শাহেদ মিজান, সিবিএন:
হোটেল শৈবালসহ কক্সবাজারের ইতিহাস ঐতিহ্যবাহী মাঠ ও ভূমি সম্পদ রক্ষার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টায় কক্সবাজার নাগরিক সমাজের উদ্যোগে প্রেসক্লাবের হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের।

সংবাদ সম্মেলনে দেয়া তথ্য মতে, সরকার উন্নয়ন কর্মকা-ের স্বার্থে কক্সবাজারের মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। বিশেষ করে অনেক ভূ-সম্পদ ছেড়ে দিয়েছে। এই কারণে অনেকে বাড়ি-ভিটা হারিয়ে নি:স্বও হয়ে গেছে। বর্তমানে কক্সবাজারের ইতিহাসের অংশ ও সৌন্দর্য্যের বাহন শৈবাল হোটেলকে বিতর্কিত ‘ওরিয়ন গ্রুপ’র হাতে তুলে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে।

তথ্য মতে, পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পর্যটন করপোরেশনে কিছু দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা যোগসাজস করে সরকারকে ভুল বুঝিয়ে অবৈধ আঁতাত করে নামমাত্র মূল্যে শৈবাল হোটেল ওরিয়ন গ্রুপের হাতে তুলে দিতে পাঁয়তারা করছে। ১৩০ একরের প্রায় পাঁচহাজার কোটি টাকার এই সম্পদ মাত্র ৬০ কোটি টাকায় ৫০ বছরের জন্য লিজ দেয়ার একটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। তার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করারও অপচেষ্টা চলছে।

কক্সবাজারের লোকজনের অভিযোগ, শৈবাল হোটেল ও সাগরিকা রেস্টুরেন্ট কক্সবাজারের ইতিহাস-ঐতিহ্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজার আসলেই এই হোটেলের আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। অন্যদিকে শৈবাল হোটেল সংলগ্ন দিঘী মাঠ এবং খোলা জায়গা নগরবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাসের স্থান। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ হোটেল ‘ইস্ট-ইন্ডিয়া’র মতো একটি বিতর্কিত কোম্পানির হাতে তুলে দিলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আবছার বলেন, ‘কক্সবাজারের পর্যটনের অমূল্য সম্পদ শৈবাল হোটেলটি কোনোভাবে বেহাত হতে দেয়া হবে না। আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দেবো না। এই জন্য আমরা কক্সবাজারবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে জেগে উঠে হবে।’

জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, ‘শৈবাল হোটেল কক্সবাজারবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাস। এই হোটেলটি আমাদের অমূল্য সম্পদ। পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পর্যটন করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে এই হোটেলটিকে বিক্রি করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। এই প্রক্রিয়ার সাথে কক্সবাজারের কিছু রাঘববোয়ালও জড়িত। কিন্তু শরীরের এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা তা হবে দেবো না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, ‘কক্সবাজারের উপর ভূমিদস্যুদের নজর পড়েছে। আমরা চুপ থাকলে সব নিয়ে যাবে। পর্যটনের সম্পদ আমাদের সম্পদ। এটা কাউকে দেয়া যাবে না। ঐক্যবদ্ধ থেকে আমাদের তা প্রতিহত করতে হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘কক্সবাজারকে কোনোভাবেই বিক্রি করতে দেয়া হবে না। হোটেল শৈবাল রক্ষায় আমরা আজকালের মধ্যেই পর্যটনমন্ত্রীর সাথে কথা বলবো। প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। আমরা জানি মাননীয় প্রধামন্ত্রী কক্সবাজারের পক্ষে। আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী হোটেল শৈবালকে বিক্রি হতে দেবেন না।’

২০১০ সালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শৈবাল হোটেলের ৫৫ কোটি টাকার যে উন্নয়ন প্রকল্প কেটে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া তা ফেরত দেয়া, লিজের প্রক্রিয়া বাতিল করে শৈবালে নতুনভাবে কনভেনশন সেন্টার, শিশুপার্ক, ত্রি স্টার মানের হোটেল ও পুরাতন ভবন সংস্কার কার দাবি জানান। একই সাথে বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপ ও সাবেক পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, তার ভাই আজিজ খান, সাবেক পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম, সাবেক পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ দত্ত চৌধুরীসহ অন্যান্য জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

এসময় কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী জেলে পার্ক, বাহার গোলচত্বর মাঠ, কলাতলী গণপূর্ত আবাসিক এলাকার দু’টি মাঠসহ শহরের ঐতিহ্যবাহী ও ফাঁকা জায়গাগুলো রক্ষার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, এড. আয়াছুর রহমান, ডেইলি স্টারের স্টাফ রিপোর্টার মুহাম্মদ আলী জিন্নাত, প্রথম আলোর কক্সবাজার অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল কুদ্দুস রানা, সমুদ্র কণ্ঠের সম্পাদক মঈনুল হাসান পলাশ, পিটিআই’র সাবেক সুপারিটেন্টেন্ড নাসির উদ্দীন, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক এড. আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর হেলাল উদ্দীন কবির, জাসদ নেতা মোহাম্মদ হোসেন মাসু, এনটিভির জেলা প্রতিনিধি ইকরাম চৌধুরী টিপু, সকালের কক্সবাজার সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন’র সমন্বয়ক আবদুল আলীম নোবেল।

এছাড়াও কক্সবাজারের প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অলনাইন মিডিয়ার সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।