শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর :

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন বনাঞ্চলে সংঘবদ্ধ বনদস্যুদের ধারাবাহিক বনজ সম্পদ লুটপাট, পাচার বাণিজ্যের ফলে ফুলছড়ি রেঞ্জের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরের অধীন বনভূমি উজাড় হতে চলেছে। ২০ জানুয়ারী তারই ধারাবাহিকতায় দিন দুপুরে ফুলছড়ি রেঞ্জের নাপিতখালী বনবিটের অরলতলি এলাকার নজির আহমদের প্লট থেকে ২ লক্ষাধিক টাকার বিশালাকার ১৬/১৭টি আকাশমনি গাছ কেটে নিয়েছে স্থানীয় চিহ্নিত গাছখেকোরা। খবর পেয়ে বিট কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে ২শ ফুট মত গাছ উদ্ধার করলেও দেখানো হয়েছে ১শ ফুট। বাকী গাছ গোপনে বিক্রি ও মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা নগদ উৎকোচ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ফুলছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে। এমনকি প্রতিদিন বন নিধনযজ্ঞ ও পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও সামাজিক বনায়নের প্লটের উপর ঝুপড়ি নির্মাণের পর অভিযানে গিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা চলছেই। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বনায়ন সৃজনের মত আর কোন পরিবেশ থাকবে না বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। সূত্রে জানা যায়, ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন নাপিতখালী, রাজঘাট, ফুলছড়ি, খুটাখালী ও মেধা কচ্ছপিয়াসহ ৫টি বনবিট অফিস ঘুরে এলাকা পরিদর্শনে দেখা দেয় অধিকাংশ অফিসের বিট অফিসার ভিলেজার ও কয়েক হেডম্যান গাছ চোর, ভুমিখেকোদের সহায়তায় প্রায় ১৫ হাজারের অধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। এসব স্থাপনার একাধিক মালিক জানান, বনবিভাগ সময়ে-অসময়ে কয়েকবার এসব বসতি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ঘরবাড়ি ও দখল বাণিজ্যে মেতে উঠে স্থানীয়রা। ফুলছড়ি রেঞ্জের পূর্ব নাপিতখালী ভিলেজার পাড়া, জৈন্যা কাটা, খুটাখালী মধুর শিয়া, সেগুন বাগিচা ও মেধা কচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্কের আশপাশ এলাকা জুড়ে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর বনভূমি বিগত সালে সামাজিক বনায়নের আওতায় এনে দলিল হস্তান্তর করা হলেও অন্যান্য বনভূমি বনদস্যু, ভিলেজার, গাছ চোরদের থাবায় বেহাত হয়ে গেছে। এদিকে গত ১৫ জানুয়ারী থেকে জুমনগর এলাকায় সামাজিক বনায়নের বিশালাকার প্লট দখল করে ঝুপড়ি নির্মাণ করে আসছে খুটাখালী ইউনিয়নের শিয়া পাড়ার সংঘবদ্ধ চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। খবর পেয়ে বনবিভাগ আইওয়াশ অভিযান ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক। এমনকি ২০ জানুয়ারী অরলতলি এলাকা থেকে আশরাফ আলীর পুত্র রমজান আলী, ইসলাম ও তার বোন জামাই ছলিমসহ আরো ৬/৭জনের বনদস্যু ২দিন ধরে গাছগুলো কেটে পাচার করে আসছিল। ঐদিন সংবাদ পেয়ে ফুলছড়ি বিট কর্মকর্তা আল আমিনসহ সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান চালিয়ে ৬৩ টুকরা ২শ ফুটমত গাছ জব্দ করে নিয়ে আসে। অবশ্য নাপিতখালী বিটের অধীনস্থ এলাকা হওয়ায় বিট কর্মকর্তা আল আমিন গাছগুলো রেঞ্জার আবদুর রাজ্জাককে বুঝিয়ে দেয়। সেখান থেকে ২৮ টুকরো গাছ জব্দ করা হয়েছে বলে প্রচার করলেও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় ২শ ফুটমত ৬৩ টুকরা গাছ গাছ জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা আল আমিন জানান, খবর পেয়ে ২৮ টুকরা গাছ জব্দ করা হয়েছে। জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের সাথে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেনি এবং এসএমএস দেওয়া হলেও সদুত্তর দেননি। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জেনেছেন এবং সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে জানান। জানা গেছে ঐদিন জব্দকৃত গাছগুলো গোপনে বিক্রি করে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে গেছেন ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক।