ডেস্ক নিউজ:
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৩২ ধারা নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এটা অহেতুক ভীতি।’ মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।

গতকাল সোমবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্তির বিধান রেখে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

তবে নতুন আইনের ৩২ ধারা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো গোপনীয় বা অতি-গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ধারণ, সংরক্ষণ ও প্রেরণ করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে সেটা হবে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ। এর শাস্তি হলো সর্বোচ্চ ১৪ বছর জেল বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।

অনেকে মনে করছেন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা হবে ধারাটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গুপ্তচরবৃত্তি একটি অপরাধ, গুপ্তচরবৃত্তি তো আগের আইনে অপরাধ ছিল। এ আইনের মধ্যে যেটা করেছি সেটা হচ্ছে, ওই যে কম্পিউটার সিস্টেম, ইনফরমেশন টেকনোলজির যে সিস্টেম ওই সিস্টেমের মাধ্যমে যদি কেউ গুপ্তচরবৃত্তি করে সেটা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সঙ্গে সাংবাদিকতার কোনো সম্পর্ক আছে বলে তো আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় এটা অহেতুক ভীতি। সমালোচনার ক্ষেত্রে সমালোচনা করা হচ্ছে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আমি আরেকবার অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের নেত্রী। জনগণ মানে সাংবাদিকতা। তিনি অহেতুক ও অযথা কেউ হয়রানি হোক সেটা চান না। তাই কোনো আইনের মধ্যে এমন ব্যবস্থা থাক সেটা তিনি চান না। সেই কারণে স্পষ্ট করে এ ধারাগুলো দেয়া হয়েছে। যাতে অস্পষ্টতা দূর হয়।’

তিনি বলেন, ‘এখন এখানে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) যেভাবে অপরাধের ধারাগুলো সংজ্ঞায়িত হয়েছে এবং অপরাধটা কী সেটা পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে তাতে আপনাদের (সাংবাদিক) বাক-স্বাধীনতা একটু হলেও ক্ষুণ্ন করা হয়নি।’

‘আপনাদের সম্প্রচার আইনও আসছে, সেটা যখন আসবে, তখন আপনাদের কাছে পরিষ্কার হবে যে, আপনাদের অহেতুক কেউ হয়রানি করতে পারবে না। যেভাবে ইনবিল্ট আমরা যে প্রসিডিউরগুলো (তদন্ত পদ্ধতি) দিয়েছি, প্রসিডিউরগুলোতে যে স্পিনিং পদ্ধতি আছে তাতে সেখানে সাংবাদিকদের কেন, আনটিল অ্যান্ড আনলেস সংজ্ঞায়িত অপরাধগুলো সে যদি না করে তবে তাকে কোনো মতেই এ আইনের আওতায় অপরাধী হিসেবে আনা যাবে না।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘৩২ ধারা নেই তারপরও সরকারের গোপনীয় ও অতি-গোপনীয় কিছু আপনারা প্রকাশ করতে পারেন। এটা অফেন্স (অপরাধ)। আপনি যদি ইলিগ্যাল (অবৈধ) জিনিস ছাপিয়ে দেন, কেউ চুরি করছে সেটা অপরাধ হতে পারে না! কোন বইতে নেই সেটা অপরাধ! কম্পিউটারের মধ্যে যদি থাকে সেটা যদি ইলিগ্যাল হয় আর আপনি যদি প্রকাশ করেন সেটা অপরাধ হতে পারে না।’

আইনটি চলতি সংসদ অধিবেশনে উঠবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা যে মন্ত্রণালয়ের আইন সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলতে পারবেন। তবে আমি তার পক্ষ থেকে এটুকু বলতে পারি, তিনি আমাকে বলেছিলেন এ সংসদেই উঠানোর ইচ্ছা তার।’

৫৭ ধারা কিছুটা হলেও বাক-স্বাধীনতা হরণ

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপরাধগুলো পড়লে মনে হয় পৃথিবীর যত অপরাধ সব একটার মধ্যে আনা হয়েছে। অস্পষ্টতা যেটা ছিল সেটার কথা বলছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার সময় আমরা আশ্বাস দিয়েছিলাম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হবে। আজ আমরা সেই কথা রেখেছি। সংবাদিকদের যে ভীতি ও শঙ্কা ছিল তা আমরা দূর করেছি।’

তিনি বলেন, ‘৫৭ ধারায় যে কথাগুলো ছিল এটা জগাখিচুড়ি করার আগে সেটা আমার যদি আলাদা আলাদাভাবে পড়ি তবে প্রত্যেকটা আমাদের দণ্ডবিধিতে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা আছে। এখন যদি কম্পিউটার বা যান্ত্রিকভাবে অপরাধ করা হয় সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে নতুন আইনে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘৫৭ ধারায় কিছু না করলেও আমি যদি পুলিশ হই, ইচ্ছা করলে আটকে দিতে পারতো। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও বাক-স্বাধীনতা হরণের উপায় ছিল। এখানে (নতুন আইনে) স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। নতুন আইনে বাক-স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা করা হয়নি, এ আইনে বাক-স্বাধীনতা কারো হরণ হয়নি।’