আতিকুর রহমান মানিক :

ক’দিন ধরেই যাই যাই করছে শীত। রাতে শীত আর দিনে গরম, মাঝে-মধ্যে দক্ষিনা হাওয়ার মোলায়েম পরশ। ঋতুরাজ বসন্ত এই এলেন বলে। প্রকৃতির এমনি পালাবদলের ফাকে মাঘের শেষ দিনে ১২ ফেব্রুয়ারী, সোমবারের দুপুর। পর্যটন স্পট মেরিন ড্রাইভ রোডের দরিয়ানগর পিকনিক স্পটে একে একে সমবেত হচ্ছেন বিভিন্ন পেশাজীবিরা। শিক্ষক-ছাত্র, সাংবাদিক, আইনজীবি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আরো বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষজনে গিজগিজ।

ওহ ব্যাপারটাতো বলা হয়নাই, কক্সবাজার সাহিত্য পরিষদের বার্ষিক পিকনিক ও মিলনমেলা। এবার একটু শানে-নুজুল। সংগঠনটির প্রসব বেদনা উঠেছিল কয়েকবছর আগে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কিন্তু সৃজনশীল মানুষদের নিয়েই শুরু হয়েছিল কক্সবাজার সাহিত্য পরিষদের ঘরকান্না। সাময়িকী ও দেয়ালিকা প্রকাশ, লেখালেখি, নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা, চা-চক্র, সৈকত হন্টন ও আনন্দ ভ্রমনসহ অনেক কিছুই ইতিপূর্বে সফল ও জজমজমাটভাবে আয়োজন করা হয়েছিল।

গত প্রায় দেড় মাস আগে নতুন বছর শুরু হলে বার্ষিক পিকনিক ও মিলনমেলার বিষয়টিও সামনে চলে আসে। অনেক বিবেচনা ও কাটছাটের পর পিকনিকের দিন ঠিক করা হয় ১২ ফেব্রুয়ারী। কিন্তু সদস্যরা সবাই বিভিন্ন পেশাজীবি হওয়ায় দুপুরের পরেই ক্ষন নির্ধারন করা হয়েছিল।

যাই হোক এসে গেছেন সবাই।নজরুল-আব্বাস উদ্দিন সেন্টার কক্সবাজার’র সভপতি এডভোকেট রমিজ আহমদের নেতৃত্বে আইনজীবি সদস্যগন, কক্সবাজার সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ও শিক্ষক-সাংবাদিক হুমায়ুন সিকদারের নেতৃত্বে শিক্ষক সদস্যরা, সাংবাদিক ইসলাম মাহমুদ-ছৈয়দ আলমের নেতৃত্বে সাংবাদিকরা ও অন্যান্য পেশাজীবি সদস্যরাও এসে গেছেন। নির্ধারিত কর্মসূচী মোতাবেক আগে শুরু হল মেজবান।

আইটেমগুলোও ছিল আনকমন। প্রচুর লালমরিচের গুঁড়াসহযোগে রান্না করা গরুর ঝাল গোশত, বুটের ডাল দিয়ে রান্না করা গরুর নলা ও পায়া, হাঁড়ের ঝোল, সালাদ ও সাথে সাদা ভাত। গরুর গোশত বিশারদ ছৈয়দ আলমের পোয়াবারো অবস্হা। সবাই খেয়ে ওভারটাইট। এরপর শুরু হল গুহা পরিভ্রমন, দরিয়া নগরের প্রকৃতিক সুগভীর খাদে হারিয়ে যাওয়া। মাথার উপরে দুইপার্শ্বে হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের দেয়াল ও তার মাঝে প্রকৃতিসৃষ্ট ঝর্ণার সরু গতিপথ, এ যেন ভয়ঙ্কর সুন্দর।

গিরিখাতে আবার প্রচন্ড ঠান্ডা। আল­াহর সৃষ্টির মধ্যে মানুষ যে কত ক্ষুদ্রাকৃতি ও অসহায় তা এরকম স্হানে এলে অনুধাবন করা যায়। এর মাঝে ভয়ার্ত গুনগুন শব্দ শুনে ফিরে তাকালাম সবাই। না, তেমন কিছু নয়। হুমায়ুন সিকদার দোয়া-দরুদ পড়ছেন, পাহাড় ভেঙ্গে যাতে চাপা না পড়েন !

আরো ঘুরাঘুরি, ট্র্যাকিং ও রাইডিং শেষে এবার আড্ডার পালা। সবাই গোল হয়ে বসে আড্ডা জমে উঠল। গান, কৌতুক, আবৃত্তি, চাপাবাজি ও হাসাহাসি অনেক হলো। বিশেষ করে “নলেজ” কাহিনী শুনে সবার দমফাটানো হাসি। নলেজের ব্যাপারটা আরেকদিন সবিস্তার বর্ণনা করা যাবে।

এদিকে কলেজ জীবনের লাইলী-মজনু মার্কা পিরিতি ছৈয়দ আলম কখন যে সরসভাবে বর্ননা করে দেয়, এ ভয়ে ইসলাম মাহমুদ অবশ্য খুব ভয়ে ভয়ে ছিলেন। কিন্তু ওদিকে হাসি-আনন্দের মধ্যে কখন যে সূর্য নীলিমায় হেলে পড়েছে, সে খেয়াল কেউ করেনি। এবার ফেরার পালা। আসলে আমাদের জীবনটাও এরকম। হাসিখুশির মাঝেই একদিন হঠাৎ করেই সময় ফুরাবে। যাত্রা করতে হবে আপন আলয়ে।

আড্ডায় অংশ নেন- আতিকুর রহমান মানিক, বশির মাহমুদ, আবদুল­াহ, জসিম উদ্দিন ও তারেক।

শেষ বিকালের মোলায়েম আলোয় বিজ্ঞ এডভোকেট রমিজ আহমদের আয়োজনে জমে উঠল চা-চক্র ও আরেকপ্রস্হ আড্ডা। সে আড্ডায় সিদ্ধান্ত হল বসন্ত উৎসব আয়োজনের। এরপর সাঙ্গ হলো মিলন মেলা। আবারো আমরা মিলিত হব কোন একদিন, একখন্ড অবসরে। এই নিয়েই তো জীবন।