পূর্বপশ্চিম ডেস্ক:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৬২টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করতে চায় বিএনপি। মৃত্যু, বার্ধক্য, নিষ্ক্রিয়তা কিংবা অজনপ্রিয়তার কারণে আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থীর সন্ধান করছে দলটি। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের আসনও রয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থী সন্ধান করতে কয়েক নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তারা প্রত্যেক আসনে একাধিক প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকা তৈরির কাজ করছেন।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মৃত্যু, নিস্ক্রিয়তা ও অজনপ্রিয়তার কারণে সব সময় কিছু নেতা মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া; কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়া।

প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু প্রতিটি আসনেই একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, এর মধ্যে যাদের জনপ্রিয়তা আছে, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এখনো দলে সক্রিয় ও যোগ্য; তাদেরই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় দেখা যাবে।

ওয়ান ইলেভেনের পর সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিযোগে অনেক যোগ্য নেতাকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন দেয়নি। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সংস্কারপন্থী বেশ কয়েক নেতা মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানা গেছে।

বার্ধক্যের কারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও তরিকুল ইসলাম শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নাও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পঞ্চগড়-১ আসনে জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির এবং যশোর-৩ থেকে তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নির্বাচন করতে পারেন।

এবার ঢাকা-৮ থেকে নির্বাচন করবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এই আসন থেকে নবম সংসদ নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল। নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর আসন সিলেট-২ থেকে মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত তার স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার।

চট্টগ্রাম-২ আসনে বিগত সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এ আসনে এবার তার স্ত্রী ফরহাদ কাদের চৌধুরী অথবা ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

ঢাকা-৭ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর আসনে তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়ন পেতে পারেন। কিংবা অন্য কোনো কারণে ঢাকা-৬ থেকে সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচন করতে না পারলে তার পরিবারের কেউ মনোনয়ন পাবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

বিএনপির টিকিটে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৪ থেকে এমপি হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম দাদুভাই; কিন্তু ৯ম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পান শাহ শরিফ কামাল তাজ। দাদুভাই অসুস্থ এবং তাজ রাজনীতিতে সক্রিয় নন। তাই এই আসনে এবার প্রার্থী পরিবর্তন নিশ্চিত। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল এখান থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন।

আইনি জটিলতায় ৯ম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও এবার রাজশাহী-৫ থেকে অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা এবং নাটোর-২ থেকে অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু; ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ-২ এবং ঢাকা-২ আসন থেকে আমানউল্লাহ আমানের মনোনয়ন নিশ্চিত বলা যায়। ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর ঝালকাঠি-১, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম ঢাকা-১৮, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ফরিদপুর-৩ থেকে মনোনয়ন পাবেন, তা-ও প্রায় নিশ্চিত।

নাটোর-১ আসন থেকে নির্বাচন করতেন ফজলুর রহমান পটল। তার মৃত্যুতে এখন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন তার স্ত্রী অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার শিরিন এবং বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার ও মোজাহার হোসেন মারা যাওয়ায় তাদের আসন যথাক্রমে কুমিল্লা-২ ও পঞ্চগড়-২ এ নতুন প্রার্থী দেওয়া হবে।

গাজীপুর-৪ আসন থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহর ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান। ইতিমধ্যে শাহ রিয়াজুল হান্নান কাপাসিয়ার জনগণের মধ্য ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছেন এবং গাজীপুর-৪ আসনের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ তৃণমূল বিএনপিতে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন।

অন্যদিকে, শেষ পর্যন্ত দলে ফিরিয়ে এনে চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীকে গাজীপুর-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। একই ঘটনা ঘটতে পারে নোয়াখালী-৬ আসনে আনোয়ারুল আজিমের ক্ষেত্রে। বিএনপি তাকে ওই আসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।

খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস চাইলে পাবনা-৫ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। নেতিবাচক অবস্থানের কারণে পাবনা-১ আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির দন্ড কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর এই আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থীকে দেওয়া হতে পারে।

সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নজির হোসেন, জহিরউদ্দিন স্বপন দলে ফিরে আসায় তাদের মনোনয়নের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বিএনপিকে।

বরিশাল-১ আসনে স্বপনের মোকাবিলা করতে হবে উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানকে; নরসিংদী-৪ আসনে বকুলের মোকাবিলা করতে হবে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে; সুনামগঞ্জ-১ আসনে ডা. রফিক চৌধুরীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে নজির হোসেনকে।

যশোর-৬ আসনে এখন সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমেলন্দু দাস অপু। বরাবরই কেশবপুরে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো থাকায় আসনটির ২৫% সংখ্যালঘু ভোটকে টার্গেট করে বিএনপি অপুকে মনোনয়ন দিতে পারে বলে জানা গেছে। ময়মনসিংহ-৪ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন আরেক সংস্কারপন্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু।

এ ছাড়া যেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, পঞ্চগড়-২, ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৩, নওগাঁ-৩ ও ৬, রাজশাহী-৩, ৪ ও ৬, সিরাজগঞ্জ-৫, মাগুরা-১, বরগুনা-২, পটুয়াখালী-২ ও ৩, ভোলা-২, ঝালকাঠি-২, জামালপুর-১, শেরপুর-২, ময়মনসিংহ-১ ও ১০, নেত্রকোনা-২, ৪ ও ৫, কিশোরগঞ্জ-৪, মানিকগঞ্জ-১ ও ৩, মুন্সীগঞ্জ-৩, ঢাকা-১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭, গাজীপুর-৩, মাদারীপুর-১, শরীয়তপুর-১ ও ৩, সিলেট-১, মৌলভীবাজার-২ ও ৩, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-২ ও ৫, কুমিল্লা-২ ও ৪, চাঁদপুর-২, ফেনী-৩, চট্টগ্রাম-৬, কক্সবাজার-১।

বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন তাদের মধ্যে যোগ্য, ত্যাগী ও জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেওয়া হবে।