এইচ এম আবু ছিদ্দিক :

স্রষ্টার অনবদ্য সৃষ্টি সৌন্দর্য্যরে অন্যতম আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী শৈবাল দিঘীসহ সৈকতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতির শো-রুম। যা পর্যটকসহ স্থানীয়দের আনন্দ দিতে সব সময় প্রস্তুত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে যুগে যুগে বিদেশী পর্যটকেরা বাংলাদেশে এসেছে। সৃষ্টির অন্যতম আকর্ষণ বিশ্বসেরা দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে মুঘল স¤্রাট শাহ সুজা আরকানে যাওয়ার পথে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ক্যাম্প স্থাপনের আদেশ দিয়েছিলেন। অতীতের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিবেচনা করলে নিশ্চিত বলা যায়, প্রকৃতির টানেই ভ্রমণকারীরা ছুটে আসে কক্সবাজারে। অতএব, প্রাকৃতিক সম্পদ যতদিন সংরক্ষিত থাকবে, ততদিন দেশী-বিদেশী ভ্রমণ পিপাসুরা কক্সবাজার বেড়াতে আসবে। আমার পূর্বের কয়েকটি লেখায় কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। যার শিরোনাম ছিল, কক্সবাজার: পৃথিবীর ভিতরেই অভিনব পৃথিবী। প্রকৃতি ছাড়া প্রযুক্তি অন্ধ, পুঁজিবাদী বিশ্বে কক্সবাজারই ভরসা। সেসব প্রবন্ধে সমুদ্র সৈকতে অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। পাশাপাশি বিশ্বসেরা দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত এলাকাজুড়েই এক্সক্লুসিভ টুরিষ্ট জোনের পরিবর্তে, এক্সক্লুসিভ ন্যাচারাল টুরিষ্ট জোন ঘোষণা দেয়ার দাবিও করেছিলাম। কিন্তু ক্ষমতাসীন লোভী মানুষেরা কার কথা কে শোনে। অবৈধ টাকার পাহাড় ও ক্ষমতার জোরে এক শ্রেনীর সুবিধাবাদীরা সৈকতের মনোরম পরিবেশ ধ্বংস করে প্রাকৃতিক সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারাই ব্যস্ত। যখন যেইদল ক্ষমতায় আসে তাদের দলীয় সুবিধাভোগী কিছু নেতা-কর্মীরাই রাতারাতি হয়ে যায় এদেশের বুদ্ধিজীবি বা সবজান্তা। তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় আধিপত্য চলে সবখানে সব জায়গায়। তারা দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অরাজনৈতিক গুনীজন, বুদ্ধিজীবি ও সাধারণ মানুষকে কথা বলার কোন সুযোগেই দেয়না। যার ফলে শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলী, আইনজীবি থেকে শুরু করে কৃষক-শ্রমিক, দর্জি-মুচি ও খামারিসহ সর্বগত ঢুকে পড়েছে দলাদলি। সর্বত্র দলাদলির কারণে প্রকৃত সত্য উন্মোচন করা খুবই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। এদেশের জ্ঞানী-গুনীরা রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের মূল্যবান মতামত গুরুত্বসহকারে শোনার বা ধারণ করার মানসিকতার মানুষ খুবই নগণ্য। বিশেষ করে যারা বড় দলগুলোর সাথে জড়িত বা দেশ পরিচালনা করেন, তাদের বেলায় কল্পনা করাটাও অবান্তর। যা গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। তবে সব ক্ষেত্রে দলাদলি থাকলেও শহরবাসীর ফুসফুস হোটেল শৈবালের নিয়ন্ত্রণাধীন খালি জায়গাটুকু রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ একতাবদ্ধ হয়েছে। সবার দাবী একটাই, পর্যটকসহ স্থানীয়দের শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র শৈবালের সরকারি জায়গাটি যেন ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়া নাহয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ঐক্য থাকবে’তো? নাকি চকচকে বান্ডিল বা কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আলোচিত নেতারা পক্ষপাতশূন্য হয়ে কেটে পড়বে? কয়েকদিন আগে ওরিয়ন গ্রুপের সাইনবোর্ড সরানো হয়েছে। তবে পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে লীজ বাতিলের প্রকাশ্যে ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত শহরবাসী আশ্বস্ত হতে পারছেনা। আবার অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেইতো সংশয় কেটে যায়। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে হোটেল-মোটেল জোনের নামে প্রভাবশালীরা সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারা করেছিল। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তৎকালিন লীজের খালি প্লটগুলো বাতিল করে দেয়। কিন্তু তাতে কি প্রাকৃতিক অমূল্য সম্পদ রক্ষা পেয়েছে? বরং একধাপ এগিয়ে ক্রমাগত দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সৈকত আবাসিক এলাকায় বেশ কিছু খালি জায়গা ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সবগুলোতে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। সেখানে পর্যাপ্ত বাচ্চাদের খেলার মাঠ, স্কুল ও জামে মসজিদ নেই বললেই চলে। প্রকৃতির আরেক শো-রুম গালফ্ মাঠে শেখ কামাল স্টেডিয়াম বানিয়েছে। ছোট্ট একটি পর্যটন শহরে প্রায় চার’শ মতো হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউজ গড়ে উঠেছে। এসব হোটেলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের চাহিদা পূরণে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যা ভ্রমণকারীদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার পরও (বিশেষ কিছু দিন ছাড়া) বেশীরভাগ কক্ষ সারাবছরেই খালি থাকে। এখন পর্যটন কর্পোরেশনের অধীনে হোটেল শৈবালের নিয়ন্ত্রণাধীন সামান্য খালি জায়গাটুকু ছাড়া শহরে কোথাও নিঃশ্বাস নেয়ার পরিবেশ নেই বললেই চলে। এই সামান্য জায়গাটিও যদি সংরক্ষণ করা নাহয়। অদূর ভবিষ্যতে শহরবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র নালিটিও বন্ধ হয়ে যাবে। আগামী প্রজন্মের জন্য পর্যটন শহর উম্মুক্ত কারাগারে পরিণত হবে। শুধু ওরিয়ন গ্রুপ কেন, যে কাউকে ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়াটাই হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। শহরবাসীর সন্তানসহ পরবর্তী প্রজন্ম যেন, চার দেয়ালের ভিতরে থাকতে থাকতে মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে না পড়ে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রেখে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে পরিবেশবান্ধব, বাসযোগ্য ও পর্যটনবান্ধব শহর গড়ে তুলা অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য, স্থানীয়দের মতামতকে অগ্রধিকার দেয়া, পর্যটকদের যাতায়ত সুবিধা, থাকা-খাওয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রশস্ত সড়ক-উপসড়কসহ যানজটমুক্ত রাখা, পর্যাপ্ত পয়নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা, পর্যটন শহরে অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ না করে শহরের পরিধি বৃদ্ধি করা, সৈকতের আশেপাশের সরকারি জায়গাসহ প্রকৃতি সংরক্ষণ করা, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা, খোলা-মেলা জায়গাসহ খেলার মাঠ, পর্যাপ্ত মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদি। এসব কাজ বাস্তবায়নে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী কার্যকর প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর মহাপরিকল্পনা বা মাষ্টার প্লান প্রস্তুত করেছে। তাদের সেই নিখুঁত মাষ্টার প্লানের ভিডিও ফুটেজ সদ্য সমাপ্ত উন্নয়ন মেলায় দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে। কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তর্ক-বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে পর্যটন শহরের অধিকাংশ মানুষ তাদের কর্মকুশল দেখে আশায় বুক বেঁধেছিল। শহরবাসীর প্রত্যাশা, কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি আধুনিক সুপরিকল্পিত বাসযোগ্য ও যানজটমুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পর্যটন নগরী গড়ে উঠবে। কিন্তু পর্যটন করপোরেশনের চেয়াম্যান ও ওরিয়ন গ্রুপের বিতর্কিত কর্মকান্ডে শহরবাসী হতাশ্বাস হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৬, পাশ হওয়ার পর সরকারি বা বেসরকারি সব জায়গা অবকাটামো নির্মাণসহ যাবতীয় কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অথচ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে উপেক্ষা করে মহাপরিকল্পনার আওতাভুক্ত শৈবালের ১৩৫ একর জায়গা বিক্রি বা ভাড়ার বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। সুতরাং- উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নিজেদের দায়িত্বজ্ঞান থেকেই সচেতন হয়ে আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, শৈবালের মূল্যবান সম্পদ এমনভাবে গোপনে লুটপাটের প্রক্রিয়া চালিয়েছে। সাধারণ মানুষতো দূরের কথা, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরাও প্রথমে টের পাইনি। আরও স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে, শৈবাল ইস্যুতে ঢাকায় বৈঠককালে ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবাইদুল কাদের বলেছেন। জায়গার পরিমাণ কম হলে দুবাইয়ের কোম্পানি বিনিয়োগ করবেনা। তার এরকম বক্তব্যই প্রমাণ করে তিনি মধ্যসত্তভোগী অনেকের একজন। মূলত: বিদেশী কোম্পানিকে শৈবালের মূল্যবান সম্পদ দেখিয়ে টাকার বস্তা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনায় ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এসব রাঘববোয়ালেরা উন্নয়নের অজুহাতে শহরবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাসের খালি জায়গাটিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। পাল্টে যাবে সৈকতের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য। বিশেষ করে শহরবাসীর আমও যাবে ছালাও যাবে। পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে হলে কক্সবাজার শহরের মানুষ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ করে প্রকৃতির শোরুম নষ্ট করলে অদূর ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে শহরকেন্দ্রিক উন্নয়নের মনোভাব পরিহার করে পর্যটন শিল্পের পরিধি বাড়াতে হবে। পর্যটন শহরের বেশীরভাগ মানুষের অভিমত, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান একজন অত্যন্ত যোগ্য, সৎ ও আদর্শবান পরিশ্রমী মানুষ। পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে বাসযোগ্য ও পর্যটনবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে তার বিকল্প নেই। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনে বলা হয়েছে, (অনুচ্ছেদ ২৪) অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকার মধ্যে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত কোন ইমারত নির্মাণ, পুকুর বা জলাধার খনন, বালি উত্তোলন কিংবা পাহাড়কাটা যাইবে না। এ ধারা থেকেই স্পষ্ট বলা যায়, পর্যটন শহরে কিছু একটা করতে হলে, হয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নতুবা রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা। এছাড়া বিকল্প পথ খোলা আছে কিনা আমার জানা নেই। ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, এমপিসহ অধিকাংশ নেতারাই শৈবাল ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কি সিদ্ধান্ত দেবেন আগাম বলা মুশকিল। তবে আমার মতে, শহরের ঐতিহ্যবাহী শৈবালের মূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণ ইস্যুটি স্থানীয় জনগণের মতামতকে প্রধান্য দেয়া সমীচীন হবে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু জনগণের জন্য কাজ করেন, আশাকরি তাই করবেন। এছাড়া কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করা একান্তই জরুরী। তাদের মতামতকে প্রাধান্য দিলে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আরও বেগবান হবে, এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করার অনুপ্রেরণা ও সাহস পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দৃষ্টান্তটি সূচনা করলেই ভবিষ্যতে ইতিহাস রচিত হবে। স্থানীয় সরকার বা কর্তৃপক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ও সক্ষমতা বাড়াতে এই কাজটি কাউকে না কাউকে শুরু করতেই হবে। অন্যথায় করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যানের মতো ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের সম্পদ লুটেপুটে খাবে। জাতীয় স্বার্থে যখন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। এখন সরকারের উচিত হবে, কেউ যাতে প্রতিষ্ঠানটির উপর খবরদারি বা প্রভাব বিস্তারের দুঃসাহস দেখাতে না পারে। কর্তৃপক্ষকে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। যাতে করে পর্যটন শহরের নিখুঁত মাষ্টার প্লান বাস্তবায়নে কোন ধরণের ব্যাঘাত সৃষ্টি নাহয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি চার লেনে রুপান্তর করা একান্তই অপরিহার্য। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীকে জনসভায় প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। তাছাড়া কক্সবাজার রেল লাইন উদ্বোধনের দীর্ঘ ৯বছর অতিবাহিত হলেও এখনো জায়গা বেচা-কেনা শেষ হয়নি, এই দীর্ঘ কালক্ষেপণ করা পর্যটন শহরের বেলায় অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রকল্পের বাজেট বাড়তে বাড়তে সাধারণ মানুষের হিসাবের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রিয় পাঠক, পর্যটন শিল্পের স্বার্থে আমার প্রবাস জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেই লেখাটি শেষ করব। বেশ কয়েকবার বিদেশের মাটিতে সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেখানে যাতায়ত ব্যবস্থা খুবই সুন্দর ও সহজ। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য মানব তৈরী আকর্ষণীয় বিভিন্ন কারুকার্য ও বহুতল ভবন গড়ে তুলেছে। সেগুলো দেখতে প্রথম ২/১ বার ভাল লাগলেও তৃতীয়বার আকর্ষণীয় মনে হয়না। কিন্তু কক্সবাজারের প্রাকৃতিক দৃশ্য যতই দেখি, ততই নিজেকে উৎফুল্ল ও সতেজ মনে হয়। বারবার দেখা সত্ত্বেও আবার দেখতে ইচ্ছে করে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। অন্যান্য দেশে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলা পর্যটন শিল্পের তুলনায় কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে গুরুত্ব অনেক বেশী। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে কিছুনা কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক দেশের রাষ্ট্র নায়কেরা সঠিক পরিকল্পনার অভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের সুফল ভোগ করতে পারেনা। তবে অনেক দেশ ইতিমধ্যেই প্রাকৃতিক সম্পদকে পুঁজি করে সফলতা অর্জন করেছে। কক্সবাজারে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রচার-প্রচারণার অভাবে পর্যটন শিল্পের প্রত্যাশিত সুফল আমরা পাইনি। আমার জানা মতে বিদেশী পর্যটকদের কাছে বহুতল ভবনের চেয়ে উম্মুক্ত ন্যাচারাল জোনের গুরুত্ব অনেক বেশী। সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, আগামীতে যতগুলো আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার হবে। সবগুলো যেন সৈকতের মনোরম পরিবেশে অস্থায়ী শামিয়ানা নির্মাণ করে আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে করে সারা বিশ্বের মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারে।

লেখক: কলামিস্ট ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, দৈনিক কক্সবাজার বাণী

মোবাইল- ০১৫৫৮৩৬৩৩৪৩,