বিনোদন ডেস্ক:
শাকিব খান গেল বছরের শেষ দিকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছেন স্ত্রী অপু বিশ্বাসকে। সেখানে তিনি অপুকে অবাধ্য স্ত্রী দাবি করে আরও কিছু অভিযোগ করেছেন। তারই প্রেক্ষিতে শাকিব-অপু দুজনকেই শুনানির জন্য তলব করেছিলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

আজ সোমবার (১৫ জানুযারি) ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৩-এর অফিসে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখােনে ছিলেন শাকিব খান। তার কোনো প্রতিনিধিও পাঠাননি তিনি। তবে দ্বিতীয় পক্ষ অপু বিশ্বাস হাজির হন সাড়ে ১২টার দিকে। শুনানিতে অপু সংসার টিকিয়ে রাখার পক্ষেই মত দেন।

শুনানি শেষে তিনি জাগো নিউজকে সোমবার দুপুরে বলেন, ‘আমাকে শুনানিতে জিজ্ঞেস করা হয়েছে শাকিবের আনা অভিযোগ সম্পর্কে। আমি জবাব দিয়েছি। আমার নামে আনা অভিযোগ যে মিথ্যে তার পক্ষে প্রমাণও দিয়েছি। মনোমালিন্য সব সংসারেই হয়। তাই বলে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়া হাস্যকর। যদি ডিভোর্সই চূড়ান্ত সমাধান হয় তবে এই দেশে রোজ রোজ শত শত সংসার ভেঙে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৩-এর সিনিয়র সচবি হেমায়েত হোসেন আমাকে জিজ্ঞেস করেন ডিভোর্স চাই কী না। আমি বলেছি আমার একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যত আমি অনিশ্চয়তায় ফেলতে চাই না। তাই ডিভোর্সের পক্ষে নই।’

অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আজ শুনানিতে গিয়ে জানতে পেরেছি শাকিব খান যে আবেদন করেছেন ডিভোর্সের জন্য সেটি বাতিলও হতে পারে। কারণ, ডিভোর্সের জন্য যেসব কাগজপত্রাদি জমা দেয়া দরকার সেগুলোর অনেক গুরুত্বপূণ কাগজ তিনি জমা দিতে পারেননি। রাগের মাথায় তিনি আমাকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশে প্রচলিত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে ডিভোর্সের বেশ কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। সেইসব নিয়মে এই আবেদন শুদ্ধ নয়। শাকিবের আইনজীবীকে প্রয়োজনীয় কাগতপত্র কেন জমা দেয়া হয়নি সেটি ফোনের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করেছে সিটি করপোরেশন। তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। যে আবেদনটি সঠিকই নয় তার ফলাফল নিয়ে আমি ভাবছি না। আমি সংসার করতে বরাবরই আগ্রহ প্রকাশ করেছি আজও করে এলাম।’

অপু বলেন, ‘শাকিব যেভাবে খেয়াল খুশিমতো ডিভোর্স দিতে চাইছেন এমনটা হলে তো সব স্বামীরাই যখন খুশি তখন বউ ছেড়ে দেবেন। কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইনে নারীদের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। অন্যায়ভাবে ডিভোর্স হলে আইনের সাহায্য নেয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সবকিছু ভেবেচিন্তে শুনানিতে আমাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য। ভাঙন চায় না কেউই। না কোনো ব্যক্তি, না কোনো রাষ্ট্র। শাকিব খান একজন সুপারস্টার হয়ে তবে কেন এমন সিদ্ধান্ত নেবেন? তার সঙ্গে আমার মতের এমন কোনো অমত নেই, আমরা কোনোদিন ঝগড়া করে হাতাহাতিও করিওনি। যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেটা ভুল বোঝাবুঝি। নিজেরা কথা বললেই মিটে যায়। এর জন্য এত সব দরকার ছিলো না।’

‘ছেলে আব্রামের জীবনটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাবে আমরা আলাদা হলে। মা হিসেবে আমি এটা কখনোই চাই না। আমি শাকিবকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, আজও সেই ভালোবাসা একচুল কমেনি। আরও দুটি শুনানি বাকি রয়েছে আমাদের। আমার বিশ্বাস শাকিব তার ভুল বুঝতে পারবে এবং স্ত্রী-পুত্রের কাছে ফিরে আসবে। এতে আমাদের দুজনের ইমেজও বাঁচবে, আমাদের ছেলেও আর দশটা ছেলের মতো স্বাভাবিক জীবন পাবে। বিচ্ছেদ কোনো সমাধান নয়, হতে পারে না।’- যোগ করলেন অপু বিশ্বাস।

এদিকে সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শাকিব-অপুর ডিভোর্সের ব্যাপারে দ্বিতীয় শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল ৩ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত হোসাইন আরো জানান, ‘অপু বিশ্বাস আজকের বৈঠকে বলেছেন, শাকিব খানের জন্য তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে তাকে বিয়ে করেছেন, তাদের পরিবারে বর্তমানে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তাই তিনি সকল কিছুর পরও শাকিব খানের সাথে সংসার করতে চান।’

যেহেতু আজকের বৈঠকে শাকিব খান আসেন নি তাহলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল ৩ এর পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল ৩ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান আমরা অপু বিশ্বাসের কথা শুনেছি আর আজ যেহেতু শাকিব খান বা তার কোন প্রতিনিধি আসেন নি তাই আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের ১২ তারিখ (সোমবার) দ্বিতীয় বৈঠকের তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে। সে তারিখেও যদি শাকিব খান যোগাযোগ না করেন তাহলে তৃতীয় ও শেষ বৈঠকের তারিখ জানানো হবে।’

সিটি করপোরেশনের পারিবারিক আদালত সূত্রে আরো জানা গেছে, কোনো পক্ষ তালাকের আবেদন করলে আদালতের কাজ হচ্ছে ৯০ দিনের মধ্যে উভয়কে তিনবার ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করা। সমঝোতা না হলে স্বাভাবিকভাবেই তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। এখানে সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।