

বিএনপির দলীয় প্রধান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন চাওয়া হবে নাকি আপিল আবেদনের পর তার সঙ্গে জামিন চাওয়া হবে- এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদিন জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হবে। এর সঙ্গে জামিন আবেদন থাকবে।

জয়নুল আবদিনের মতে, ‘কয়েকটি মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সরকার চাচ্ছে না কেবল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাক। রাষ্ট্রপক্ষ বিভিন্ন মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে তার কারাবাস দীর্ঘ করতে পারে।’

রায়ের কপির জন্য দুই আবেদন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড ঘোষণার দিন ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের কপি চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানও রায়ের কপি পেতে আবেদন করেন।

আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জাগো নিউজকে বলেন, ‘রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য আমরা বিশেষ জজ আদালত-৫ এ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। রায়ের কপির জন্য রায়ের দিন (৮ফেব্রুয়ারি) আমি নিজে আবেদন করেছি। আজও বিচারক জানিয়েছেন, রায়ের কপি আগামী রোববার অথবা সোমবার দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারকের কথা অনুযায়ী, আগামী রোববার অথবা সোমবার রায়ের কপি পাওয়া যাবে। কপি পেলে সঙ্গে সঙ্গে আপিল করব।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি চার আসামি হলেন- সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান।

কারাদণ্ডের সঙ্গে দুর্নীতির সমপরিমাণ অর্থদণ্ডও করা হয়েছে তাদের। এতিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক মামলাটি দায়ের করে।