এম. বশির উল্লাহ, মহেশখালী:
মহেশখালীতে সরকারের উন্নয়ন কাজের স্বর্ণ দুয়ার মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হলেও চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী ১৪ শত ১৪ একর জমির উপর কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আনুষ্টানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাধ নির্মানের ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাধের ৬টি স্লুইচ গেইট পানি নিঃস্কাশনের পথ বন্ধ রয়েছে। ফলে ১৪ শত একর জমিতে স্থাপিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উত্তর পার্শ্বে ব্যাঙ ঘোনা, মইন্যার ঘোনা, রাঙ্গাখালী ঘোনা ও বাইন্যার ছড়া নামক চিংড়ি প্রজেক্টে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির অভাবে লবণ চাষ করা যাচ্ছে না।একই সাথে বর্ষা মৌসুমের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রায় এক হাজার একর জমিতে ধান চাষ করাও অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ৬টি বেড়িবাধ বন্ধ করে দিয়ে কয়লা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ স্থায়ী বাধ নির্মান করে কোন ধরনের পানির নিস্কাশনের পথ না রাখায় একদিকে লবণ ও চিংড়ী চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ অপরদিকে ধান চাষী কৃষক,শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীরা প্রচুর ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
১৪শত একর জমির মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপনা তৈরি হলেও এ জমিতে কয়লা বিদ্যুৎ হওয়ার আগে নিয়োজিত শ্রমিক, চাষী, ব্যবসায়ী সহ কোন শ্রমিক এই পর্যন্ত ক্ষতিপূরন পায়নি। ১৪ শত একর কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিপূরণের ৮০ভাগ টাকা পরিশোধ করা হলেও ভূমি মালিকদের ২০% ক্ষতি এখনো পরিশোধিত হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ক্ষতিগ্রস্ত ২১ ক্যটাগরী/ শ্রেণীর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও নাম মাত্র জরিপ হয়েছে চাষি, বর্গা চাষি ও শ্রমিক সহ ৩ শ্রেণীর।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১৪ সাল থেকে কয়লা বিদ্যুতের স্থায়ী বাঁধ নির্মানের ফলে সমগ্র মাতারবাড়ী ইউনিয়নে প্রতি বছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।গত বছর বর্ষায় সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতার পানি নিছু জায়গায় এখনো জমে রয়েছে। সংশ্ণিষ্ট কতৃপক্ষ যদি দ্রুত পানি নিস্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তা হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে মাতারবাড়ীর জনবসতি বসবাসের অনুপযোগি হয়ে জলাবদ্ধতার মুখে পড়বে।
ব্যাঙ ঘোনার সাথে আরো ৪টি চিংড়ী প্রজেক্টের আওতায় দুই হাজার একর লবণ মাঠের উপযুক্ত জমি পানির অভাবে কাধা মাটি ফেটে চৌচির হয়েছে।
 লবণ চাষ থেকে বঞ্চিত হওয়া জমির মালিক, চাষা, শ্রমিক, ব্যবসায়ী সকলে বেকার ও কর্মহীন জীবনযাপন করছে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ চাষী ও ব্যবসায়ী দোস্ত মোহাম্মদ বলেন, লবন চাষ না হওয়ায় শুধু জমির মালিক ক্ষতি হয়নি আমরা যার প্রতি কানি ৪০/৪৫ হাজার টাকায় বর্গা নিয়েছি তাদের সাথে লবণ মাঠের সাথে সংশ্লিষ্ট লবণ মাপার কয়াল, আলকদার,লবণ বোট মালিক ব্যবসায়ি , শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। কোল্ড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পনী লি:এর পক্ষে কোন প্রকার ক্ষতি পূরণ না দেওয়ার অভিযোগ তুলেন শ্রমিকরা।
কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কোলপাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী লি: এমডি আবুল কাশেম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,এক সাথে ২টি দাবী আদায় করা যায়না। বিগত বষার মৌসূমে এলাকার জনগনের দাবীর মুখে রাঙ্গাখালী সহ ঐ এলাকার স্লুইচ গেইট গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঐ স্লুইচ গেইট গুলি বন্ধ করতে ব্যায় হয়েছে ৫ কোট টাকা।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহামবমদ উল্লাহ জানান, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের কারনে জমির মালিক,চাষা সহ লবণ ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্লুইচ গেইট গুলি দিয়ে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে।আগামী বর্ষায় মাতারবাড়ীর নিচু এলাকার জনবসতি জলাবদ্বতায় পানির নীচে থাকবে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ জেলে ও জলাবদ্বতা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ককসবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ছবুর খান বলেন, স্লুইচ গেইট স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যর মাধ্যমে কোল্ড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর লিমিটেড এর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা আর্থিক সহায়তা করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কারিগরি সহায়তায় পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। -মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাধ নির্মানের বেড়িবাধের ৬টি স্লুইচ গেইট পানি নিঃস্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় প্রায় ২ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে না। ফেটে চৌছির লবণ চাষ না হওয়া এলাকা।