মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু, ঘটনা স্থল থেকে ফিরে
রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা শহর আলীর চর থেকে ৯ জানুয়ারী উদ্ধার হওয়া মস্তকবিহীন অর্ধগলিত পরিচয়হীন লাশটি কার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয়দের মতে হতে পারে সে রামুর ফারিকুলের হতভাগা ছৈয়দ আহাম্মদের। এদিকে লাশটি উদ্ধার হওয়ার পর থেকে শহর আলী চর এলাকার মানুষের মাঝে বিরাজ করছে অজানা আতংক। সম্প্রতি এলাকার মানুষ পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে কক্সবাজার সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের শরণাপন্ন হয়। বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে রহস্যময় অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসে। ঐ গ্রামের মৃত ফররুখ আহাম্মদের ছেলে মোঃ ইসহাক ও মৃত মনির আহাম্মদের ছেলে মফিজুর রহমানসহ এলাকার অনেকে জানান পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার করা গলা কাটা ব্যক্তির পরনের কাপড় দেখে ও লোক মুখে শোনে সবাই ধারণা করছে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের তেচ্ছিপুলের ফারিকুল এলাকার মোঃ ইউনুছ ও ইসমাইলের পিতা এবং মৃত মোহাম্মদের ছেলে ছৈয়দ আহাম্মদ। সরেজমিন অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে ছৈয়দের স্ত্রী ছাহারা খাতুন পরকিয়ার কারণে তার সাথে দীর্ঘ দিন বনিবনা না হওয়ায় ছৈয়দ কচ্ছপিয়ার শহর আলির চরস্থ নিজের মেয়ের জামাইর বাড়ীতে থাকতো। সেখানে জামাই বিদেশ থাকায় মেয়ে ও দেবরের সাথে বিরুদ্ধ সৃষ্টি হলে মেয়ে রামুর তেচ্ছিপুল পিতার বাড়ীতে চলে যায়। তখন থেকে ছৈয়দ শাশুড় বাড়ীতে থাকতো বলে জনান স্থানীয়রা। সেখানে প্রায় তিন মাস তাদের সবজি ক্ষেতে কাজ করতে দেখেছে প্রতিবেশীরা। স্থানীয় মৃত মোঃ আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন ও মৃত আবুল হোসেনের ছেলে আবদুল মালেকসহ অনেকে জানান ছৈয়দ আহাম্মদ বিগত দেড় মাস আগে শ্যালক মৃত কালা মিয়ার ছেলে মোঃ হাশেমের ক্ষেতে কাজ করেছে। তারা আরো জানান শহর আলীর চর এলাকায় ছৈয়দকে সবাই আজ থেকে দেড় মাস আগে দেখেছে। কিন্তু এসব কথা স্বীকার করছে না শাশুড় বাড়ীর লোকজন। শ্যালক হাশেমের স্ত্রী ইসমত আরা থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন বিগত তিন মাস আগে অসুস্থ ছৈয়দকে তার স্বামী ও তিনি মানসিক রোগে আক্রন্ত হওয়ায় স্থানীয় মোঃ হোসেন (প্রকাশ বর্মাইয়া নলা লম্বা) নামের এক ব্যক্তির স্ত্রীর থেকে চিকিৎসা করার কথা জানান। তবে এর পর থেকে সে কোথায় চলে গেছে তারা জানেনা। এলাকাবাসীর মতে তার স্ত্রী ছাহারা খাতুন ও শাশুর বাড়ির পরকিয়া ঘঠিত কারনে ছৈয়দ আহাম্মদ খুন হতে পারে বলে ধারনা করেন এলাকার সচেতন মহল। গত কাল বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এই সব তথ্য বের হয়ে আসে। হত্যাকান্ডের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা, মোজাম্মেলের ছেলে মিজানের স্ত্রী জন্নাত আরা বেগম ও জুহুরা খাতুন জানান, মাথা খন্ডিত লাশটি ফুল ঝাড়ুর জন্য ঐ পাহাড়ে গেলে প্রথম দেখে তারা প্রতিবেশীদের বলেন। তখন তারা স্থানীয় চৌকিদার কে খবর দেয়। স্থানীয়দের মতে ছৈয়দের শ্যালক মোঃ হাসেমর দুই স্ত্রী ইসমত আরা ও ইয়সমিনের কথায রহস্য লকিয়ে আছে। তাই রহস্য উদঘাটনে স্ত্রী ছাহারা খাতুন শ্যালক মোঃ হাশেমসহ তার দুই স্ত্রী, শালী রহিমা বেগম এবং শালীর জামাই হাশেমকে জিঙ্গাসাবাদ করা হলে বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা। উল্লেখ্য গত ৯ জানুয়ারী মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের শহর আলীর চর নামক স্থানের মমতাজের ঘোনার তিলিশমা পাহাড়ের চুড়া থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। চৌকিদার মোহাম্মদের মাধ্যমে খবর পেয়ে গর্জনিয়া ফাঁড়ী পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় মস্তকবিহীন এ গলিত এ লাশ। স্থানীয়দের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করে জেলা শহরে। মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ী ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) কাজী আরিফ উদ্দিন জানান, এই বিষয়ে গত ১৩ জানুয়ারী রামু থানা পুলিশের এস আই ফজলুল করিমকে বাদী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে যার নং ১৪। তবে মেডিকেল রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছেনা। এর পরেও গোপনে ও প্রকাশ্যে তিনি তদন্ত করে আসল ঘটনা বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি সাংবাদীকদের জনান।