ডেস্ক নিউজ:

দলের নেতাকর্মীরা ‘ভালো হোক আর মন্দ হোক’ সবাইকে নিয়ে পথচলার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নেগেটিভ রিপোর্ট থাকলেও তাকে দল থেকে বাদ দেয়া নয় বরং তাকে কিভাবে দলে কাজে লাগানো যায় সে কৌশল গ্রহণ করছে ক্ষমতাসীন দলটি।

‘আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাই মিলে যাতে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারেন সেজন্য এ কৌশল’ বলে দলের একাধিক নেতা জাগো নিউজকে জানিয়েছেন। দলীয় পদ-পদবি নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে নগর, মহানগর, জেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডপর্যায়ে কোন্দল রয়েছে। কোন্দল নিরসনে ইতোপূর্বে একাধিকবার সাংগঠনিক সফর করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকা থেকে চলে এলে ফের সেখানে প্রকাশ্যে কোন্দলে লিপ্ত হন নেতাকর্মীরা।

সম্প্রতি সাংগঠনিক সফরের জন্য আওয়ামী লীগের ১৫টি টিম গঠিত হয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে তারা কাজ শুরু করেছেন।

গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ছয়টি টিম মানিকগঞ্জ, বগুড়া, নড়াইল, ফেনী, নাটোর, পটুয়াখালী ও বান্দারবান জেলা সফর করেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলে প্রতিটি কমিটি নিয়ে এবং কমিটির নেতাদের আচার-আচরণ নিয়ে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার সংঘাতও হয়েছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর বলে কারো বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা। ভর্ৎসনা, অসন্তোষ প্রকাশ আর উপদেশ দেয়ার মাধ্যমে আপস-মীমাংসার ওপর জোর দিয়ে বিভিন্ন স্থানে দলীয় কোন্দল নিরসন হচ্ছে।

সম্প্রতি দলটির কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদক নিয়োগ, নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত, ঢাকার দুই মহানগর কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়েছে। সহসম্পাদক বঞ্চিতদের ক্ষোভের মুখে সহসম্পাদক নিয়োগ স্থগিত এবং নারায়ণগঞ্জে সংঘাত নিরসনে দলের সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে জটিলতা নিরসনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানকে। সব ঘটনায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে তারা জানান, ভালো হোক আর মন্দ হোক, দলীয় নেতাকর্মীরা সবাই দলকে ভালো বাসেন। সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের সময় ভালো-মন্দ সবাইকে দরকার। তাই সবাইকে নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে চলতে হবে। কর্মীদের কোন্দলে দল যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেভাবে চলতে হবে। তারা বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে কোন্দল মেটানো এসব সফরের অন্যতম লক্ষ্য।

সারাদেশে দলের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকেজন নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে আওয়ামী লীগের এসব নেতা জানান, আওয়ামী লীগ টানা নয় বছর ক্ষমতায়। এ সময়ে পাওয়া না পাওয়ার ঘটনা থেকে ক্ষোভ ও দ্বন্দ্বের জন্ম হয়েছে। পদ-পদবি, আধিপত্য বিস্তারের জন্য দলে তৃণমূলপর্যায়ে দ্বন্দ্ব চলছে। তবে নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে যেকোনো ভাবে এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের নিরসন হবে। যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক, দলের জন্য যারা দীর্ঘদিন ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধের কাজ চলছে।

ঢাকা মহানগরে দ্বন্দ্ব

২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। একই দিন ৪৯টি থানা ও ১০৩টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষিত হয়।

এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখায় দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। একটি পক্ষ প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের ছেলে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে ঘিরে, অপরটি কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে ঘিরে তৈরি হয়। গত বছরের অক্টোবরে মগবাজার উড়ালসড়ক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাতাহাতিতে জড়ান দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। ১ নভেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বর্ধিত সভায় দুই পক্ষ আবারো মুখোমুখি হয়। ১৬ নভেম্বর দুই পক্ষের সংঘাতে আজিমপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ময়লার স্তূপ ফেলে দলের যৌথ সভা পণ্ড করে দেয়া হয়।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে নগরের ফুটপাত, চাঁদাবাজি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দরপত্র নিয়ন্ত্রণসহ আধিপত্য বিস্তার। গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মহানগর সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। একদল ওয়ার্ড নেতা গণভবনে গিয়ে অভিযোগ দিলে কমিটি স্থগিত করেন দলীয় প্রধান। এর আগেও একবার কমিটি ঘোষণার উদ্যোগ নেয় মহানগর নেতৃত্ব। সেবারও গণভবনে গিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ দেয়ার পর তা আটকে যায়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান জাগো নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় একটি দল। এখানে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা আছে। যে কারণে কেউ পদ না পেলে তারও মন খারাপ হয়। এ কারণে কিছু দ্বন্দ্ব-মনোমালিন্য আছে। তিনি বলেন, পরিবারের মধ্যেও সমস্যা হয়। আওয়ামী লীগ একটা বড় পরিবার, মাঝেমধ্যে কিছু ভুল-বোঝাবুঝি হয়।

‘যেখানে সাংগঠনিক সমস্যা, সেখানে সাংগঠনিক সমাধান দেয়া হচ্ছে। অনেক স্থানে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নেতাকর্মীদের শান্ত করা হচ্ছে। আশা করছি নির্বাচনের আগে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করবে’- যোগ করেন তিনি।