সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
দেশের সকল আইনজীবী সহকারীদের জন্য প্রণীত বাংলাদেশ ‘আইনজীবী সহকারী কাউন্সিল আইন’ পাস করার দাবীতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৭ জানুয়ারী) বেলা ১ টার দিকে কক্সবাজার জেলা এডভোকেট ক্লার্ক সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ হাসানের নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন, নির্বাহী সদস্য হেলাল উদ্দিন, আপ্যায়ন সম্পাদক জিয়াউর রহমান, সদস্য আমানত শাহ, ইমাম হোসেন। এছাড়া কার্যকরী কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে- ১৯৮৬ইং সাল থেকে দেশের ৭৯টি আইনজীবী সমিতির অধীনে লক্ষাধিক আইনজীবী সহকারী কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্টির একটি অংশ এবং সুপ্রাচীন কাল থেকে তারা আদালত অঙ্গন ও সমাজ কল্যাণে গণমূখী কাজ করছে তারা।
স্বাধীনতা লাভের পর সংবিধানের অঙ্গীকার মোতাবেক প্রায় প্রতিটি পেশাজীবী মানুষের জন্য স্বতন্ত্র আইন প্রণীত হয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, দেশের আইনজীবী সহকারী সম্প্রদায়ের জন্য অদ্যাবধি পেশাগত কাজের বর্ণনা সহকারে এখনো পর্যন্ত কোন আইন প্রণয়ন করা হয়নি।
আইনজীবী সহকারীগণের প্রাণের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালে তৎকালীন আইন সংস্কার কমিশন আইনজীবী সহকারীদের জন্য একটি খসড়া আইন পাস করার লক্ষ্যে মাননীয় রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রেরণ করেন। কিন্তু তৎকালীন তা সরকার পাস করেনি। অত:পর আইনজীবী সহকারীগণ আইনজীবী মহাসম্মেলন, জেলা সম্মেলন, সাংবাদিক সম্মেলন, বিভাগীয় সম্মেলন, সেমিনার, মানব বন্ধনসহ মহাসম্মেলনের মাধ্যমে সকল মহল থেকে আইন প্রণয়নের দাবির প্রতি সমর্থন আদায় করেন।
এরই ধারাবহিক কর্মসূচীর এক পর্যায়ে বিগত ১৯৯৩ সালের ৬ আগষ্ট বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সময়ে বিরোধী দলে নেত্রী থাকাকালে আইন পাসে সমর্থন ও সহযোগীতা করার আশ্বস দেন। অতঃপর দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয় খসড়া প্রণীত আইনটি বিল আকারে প্রস্তুত করে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মতামত প্রদান করেন। এবিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি আইন পাশের পক্ষে লিখিত মতামত প্রদান করেন। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আইন পাশের পক্ষে লিখিত মতামত প্রদান করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বিগত ২০০৬ সালের ৬ মে কতিপয় সংশোধন সাপেক্ষে তা পাসের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে মন্ত্রণালয়ে লিখিত মতামত পেশ করেন।
বিগত ২০০০ সালের ১২ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয়, আইন সংস্কার কমিশনে একটি রেফারেন্স প্রেরণ করেন। তারই ফলশ্রুতিতে আইন সংস্কার কমিশন পূর্ণাঙ্গ আইনের রূপরেখা প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন।
২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল “চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন” এবং ১৭ নভেম্বর “সিলেট বিভাগীয় সম্মেলনে” আইনজীবী সহকারী কাউন্সিল আইন পাস করার লক্ষ্যে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলাম এর সহযোগীতা চাওয়া হলে তিনি আইন পাসে সুর্নিদিষ্ট প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করেন। কিন্তু অজানা কারণে এই আইন এখনো পাশ করা হয়নি।
আইন পাসে বিলম্ব হওয়ায় ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট অঙ্গনে সমিতির ৪র্থ-মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মহাসম্মেলনে মাননীয় আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক প্রধান অতিথি মন্ত্রী পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যগণ, মাননীয় ডেপুটি স্পীকার, মাননীয় এ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ, জাতীয় ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দকে বিশেষ অতিথি করা হয়।
মহাসম্মেলনের অতিথিবৃন্দ বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী আইন পাসে বিলম্বের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ে ওই আইন পাস করার অঙ্গীকার পূণঃব্যক্ত করেন।
২০১৬ সালের ২৩ জুলাই সমিতির “অভিষেক অনুষ্ঠানে” মাননীয় আইনমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ পুনরায় উপস্থিত হয়ে খসড়া প্রণীত আইনটি ২০১৬ এর শীতকালীন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পাস করার ওয়াদা জ্ঞাপন করেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ অদ্যাবধি আইন পাসে কারো সদিচ্ছা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এমনকি পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার ১৯৯৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে “ল”-ক্লার্ক’স এ্যাক্ট” নামে একটি স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন করে একই পেশায় মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, আইন সংস্কার কমিশন, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের লিখিত সুপারিশ, দায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় আইন মন্ত্রী মহোদয়ের বার বার সুর্নিদিষ্ট ওয়াদা জ্ঞাপন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদিচ্ছা থাকা সত্বেও খসড়া প্রণীত “আইনজীবী সহকারী কাউন্সিল আইন” অদ্যাবধি সংসদে উত্থাপন না হওয়ায় স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।