ডেস্ক নিউজ:

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অালমগীর বলেছেন, দল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। শুক্রবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে বেশির ভাগ নেতা এমনটাই মনে করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুর হওয়া বৈঠকটি চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বৈঠকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যরা অংশ নিয়েছেন।

বৈঠক চলাকালে রাত ৮টায় গুলশান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের এ কথা জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, আমাদের আজকের এ সভায় বেশিরভাগ নেতার পক্ষ থেকে যে বিষয়টা এসেছে সে বিষয়টা হচ্ছে দল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার প্রতিবাদে সমগ্র দেশ আজকে ধিক্কার দিয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা দেশবাসীকে সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। যে সমস্ত দলের নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এবং সব নেতাকর্মী যারা বাধা, নিষেধ ও নির্যাতনকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বিএনপির এ নেতা জানান, আজকে এ সভা আমাদের দলকে আরো ঐক্যবদ্ধ করবে। আজকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের যে বক্তব্য সেটা আরো অনুপ্রাণিত করবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাওয়ার সময়ই যে কথা বলে গিয়েছেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্রেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সভায় বেগম খালেদা জিয়া, যাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় এ অনৈতিক অবৈধ সরকার তাদের একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্যে, তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য, মিথ্যা মামলায় পাঁচ বছরে সাজা দিয়েছে। এ সভায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য অাহ্বান জানানো হয়েছে।

এ সভায় রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে এবং সারা দেশে এ অনৈতিক অবৈধ সরকার অত্যাচার নিপীড়নের যে স্টিম রোলার চালিয়েছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। নির্যাতন করেছে। তারাও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এবং অবিলম্বে কয়েক হাজার গ্রেফতার করা হয়েছে, প্রায় তিন হাজার। তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য এবং যে সমস্ত মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে।

বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, আপনারা সবাই জানেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বের তাদের মুক্তি দাবি করা হয়েছে।

ফখরুল জানান, সভায় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যিনি এখন লন্ডন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান সাহেব তার বক্তব্য টেলিফোনের মাধ্যমে জানিয়েছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য ফিরিয়ে আনার জন্যে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব দলের অংশগ্রহণে জন্য নিরপেক্ষ আন্দোলনের চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে নিশ্চয়ই শুনেছেন আমাদের আজকে ৫ জন সিনিয়র আইনজীবী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও অন্যান্য যারা ছিলেন তারা গিয়েছিলেন। তারা হলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান। তারা কারাগারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা শুনলে বিস্মিত হবেন, তাকে সম্পূর্ণ সলিটারি কনফারমেন্টে রাখা হয়েছে, এবানডেন্ট যে কেন্দ্রীয় কারাগার ছিল যেখানে কেউ বাস করে না এবং ঘর-বাড়ি স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে, সেই কারাগারে সম্পূর্ণ একা প্রিজনার হিসেবে রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, শুনলে আপনারা বিস্মিত হবেন, ব্যথিত হবে সমগ্র জাতি, তাকে এখন পর্যন্ত কোন ডিভিশন দেয়া হয়নি। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করেনি। তিনি তো ৭৩ বছরের একজন বয়স্ক মানুষ। তার যে সর্বক্ষণিক পরিচারিকা জেল কোডের মধ্যে রয়েছে সে সর্বক্ষণিক পরিচারিকাকেও তার সঙ্গে থাকতে দেয়া হয়নি। এ বিষয়গুলো আমরা মনে করি একেবারে অমানবিক।

ফখরুল বলেন, জেল কোডের মধ্যে খুব পরিষ্কার করে বলা আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী তাদের সঙ্গে কোনো অনুমতির দরকার নেই। অর্থাৎ জেল কোডেই বলা হচ্ছে তারা ডিভিশন পাবেন। তাকে এখন পর্যন্ত ডিভিশন দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে তাকে ডিভিশন দিয়ে তার যথাযথ যে মর্যাদার মতো সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় নিয়ম এবং জেল কোডকে ভঙ্গ করার জন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) আইনজীবীদের মাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেননি। আইনজীবী গিয়েছিলেন আইনগত বিষয় নিয়ে অালোচনা করার জন্য।