বাংলাট্রিবিউন : মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে তিনি জানান, নতুন করে আরও ১ হাজার ৬৭৩ রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আশ্বাসও দিয়েছে মিয়ানমার।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মিয়ানমারের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও শোয়ে।বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয়ে ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমি মিয়ানমার সফরের সময় যে দশটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, সেগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। জাতিসংঘে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ৫ দফা দিয়েছেন সেগুলো, কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এর আগে ১১ হাজার মিয়ানমার নাগরিকের (রোহিঙ্গা) তালিকা দিয়েছিলাম। ওই তালিকা যাচাইবাছাই করছে মিয়ানমার। এবার বিচ্ছিন্নভাবে নয়, ১ হাজার ৬৭৩ পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জন মিয়ানমার নাগরিকের তালিকা তাদের কাছে দিয়েছি।’

এত কম সংখ্যক কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সব তো একসঙ্গে যাবে না, যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেভাবে আন্তরিক পরিবেশে দু’দেশের মধ্যে বৈঠক হয়েছে তাতে আমি বিশ্বাস করি যে মিয়ানমারের সব নাগরিক নিজ দেশে ফেরত যাবে।’

বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১০ লাখ ৬০ হাজার মিয়ানমারের নাগরিককে (রোহিঙ্গা) তালিকাভুক্ত করেছি। এই লোকগুলোকে আমরা ক্রমান্বয়ে সে দেশে পাঠাবো, তা নিয়েও আলোচনা করেছি। তাদের পর্যায়ক্রয়ে তিন স্তরে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ফাইনাল) ফেরত পাঠানো হবে। প্রথমে যেখানে তাদের স্থানান্তর করা হবে সে জায়গা শনাক্ত, দ্বিতীয়ত, তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তৃতীয়ত, তাদের নিয়ে যাওয়া।’

তিন স্তরে কেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছু চূড়ান্ত করে ফেরত না পাঠালে ভবিষ্যতে তারা আবারও চলে আসতে পারে। এজন্যই তিন স্তরে করা।

‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো লাইনে (শূন্য-রেখা) ৬ হাজার ৫০০ মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) অবস্থান করছে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। আমরা মিয়ানমারকে বলেছি, তাদের যেন সীমান্ত থেকেই ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়’, যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী জেলায় একটি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে একজন জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নেবেন। মিয়ানমার তাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরাও তাদের সহায়তা করবো বলে জানিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সীমান্তে ৪৯টি ইয়াবা কারাখানার সন্ধান পেয়েছি। সেগুলো বন্ধ করার জন্য আমরা মিয়ানমারকে অনুরোধ করেছি। সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।’

এছাড়া সীমান্ত হত্যা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।তিনি জানান, বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস (বিএলও) নিয়ে কথা হয়েছে। আগের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ীই এটা হবে। পাশাপাশি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকও যথা নিয়মে চলবে।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে পৌঁছান। এর আগে গত অক্টোবরে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও শোয়ে ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল।