ছৈয়দ আলম, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে :
দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপের একমাত্র জেটির বেহাল দশা হওয়ায় জাহাজ থেকে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা উঠানামা করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন এই জেটির সংস্কার ও উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেই বললে চলে। প্রতিদিন ৭-৮টি জাহাজে প্রায় ১০ হাজারের বেশি পর্যটক যাচ্ছে সেন্টমার্টিনে। পর্যটকদের পাশাপাশি সেন্টমার্টিনে স্থানীয়দের উঠানামার ও চলাচলের একমাত্র জেটি। নেই কোন বিকল্প জেটি। অযত্ন, অবহেলার শিকার সেন্টমার্টিনের এই জেটিটি। জেটির ভয়াবহ ভাঙ্গন ধরেছে। ফলে এ পর্যটন মৌসুমেই ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে দ্বীপবাসী ও পর্যটকরা চরম ভোগান্তির শিকার হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে দ্বীপবাসীর মাঝে দু:শ্চিন্তার শেষ নেয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, সেন্টমার্টিন জেটির পার্কিংয়ে ভয়াবহ ভাঙ্গন ও বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরায় দীর্ঘদিন ধরে কোন নৌ-যান ভীড়াতে পাড়ছেনা। তবে বর্তমানে ভাঙ্গন আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। পর্যটক ও সাধারণ মানুষ আতংকে জেটির উপর বেশিক্ষন থাকেনা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেন্টমাটিন দ্বীপবাসীর জীবিকা নির্বাহের প্রধান পেশা হয়ে দাঁড়ায় ট্যুরিজম ব্যবসা। পর্যটক আসলে ছোট ছোট দোকান দিয়ে ডাব, চা, পানসহ ইত্যাদি জিনিসপত্র বিক্রি করে টাকা আয় করে। এ পর্যটন ব্যবসার আয় নিয়ে পুরো বছর জীবন পার করতে হয়। সেখানে পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই গুরুত্বপূর্ন এ জেটি সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে অনেক আকুতি-মিনতি করেছিল দ্বীপবাসী। কিন্তু কে শুনে কার কথা। সুত্র জানায়, বিগত ২০০৪ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একমাত্র জেটি দীর্ঘদিন ধরে সমাস্যায় জর্জরিত। গেল কোমেন ও মোরা’র আঘাতে জেটির ভয়াবহ ভাঙ্গন ও তীব্র ফাটল ধরে। ২০০৬ সালের ১৫ জুন সেন্টমার্টিন জেটির যাত্রা শুরু হয়। প্রতি সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে পর্যটক সেন্টমার্টিনে আসলেও চলতি বছরের চিত্র ভিন্ন। মিয়ানমারের সহিংসতা হওয়ায় প্রশাসন দীর্ঘ দেড়মাস পর জাহাজ আসার অনুমতি দেয়। সেই কারনে দ্বীপবাসীর ব্যবসা পিছিয়ে পড়ে। বর্তমানে পর্যটকর আসলেও জেটির অবস্থা দেখে অনেকেই হতাশা হয়ে সামনে সেন্টমার্টিন না আসার সিদ্ধান্তে বিভুর হয়ে চলে যাচ্ছে। আরো দেখা গেছে, জেটির পার্কিং গাইড ভিমের ভাঙ্গনে জাহাজ আসতে না পেরে কোটি কোটি টাকার আয় আটকে গেছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে পর্যটক ব্যবসা। সেন্টমার্টিন জেটির পুর্ব পাশে পার্কিং গাইড ভিম, রেলিং ও পিলার সাগরে পড়ে গেছে, হেলে পড়া ভিম ও পিলারের কারনে জোয়ারের সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে এবং জেটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ও রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে। বিগত বছরের পর্যটক মৌসুমে প্রবল ঢেউ, বাতাসে পর্যটকবাহী জাহাজের ধাক্কায় ও জেটির পার্কিংয়ে কিছুটা ফাটল দেখা দেয়। সেই সংস্কারও করা হয়নি। আবার কোমেন ও ঘুর্নিঝড় মোরার আঘাতে এবং সাগরে প্রবল ঢেউয়ে জেটির পুর্ব পাশের পার্কিং স¤পুর্ন বিলীন হয়ে সাগরে ডুবে গেছে। ফলে পর্যটকবাহী জাহাজ ও সার্ভিস বোট ভীড়তে না পেরে বিকল্প পদ্বতি দিয়ে যাত্রী উঠা নামা করছে। জানা গেছে, সেন্টমার্টিনদ্বীপে ছোট-বড় ১৫০ টি আবাসিক হোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্ট, ২শ দোকান, প্রায় ২০০টি ভ্যান ও রিক্সা, ২৬ টি সার্ভিস বোট, দ্বীপের ১০ হাজার মানুষসহ সকলের পরিবার পর্ষটক মৌসুমে আয় করার জন্য অপেক্ষামান থাকে। তারা দ্বীপে কখন পর্ষটক আসবে সে অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু সব কিছু ভাঙ্গা জেটির কারনে সব ম্লান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা জয়নুল আবেদীন ক্ষোভের সাথে বলেন, এখানে কিসের উন্নয়ন কিসের সরকার কেউ এগিয়ে আসেনা। সবাই আশ^াস দেয় কাজের কাজ কেউ করেনা। দ্বীপের একমাত্র জেটির ভয়াবহ অবস্থা। নাই সংস্কার নাই উন্নয়ন। এভাবে হলে কিভাবে পর্যটক আসবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেন্টমাটিন সার্ভিস বোট মালিক সমবায় সমিতির এক নেতা জানান, জেটির পার্কিং ভাঙ্গনে সার্ভিস বোট ভীড়তে না পেরে বিকল্প ব্যবস্থায় যাত্রী উঠানামা করতে হচ্ছে। দ্রুত জেটি সংস্কার করে কষ্ট লাগবে ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি। দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি শাহিন-তানিয়া আক্ষেপ করে বলেন, এরকম হলে আর কখনো আসবনা। জাহাজে আসতে কত সুন্দর কিন্তু জেটিতে আসার পর দেখি পানিতে পড়ে যাব। সেক্ষেত্রে মহিলারা চরম ভয়ে থাকে। জাহাজ থেকে নামতে নির্দিষ্ট সময়ের গন্ডি পেরিয়ে যেতে হচ্ছে।
স্থানীয় মেম্বার হাবিবুর রহমান প্রকাশ হাবিব মেম্বার সিবিএনকে জানান, পর্যটক মৌসুমই দ্বীপবাসীর ইনকামের নির্ভরযোগ্য একমাত্র সুযোগ। সেই সুযোগে জেটির ভাঙ্গন ইনকামের সুযোগ বাধাগ্রস্থ করছে বারবার। মৌসুমের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও পত্র-পত্রিকায় অনেক রিপোর্ট করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছ্ইু হচ্ছেনা। জেটির সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে দ্বীপবাসীসহ সংশ্লিষ্টদের লোকসান গুনতে হবে।
কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের টেকনাফ ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম জানান, সেন্টমার্টিনে জেটির ভাঙ্গনের বিষয়টি পর্যটকদের বুঝাতে পারছিনা। তাদের একাধিক অভিযোগ জেটি সংস্কারের জন্য। অনেক পর্যটক এজন্য আসছে না। জেটি থেকে পর্যটকদের উঠানামা করতে আলাদা একটা সময় নষ্ট হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয়দের। তাই জেটির দ্রুত সংস্কার করে পর্যটকবাহী জাহাজ ভীড়ার উপযুক্ত করে দিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
সেন্টমাটিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যন নুর আহমদ জানান, আমরা এখন চরম হুমকির মধ্যে আছি। আমাদের দ্বীপকে বাচাঁতে হবে আগে। চারিদিকে বেরিবাঁধ দিতে হবে। অপরদিকে জেটি ভাঙ্গনের ব্যাপারে উদ্যোগ না নিলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দ্বীপবাসী। তাই সকলের সু-নজর কামনা করছি। জেটির ভাঙ্গনের কারনে পর্যটকরা বারংবার নাখোশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। জেটির অবস্থা দেখে পর্যটকরা অনেকটা বিমূখ হয়ে যাবে সেন্টমার্টিন থেকে। আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেকবার আবেদন করেছি কিন্তু কোন সাড়া পাচ্ছিনা। এভাবে হলে আমরা দ্বীপে বসবাস করতে পারবনা।