নুরুল কবির, বান্দরবান: 

বান্দরবানের লামা উপজেলার পৌর এলাকার কোলঘেঁষে প্রাচীন জনপদ মেরাখোলা গ্রাম। পৌর শহরের পুর্ব-উত্তরাংশে একটি পাহাড়ের পরেই মাতামুহুরী নদীর ওপারে গ্রামটি অবস্থিত। শহর থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে এর অবস্থান হলেও নদী পার হয়ে যাতায়তের ফলে গ্রামটি মনে হয় মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন অনেক দূরের একটি দ্বীপ। লামা বাজার থেকে মিশন ঘাট কিংবা রাজবাড়ি পয়েন্টে বর্ষায় নৌকা বা বাঁশের ভেলা, শুস্ক মৌসুমে হাটু বা কোমর পানি অথবা সমাজ পতিদের উদ্যাগে বাঁশের নতুবা তক্তার অস্থায়ীসেতু দিয়ে অতিক্রম করে দীর্ঘকাল থেকে যাতায়ত করে আসছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা। কয়েক বছর আগেও গ্রামবাসী নদীর ¯্রােতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনতে হতো।

সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোডের অর্থায়নে একটি নির্মাণাধীন সিসি গার্ডার ব্রীজ নদী পারাপারে স্থানীয়দের সেই কষ্ট আর পানির ¯্রেেতা স্বজন হারানোর বেদনা থেকে মুক্ত হবেন। ১৪০ মিটার ব্রিজের ৪টি স্পাম, ১২টি গার্ডারের কাজ সমাপ্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭০ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে। ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এই ব্রীজের নির্মাণ কাজের সুচনা করেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এর সফল সমাপ্তি হবে বলে সংশ্রিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন। মেজবা কনাষ্ট্রকশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে ৭কোটি ৮৪ লাখ টাকার এই ব্রীজটির নির্মাণ কাজ পায়।

মেরাখোলা গ্রামের বাাসন্দিা জামাল হোসেন, আরিফ উদ্দিন ফয়েজ উদ্দিন এবং চিংহলা মারমা জানান, লামা মাতামুহুরী নদী পয়েন্টে মেরাখোলা-রাজবাড়ি ব্রিজটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে মেরাখোলা-ছোটবমুসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি পাহাড়ী গ্রাম সহজেই সড়কপতের যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। ফলে দূর্গম গ্রামে উদপাদিত কৃষিপন্য বাজারজাত করণসহ বিদ্যালয়গামী ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়তে উম্মোচিত হবে এক নতুন দিগন্ত।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট সূত্র জানায়, দীর্ঘ চারদশক ধরে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন জনগোষ্ঠির নানামুখি উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৮কোটি টাকা ব্যয়ে লামা মাতামুহুরী নদীর রাজবাড়ি-মেরাখোলা পয়েন্টে ১৪০ মিটার সিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ব্রিজটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে লামা সদর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন কয়েকটি দুর্গম পাহাড়ী গ্রামের হাজারো পরিবারের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এলাকার শত শত কৃষি ও জুমিয়া পরিবার তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করাসহ যাতায়াতের ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া পাবে। পাশাপাশি উপজেলা সদরে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগ লাগব হবে।

স্থানীয়রা জানায়, এই ব্রিজের আশায় আমরা দীর্ঘ কাল পার করেছি। এপার ওপারে বসবাসকারী এলাকার পরিবারগুলো খাল পারাপারে বাঁেশর ভেলা বা নৌকার ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। বর্ষায় কতজন নৌকাডুবির শিকার হয়ে কিংবা সাতার কেটে পার হতে গিয়ে সলিল সমাধি হয়েছে; তার হিসাব নেই। এই ব্রিজটি ছিল আমাদের স্বপ্ন। আমাদের স্বপ্ন পূরণ করে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর দূর্গম এলাকার মানুষের হ্নদয়ের মনিকোঠা দখল করে নিয়েছেন। এই একটি ব্রিজ আমাদের এলাকার চেহারা পাল্টে দিতে চলেছে। এ ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়ায় উন্নয়ন বোর্ডকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন হলে এলাকার শত শত কৃষক পরিবারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেমন আধুনিক সুবিধা পাবে; একইভাবে, কৃষিজাত পণ্যসামগ্রী বাজারজাত করতে সহজতর হবে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্রিষ্ট প্রকৌশলীগনের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ব্রিজের প্রতিটি নির্মাণ পক্রিয়া সতর্কতার সাথে এগিয়ে চলছে।

এ বিষয়ে পাবত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিট নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আবদুল আজিজ জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ও উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যান এর নির্দেশনা মতে একদল দক্ষ প্রকৌশলী এ এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছেন। এছাড়া আমি নিজেও সার্বিকভাবে নিবিড় মনিটরিং করে আসছি।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, তার মধ্যে এই লামা-রাজবাড়ি সিসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মানের মেয়াদ জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত। এলাকার জনগণের কষ্টের কথা ভেবে পার্বত্য প্রতি মন্ত্রীর অঙ্গিকার অনুযায়ী-২০১৮ সালেই ব্রিজটি উদ্বোধন করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।