আব্দুর রশিদ, বাইশারী:

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের লংগেদু খালের মুখ হইতে অপহৃত ৪ ব্যক্তিকে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যারা উদ্ধারের জন্য গত ৭ দিন যাবত পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আসছিল। অবশেষে পুলিশের ও বিজিবির যৌথ অভিযানে অপহৃত ৪ ব্যক্তিকে উদ্ধারের পাশাপাশি গহীন জংগল থেকে ৬ উপজাতী ও বান্দরবান সদর এলাকা হইতে ২ বাঙ্গালী সহ মোট ৮ জন সন্ত্রাসী এ ঘটনায় আইন শৃঙখলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পুলিশ বাইশারী ও রামুর আরো ২ ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বলে সুত্র দাবি করছে। জানাযায়, তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরো কয়েক অপহরনকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

জেলার নাইক্ষ্যংছডির গহীন পাহাড়ে ঘেরাও দোছড়ি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের লংগদু খালের আগা হইতে গত ২০ জানুয়ারী শনিবার ভোর রাত ৪ টার দিকে ৪ তামাক চাষীদেরকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে অপহরনের পর গহীন জংগলে নিয়ে যায়। এখবর প্রকাশ হলে তাদের উদ্ধারের জন্য বাইশারী তদন্ত কেন্দ্র ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসছিল। গত ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে অপহৃতদের উদ্ধারে বিজিবি ও সেনা সদস্য সহ পুলিশ এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এ অভিযানে পুলিশের চৌকস ও আলোচিত কর্মকর্তা এস আই আবু মুসা পুলিশ দলের পক্ষে ও বিজিবি দলের পক্ষে জেসিও বাকিবিল্লাহ নেতৃত্বে দেন। অপহরনকারীদের আটকের উদ্দেশ্যে এবং অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের এত আন্তরিক ও জোরালো প্রচেষ্টা এইবারই প্রথম বলে দাবি করেন স্থানীয় এলাকাবাসি।

জানা যায়, শুক্রবার বিকাল ২টায় বিজিবির সদস্যরা সম্ভাব্য স্থানে অভিযান পরিচালনার জন্য গহীন পাহাড়ে ঢুকে পড়েন। অপরদিকে বাইশারী ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের দুইটি টহল দল পাহাড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এদিকে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আলী হোসেনের প্রযুক্তিগত তথ্য উপাত্ত নির্ভর সংবাদে বিকাশে টাকা উত্তোলনের সময় রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের কুখ্যাত সন্ত্রাসী নুরুল আলম প্রকাশ সোনা মিয়া ডাকাত তার সহযোগী মোতাহের সহ সেনা গোয়েন্দাদের হাতে আটক হয় এবং এস আই আবু মুসার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কক্সবাজার ও গর্জনিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো সন্দেহভাজন ২ ব্যক্তিকে আটকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আটককৃতদের নাম প্রকাশে আপাতত অনিচ্ছুক হলেও প্রশাসনের এরকম ত্রিমুখী অভিযান ও উদ্ধার তৎপরতা চলাকালীন বিজিবি সদস্যদের হাতে দোছড়ি এলাকার গহীন জংগলে ঘটনাস্থলের পাশ হইতে সন্দেহভাজন ৬ জন ত্রিপুরা আটক করা হয়। এছাড়া বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই আবু মুসার নেতৃত্বে পুলিশের আরেকটি দল সন্ধ্যার পর হইতে বাইশারীর গহীন পাহাড়ে অভিযান চালায়। অভিযানকালীন সময়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পিএইচপি রাবার বাগানের ১২ নং রাবার প্লটের বেতডুরী নামক স্থান থেকে ৪ জন অপহৃতকে মানবেতর জ্ঞান হারা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধার হওয়া অপহৃতরা জানায় তাদেরকে আধা ঘন্টা আগে সন্ত্রাসীরা এই জায়গায় ছেড়ে দিয়ে পাহাড়ের দিকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।

নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ৩১ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আনোয়ারুল আজিম জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকাটি বিস্তৃত পাহাড়ে ঘেরা এবং গহীন জংগল হওয়াতে এরকম অপহরন ঘটনা প্রায় সময় ঘটে চলছে। অপহরন প্রতিরোধে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশ এবং বিজিবির যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, অপহৃত চার ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।

অপহৃত ৪ জনের উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর মোঃ শেখ জানান, এই অপহরন ঘটনায় আমরা ইতিমধ্যে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ সহ আটক করে ও আরো সন্দেহভাজনদের কে আটকের জন্য চেষ্টা চালিয়ে মুল অপহরণকারীদের গ্রেফতারে নেমেছি। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

থানা এলাকার আলোচিত ক্রাইমজোন বাইশারী এলাকার দায়িত্বরত উপ-পুলিশ পরিদর্শক আবু মুসা জানান, উপজেলার দোছড়ি ও বাইশারী ইউনিয়ন দুটির মধ্যবর্তী একটি খাল ও খালের উভয় পাশে বিস্তীর্ণ পাহাড় এবং জংগল থাকায় অপহরনের ঘটনা থামানো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সেনা,বিজিবি ও পুলিশের আরো দীর্ঘমেয়াদি অভিযান পরিচালনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। আটককৃত ৮ জন ব্যতীত আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে অপহৃত ৪ জনকে উদ্ধারের পাশাপাশি আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।