মোঃ আকতার হোছাইন কুতুবী ॥
বিখ্যাত লেখক ও কবি সমরেশ মজুমদার তার ঐতিহাসিক একটি কবিতায় লিখেছেনÑ তুমি ফিরবে কোন একদিন- হয়তো নিলীমায় হারানো কোন এক নিষ্প্রভ বেলায়। নতুবা কোন এক নবীন হেমন্তে, এক নতুন দিনের নির্মল খোলা হাওয়ায়। অথবা কোন এক শ্রাবণের দিনে- অহরহ ঝরা ঘন কাল মেঘ বৃষ্টির- মুহু মুহু নির্ঝর খেলায়। তুমি ফিরবে কোন এক রাতে- পূর্ণিমার ভরা জোছনায়। তুমি ফিরবে জানি বহুদিন পরে- হয়তবা হাজার বছর পরে। কোন এক নিঃস্ব হৃদয়ে, লক্ষ প্রাণের ভীরে তুমি ফিরবে। বহুরূপে সেই প্রাণ অনেক নবীনের ভীরে তোমার আমার গড়া ভালোবাসার নীড়ে। সত্যিই কবিরা খুব ভেতর থেকেই তার চিন্তা-চেতনা থেকে লিখেন। এই কবিতার মাঝে বর্তমান সময়ে অন্যতম সাড়াজাগানো কবি, লেখক, গীতিকার, বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব কবি শফিকুল ইসলামের ধ্যান, জ্ঞান, ভালোলাগা, ভালোবাসা, চাওয়া-পাওয়া-দেওয়া খুঁজে পাওয়া যায়। আজ তার শুভ জন্মদিন উদযাপিত করলো শুভানুধ্যায়ীরা। চির তরুণ ৫৩ বছরে পদার্পণ করা কবি শফিক সরকারি দায়িত্ব পালন শেষ করে বাকি সময় মগ্ন থাকেন লেখালেখি ও সাহিত্য চর্চাতে। রবিবার সরকারি বাসভবনে বেশ জাকজমকভাবে পালন করলো তার অগণিত পাঠক, আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্খীরা জন্মদিন উৎসব। যারা কবি শফিকুল ইসলামের জন্য আয়োজিত জন্মদিন উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি তারা ক্ষুদেবার্তা, টেলিফোন, মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরন্তর ভালোবাসা জানিয়েছেন। আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ছোট্ট একটি লেখা দিয়ে। তিনি আসলেই একজন সাদামনের ভালো মানুষ। তার জন্য লিখতে ভালো লাগে। কারণ একজন ভাল মাপের হৃদয় নিংড়ানো অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী মাটির মানুষ যিনি কবিতা, গান, শিল্পচর্চা আবার অন্যদিকে বিচারকের আসনে আসীন, সবকিছু কেমন জানি সৃষ্টি কর্তার মহান দান। তারই ফলশ্রুতিতে আজ কাব্যিকপ্রেমী পাঠকের কাছে কবি শফিকুল ইসলাম উদাহরণ হয়ে আমাদের মাঝে বিরাজমান অবস্থায় অনবরত লিখে যাচ্ছেন বিভিন্ন বিষয়াদির উপর। কর্মজীবনেও তিনি সৎ, নিষ্ঠাবান। সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন অনেকখানি। তার কর্মজীবনে কুষ্টিয়া জেলার ডিসি, ঢাকার মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট, সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের জি.এম, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিবসহ বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থেকে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সাদা গোলাপের মত টগবগে এই মানুষটি।
আমি লেখক হিসেবে নিজেও একজন কাব্যিকতায় হ-য-ব-র-ল হিসেবে লিখি। নামও দিয়েছি তাই। তবে শফিকুল ইসলাম ভিন্ন মাত্রার অন্যতম প্রেম ও বিরহের কবি। তার প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ এই ঘর এই লোকালয়, একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি, তবুও বৃষ্টি আসুক, শ্রাবণ দিনের কাব্য, দহন কালের কাব্য, প্রত্যয়ী যাত্রা, গীতি সংকলন করেন মেঘ ভাঙ্গা রোদ্দুর, এছাড়াও রয়েছে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শফিকুল ইসলামের আড়াই হাজারের অধিক গান নিয়ে শ্রেষ্ঠ গীতি কবিতা নামের পাঁচ খ- বিশিষ্ট গ্রন্থ। বিখ্যাত লেখক জীবনানন্দ দাশের অসাধারণ একটি কবিতা মনে পড়ে গেলো- সুচেতনা, তুমি এক দূরতর দ্বীপ- বিকেলের নক্ষত্রের কাছে; সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে- নির্জনতা আছে। এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা- সত্য, তবু শেষ সত্য নয়। কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে; তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়। আজকে অনেক রূঢ় রৌদ্রের ঘুরে প্রাণ- পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো- ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু, দেখেছি আমারি হাতে হয়তো নিহত- ভাই বোন বন্ধু পরিজন পড়ে আছে; পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন; মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে। কেবলি জাহাজ এসে আমাদের বন্দরের রোদে- দেখেছি ফসল নিয়ে উপনীত হয়; সেই শস্য অগণন মানুষের শব; শব থেকে উৎসারিত স্বর্ণের বিস্ময়- আমাদের পিতা বুদ্ধ কনফুশিয়াসের মতো আমাদেরো প্রাণ- মূক করে রাখে; তবু চারিদকে রক্তক্লান্ত কাজের আহ্বান। সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে; সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ; এ বাতাস কী পরম সূর্যকরোজ্জ্বল; প্রায় তত দূর ভালো মানবসমাজ- আমাদের মতো ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে- গড়ে দেব আজ নয়, ঢের দূর অন্তিম প্রভাতে। মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে কখন এসেছি, না এলেই ভালো হত অনুভব করে; এসে যে গভীরতর লাভ হল সে সব বুঝেছি-শিশির শরীর ছুঁয়ে সমুজ্জ্বল ভোরে; দেখেছি যা হল হবে মানুষের যা হবার নয়- শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়।
তার সকল সৃজনী প্রতিভা যেভাবে ক্রমবিকাশ লাভ করে বিকশিত হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, তিনি হবেন এই লাল সবুজের পতাকাবাহী বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি ও লেখক। সেদিন আর বেশী দূরে নয়। তবে আজকের জন্মদিনের উৎসবে তার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা এই ঘর, এই লোকালয়, শ্রাবণ দিনের কাব্য, মেঘভাঙ্গা রোদ্দুর, তবু বৃষ্টি আসুক, দহন কালের কাব্যের মত অনেক লেখনীর সাড়াজাগানো কাব্যগ্রন্থের লেখক কবি শফিকুল ইসলামের জন্য।
লেখক পরিচিতি: মোঃ আকতার হোছাইন কুতুবী, প্রধান সম্পাদক-জাতীয় ম্যাগাজিন জনতার কন্ঠ, উপদেষ্টা সম্পাদক জাতীয় ম্যাগাজিন জাতির আলো, সহ-সম্পাদক- জাতীয় দৈনিক আমার কাগজ ও দি গুড মর্নিং, ঢাকা।