মঈনুল হাসান পলাশ:
এক.
দেশের প্রধান কেন্দ্র কক্সবাজারকে অনেকে খাতির করে বলেন পর্যটন রাজধানী। সেই কথিত পর্যটন রাজধানীর একদিকে বেহাল দশা, অন্যদিকে দেশী বেনিয়ার দল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে এই কক্সবাজারের সহায়-সম্পদ। এই সম্পদ লুটের তালিকায় সর্বশেষ য্ক্তু হলো জামায়াতি ঘরানার কর্পোরেট হাউজ ওরিয়ন গ্রুপ। কক্সবাজারের পর্যটনের ঐতিহ্য হোটেল শৈবাল ও তার আওতাধীন বিশাল ভূ-সম্পদ পানির দরে হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের মালিকানায় হোটেল-রিসোর্ট করবে। কিন্তু কক্সবাজারবাসীর প্রশ্ন,আর কতো হোটেল-রিসোর্ট দরকার কক্সবাজার শহরে?

হোটেল শৈবাল ও তার প্রাঙ্গণ,বিশাল দিঘী আর দিঘীর ঘাট। হোটেলের পেছনের বাগান আর বাগানের মাঝ দিয়ে ওয়াকওয়ে ধরে সৈকতের বালুচরে যাননি এমন মানুষ কক্সবাজারে বিরল।

আসলে পর্যটন শৈবাল যতোটা না পর্যটকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার শহরের মানুষের কাছে। কারণ এটি শহরবাসীর বিকেলবেলা কাটানোর প্রিয় প্রাঙ্গণ।

অথচ,ওরিয়ন গ্রুপ শহরবাসীর এই প্রাণের সম্পদ কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ক’দিন পরে মানুষের অতিপ্রিয় বিচরণ ক্ষেত্রে লুটেরা ওরিয়ন গ্রুপ সাইনবোর্ড লাগাবে,“জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ!” ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়।

বিশ্বাস হতে চায় না, পাঁচ হাজার কোটি টাকার ১৬০ একর জমি মাত্র ৬০ কোটি টাকায় হাতিয়ে নিচ্ছে ওরিয়ন। অবিশ্বাস্য এই লুট কিভাবে মেনে নেবে কক্সবাজারের মানুষ?

কেনো শৈবাল হোটেল বিক্রি করতে হবে?-আমাদের প্রশ্ন। সরকারের কি টাকার এতোই অভাব পড়েছে?

দুই.
পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের মানুষ,আসলে কতোটা পর্যটনবান্ধব? আদৌ পর্যটনবান্ধব কি-না?

উত্তর হবে নেতিবাচক। বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের মানুষ যতোদিন পর্যটনবান্ধব হতে পারবে না,ততোদিন এই কক্সবাজারে পর্যটন আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাবে না।

পর্যটন না বোঝা মানুষকে সাথে নিয়ে পর্যটন করা মানে অনুর্বর জমিতে উন্নত বীজ দিয়ে চাষাবাদ করার চেষ্টার মতো।

কক্সবাজারের মানুষকে অবশ্যই পর্যটন বান্ধব করতে হবে। পর্যটনবান্ধব হতে হবে। কিন্তু কিভাবে তা করা সম্ভব?

শিক্ষা,প্রশিক্ষণ,অবহিতকরণ,সচেতনতামূলক কার্যক্রম,উদ্বুদ্ধকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে পর্যটনকে জানতে পারবে,বুঝতে পারবে মানুষ। পর্যটন, চর্চার বিষয়।জানার বিষয়। গবেষণার বিষয়। আর তার জন্য প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ। প্রশিক্ষণের সুযোগ, এই সংক্রান্ত তথ্য জানবার সুযোগ। কক্সবাজারের বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে ভবিষ্যত পর্যটন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত করতে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার সময় এখনই। আর পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারই হবে এই কার্যক্রম পরিচালনার আদর্শ স্থান। তার জন্য দরকার একটি পূর্ণাঙ্গ ট্যুরিজম একাডেমী।

শহরের সৈকত সংলগ্ন হোটেল শৈবাল আর তার বিশাল প্রাঙ্গণেই হতে পারে বাংলাদেশ ট্যুরিজম একাডেমী। যেখানে দেশ ও বিদেশের পর্যটন শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। পর্যটন নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করবে আগ্রহীরা। আর হোটেল শৈবাল প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম মিউজিয়াম। যা হবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য জ্ঞান ও আগ্রহের কেন্দ্র।

আর সময়ের সাথে সাথে কক্সবাজারের মানুষ পর্যটনকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতে শিখবে। বিশ্বাস করতে শিখবে, একমাত্র এই পর্যটনই কক্সবাজারের ভবিষ্যত অর্থনীতি,ভবিষ্যত জীবিকা।

এমন সম্ভবনা জড়িয়ে আছে যে স্থাপনা আর স্থান জুড়ে, সেই শৈবালকে কেড়ে নিতে চায় লুটেরা অরিয়ন গ্রুপ,শুধুমাত্র নিজেদের ধন সম্পদের পাহাড় আরো বাড়াতে।

আমরা কক্সবাজারবাসী তা কি মুখ বুঁজে মেনে নেবে? নাকি রাস্তায় নেমে আসবো।? রক্ষা করবো আমাদের প্রিয় হোটেল শৈবাল আর তার ১৬০ একর মহামূল্যবান ভূ-সম্পদ!