আব্দুল আলীম নোবেল:
কক্সবাজারে ৪ মাস ধরে জন্ম নিবন্ধন সনদ বন্ধ জনভোগান্তি চরমে। পুরো জেলায় চলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তিকার্যক্রম। প্রয়োজনী কাজে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে না পায় প্রতিনয়িত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অভিভাকদের। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল জন্ম সনদ। গত ১৯ সেপ্টম্বর থেকে বন্ধ হলে এখনও চালু করা হয়নি।

কক্সবাজার জেলার ৪ পৌরসভা ও ৭১ টি ইউনিয়নের ডিজিটালসেন্টারে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান কার্যক্রম বন্ধ আছে। মূলত ২৫ আগষ্টের পরে মায়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যাক রোহিঙ্গা আসার পর থেকে কক্সবাজার সহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ আছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে জেলার সর্বস্থরের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বছরের শুরুতে স্কুলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা পড়েছে চরম বেকায়দায়। এদিকে স্কুল কতৃপক্ষ গুলো জন্ম নিবন্ধন সদন ছাড়া স্কুলে

ভর্তির জন্য ফরম দিচ্ছে না বলে জানান অভিভাবকরা। তবে সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভা সহ কয়েকটি ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধনের বিকল্প হিসাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একটি বিশেষ প্রত্যয়ন দিচ্ছে। যাতে প্রার্থীর জন্ম তারিখ এবং তার পিতামাতার পরিচিতি সহ উল্লেখ করা হচ্ছে এতে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে। এদিকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ কার্যক্রম পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া প্রত্যয়নকেই অফিসিয়াল ভাবে গ্রহন করার দাবী জানিয়েছে সচেতন মহল।

কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম জানান,

আমার স্বামী প্রবাসে থাকে তাই পারিবারিক সব কাজ আমাকেই দেখাশুনা করতে হয়। সম্প্রতি ছেলেকে কক্সবাজার পিটিআইতে ভর্তি করানো জন্য সেখান থেকে ফরমের জন্য গিয়েছিলাম। ফরমের নিয়ম অনুযায়ী সেখানে ছেলের জন্ম নিবন্ধন দিতে হবে। সে জন্য আমি বেশ কয়েক বার পৌরসভাতে গেছি এবং পৌরসভার কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি তারা বলেছে ৪/৫ মাস ধরে কক্সবাজারে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ আছে। তাই কোন ভাবেই জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়া যাচ্ছে না। এতে আমি খুব হতাশ হলেও পরে কাউন্সিলার আমাকে একটি প্রত্যয়ন পত্র করে দিয়েছে সেখানে আমার ছেলের জন্ম তারিখ সহ আমাদের সব তথ্য উল্লেখ আছে। পরে সেই প্রত্যয়ন পত্র আমি পিটিআইতে নিয়ে গেলে কোন মতে সেই ফরম গ্রহন করেছে। আমার মত অসংখ্য মানুষ এই সমস্যায় আছে। কক্সবাজার পৌরসভার সচিব রাসেল চৌধুরী বলেন যতটুকু জানি পার্শবর্তি দেশ মায়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আসার পরে তাদের যে নিবন্ধন চলছে সেটা শুরু হওয়ার পর থেকে কক্সবাজার সহ আশপাশের জেলাতে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ আছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য কিন্তু কোন ভাবেই দেওয়া যাচ্ছে না কারন কেন্দ্রীয় সার্ভার বন্ধ আছে। তবে আমরা জনপ্রতিনিধিদের স্বাক্ষরে একটি প্রত্যায়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি যদি এতে কারো উপকার হয়।

খুরুশকু ইউনিয়ন সচিব পরিষদ এম নুরুল কাদের জানান, সন্তান জন্ম দেওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করার কথা। তাহলে সন্তান স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় কেন জন্ম সনদ নিয়ে এত কথা, জন্ম সনদ এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকের কাছে। এ এটি বন্ধ থাকায় জন ভোগান্তি চরমে ওঠেছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা চেমন আরা চ্যামলী জানান, জন্ম সনদ বন্ধ থাকার পরেও সকাল থেকে জন্ম সনদ নিতে অসংখ্য মানুষের ভীড় সামল দিতে হিমসিম খেতে হয় আমাদের। এতে বুঝা যায় জন্ম সনদ বন্ধ থাকায় সাধরণ মানুষের ভোগান্তি কথটা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বসে একটি সিন্ধেন্তে আসা দরকার।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে অনলাইনে সার্ভার বন্ধ থাকার কারনে জন্ম নিবন্ধন সনদ সরবরাহ করা যাচ্ছে না,এতে এলাকার মানুষ খুব অসুবিধায় পড়েছে, বিশেষ করে বিদেশ থেকে টাকা আনা নেওয়া, ব্যাংক লেনদেন,স্কুলে ভর্তি, জমিরেজিস্ট্রি সহ সব কাজে মানুষ হয়রানী হয়ে আসছে। তবে ইদানিং খুব সমস্যায় পড়েছে মানুষ, স্কুলে ভর্তি সময় এসেছে তারা স্কুলে ছেলে মেয়েদের পছন্দের স্কুলে ভর্তি করাতে জন্ম নিবন্ধন সনদ চাইছে কিন্তু দিতে পারছি না। তিনি বলেন আমি নিজে অফিসিয়াল প্যাডে প্রার্থীর জন্ম তারিখ উল্লেখ করে তার পিতা মাতার পরিচয় সহ নিয়ে একটি প্রত্যয়ন পত্র দেওয়ার চিন্তায় আছি, কিন্তু এখানো উপজেলা থেকে কোন নির্দেশনা পাইনি। আর যদি কোন ভাবে প্রত্যয়ন দেওয়া হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানকে আহবান করবো যতদিন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ কার্যক্রম চালু না হয় ততদিন এই প্রত্যয়ন গ্রহন করে সবাইকে সহেযাগিতা করা উচিত।

এ ব্যপারে ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারনে আমাদের সাময়িক অসুবিধা হলেও আমরা মনে করছি সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধথাকায় কোন রোহিঙ্গা জন্ম নিবন্ধন করতে পারেনি। আমাদের স্কুলে ভর্র্তির সময়ে কোন ভাবেই ছেলে মেয়েরা স্কুলে ভর্তি না হয়ে থাকবে না। আমরা যদিও প্রত্যয়ন পত্র দেওয়া এখনো শুরু করিনি তবে কেও চাইলে অবশ্যই প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে তাদের পূর্ন সহায়তা করা হবে। এবং আমি আসা করবো সবাই যেন সেই প্রত্যয়ন পত্রকে গ্রহন করে। এ ব্যাপারে রামু মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুচ ভুট্টু বলেন, জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি। এখন আরো চাপ বেড়েছে। তবে আমরা সেই বিষয়ে উপজেলা সমন্বয় সভায় বেশ কয়েক বার উত্তাপন করেছি উনারাও সেই বিষয়ে মন্ত্রনালয়কে অবহিত করেছে। তবে এখনো কোন সমাধান আসেনি। আর যদি খুব জরুরী হয় তাহলে পরিষদ থেকে প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে সেটার আপাতত সমাধান করতে হবে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নোমান হোসেন প্রিন্স বলেন জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম দীর্ঘ দিন ধরে কক্সবাজারে বন্ধ, এ বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষ অবগত আছেন । আর বর্তমানে স্কুলে ভর্তির বিষয়ে কোন বিশেষ সিদ্ধান্ত এখনো আসে নি। যদি উর্ধতন কতৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত দেয় সেটা খুব দ্রুত সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।