ডেস্ক নিউজ:

কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি গঠন নিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। খসড়া কমিটি প্রকাশের পর তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।

তাদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে এ কমিটিতে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজনকে স্থান দেয়া হয়েছে। নেতাদের দাবি, এটি চূড়ান্ত নয়, খসড়া। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫ এর ‘ক’ উপধারায় দলের সভাপতির কার্যাবলীতে বলা হয়েছে, ‘সভাপতি বিভাগীয় (সম্পাদকীয় বিভাগ) উপ-কমিটিসমূহ গঠন করিবেন। তিনি প্রত্যেক উপ-কমিটির জন্য অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহ-সম্পাদক মনোনীত করিবেন। সভাপতি উপ-কমিটি সমূহের কার্যাদি তদারক ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা করিবেন।’ গঠনতন্ত্রের ২৫ এর ‘চ’ উপধারায়ও একই কথা বলা হয়েছে, ‘সংগঠনের সভাপতি কর্তৃক উপ-কমিটির সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হবে এবং তিনি উপ-কমিটিসমূহ গঠন করিয়া দিবেন।’

গত বুধবার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতে শুরু করে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে বৃহস্পতিবার থেকে। এ প্রেক্ষিতে দলটির দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো প্রস্তাবিত খসড়া উপ-কমিটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে কমিটিগুলো। তিনি জানান, উপ-কমিটি এখনও অনুমোদন হয়নি। সহ-সম্পাদকদের কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়া যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের নেতা দাবি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন উপ-কমিটিতে স্থান না পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক দলীয় সভাপতি কার্যালয়ে আসেন। বিক্ষুব্ধরা এ সময় সাধারণ সম্পাদকের গাড়ি ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন। শনিবারও বিক্ষোভ করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। রোববার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বৈঠকে যোগ্যতাসম্পন্নদের কমিটিতে রাখার কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্রগুলো বলছে, উপ-কমিটি গঠনে দলের সংশ্লিষ্ট নেতাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির দু’জন নেতা। তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদকদের কাছে সহ-সম্পাদকের জন্য নামের তালিকা চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ওই তালিকার বাইরে থেকে সহ-সম্পাদকদের তালিকা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কোনো কোনো বিভাগীয় সম্পাদক এ তালিকা গ্রহণ করেননি। অধিকাংশ বিভাগীয় সম্পাদকের তালিকা পরিবর্তন করে অন্যদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অনভিজ্ঞ ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কেউ কেউ স্থান পেয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, বিগত কমিটিতে সহ-সম্পাদক ছিলেন হাজার খানেক, এবার মাত্র একশ’ জনকে সহ-সম্পাদক করা হবে। তাই বিগত কমিটিতে সহ-সম্পাদক থাকা অনেকেই উপ-কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। একই সঙ্গে দলের দু’জন প্রভাবশালী নেতা এ খসড়া কমিটি চালিয়ে দিয়েছিলেন। তবে বিষয়টি সম্পর্কে দলের সভাপতি অবগত হয়েছেন। দলের সভাপতি ওই দু’জন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই দুই নেতা দলীয় সভাপতির কাছে একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। দলীয় সভাপতি বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকতে বলেছেন এবং বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেছেন, দলীয় সভাপতির অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই উপ-কমিটি বৈধতা পায় না। যেহেতু গতবার একজন নেতার স্বাক্ষরে অনেকেই সহ-সম্পাদক হয়েছিল, সেহেতু এবারও এ ধরনের একটি চেষ্টা হয়। তবে দলীয় সভাপতি বিষয়টি অবগত হয়েছেন এবং তিনি তা দেখবেন বলে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকতে বলেছেন।