সিবিএন:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার বিশেষ দূত ইয়াং হি লি। শনিবার তিনি টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্র জানায়, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ইয়াং হি লি টেকনাফের দমদমিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এরপর টেকনাফ নেচার পার্কের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও ১০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রোহিঙ্গারা তাদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। নেচার পার্কের ভেতর সাক্ষাৎ নেয়া রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের চালানো নির্যাতনের বর্ণনা ধৈর্য সহকারে শোনেন ইয়াং হি লি।

মিয়ানমারের মংডুর বলিবাজার এলাকার আয়েশা খানম ইয়াং হি লিকে বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। নারীদের গণধর্ষণ করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে বাড়িঘর। নিপীড়ন সইতে না পেরে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

তার মতে, মিয়ানমারে তাদের জীবন নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না করে ফিরিয়ে দেয়া মানে পুনরায় নির্যাতনের মুখে ঠেলে দেয়া। তার চেয়ে এদেশে গুলিতে মারা যাওয়া ভালো।

এরপর দুপুর ১টার দিকে ইয়াং হি লি টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। সেখান থেকে দুপুর দেড়টার দিকে রইক্ষ্যং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

সফরকালে তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও ক্যাম্পে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্তকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং হি লি বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান এবং শুক্রবার দুপুরে তিনি কক্সবাজার আসেন। চলতি মাসে তার মিয়ানমার সফরের কথা থাকলেও সে দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি মিয়ানমারের পরিবর্তে বাংলাদেশ সফরে আসেন। এবার সাত দিনের সফরে ৫ দিন বাংলাদেশে থেকে ২৪ জানুয়ারি থাইল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সন্ত্রাস দমনের নামে রাখাইন রাজ্যে হিংস্র অভিযান চালায়। এ সময় তারা নির্যাতন, বাড়িঘরে আগুন ও গণধর্ষণ চালালে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। এ অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও আসছে। তাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তির পরও সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গারা।