আব্দুর রশিদ, বাইশারী:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জনবহুল অধ্যুষিত ও রাবার শিল্প নগরী হিসাবে খ্যাত বাইশারীতে রয়েছে শত শত ব্যক্তি মালিকানাধীন রাবার বাগান। স্থানীয়রা রাবারকে বাংলাদেশের সাদা সোনা হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন। বিগত দিনে দেশের মাটিতে সাদা সোনার বিপ্লব ঘটলেও এখন সাদা সোনার দর পতনের কারণে রাবার শিল্প বর্তমানে মারাত্মক হুমকির মূখে পড়েছে। রপ্তানীর সুযোগ থাকলেও বেপরোয়া ভাবে বিদেশ থেকে রাবার আমদানীর ফলে এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন রাবার বাগান মালিকরা সস্তা দরে শিট বিক্রি করায় দেশীয় উৎপাদিত পন্যের এখন বাজার দর কমে গেছে। এর ফলে রাবার চাষিদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ থাকায় যে কোন সময় উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার বাইশারী সহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও টাংগাইলের মধুপুরে রাবার বাগান রয়েছে। তবে দেশের সব চাইতে বেশী রাবার চাষ রয়েছে পার্বত্য জেলার বান্দরবানের বাইশারীতে। এই বাইশারীকে অনেকেই রাবার শিল্প নগরী হিসাবে খ্যাত বলে মনে করেন। বর্তমানে বান্দরবানের বাইশারীতে আনুমানিক পনের হাজার একরের অধিক পরিমাণ রাবার বাগান রয়েছে ব্যক্তি মালিকানা ও ঘরোয়া বাগান মিলে। উক্ত বাগান গুলোতে শ্রমিক হিসাবে নিয়োজিত রয়েছেন ছয় হাজারের অধিক পরিমাণ লোক। পাশাপাশি শ্রমিকেরা পরিবারবর্গ নিয়ে ভালই দিন কাটছেন। কিন্তু গত ৬ মাস যাবৎ বিদেশী রাবার বাংলাদেশে আমদানীর ফলে রাবারের দাম একেবারেই নিচে নেমে গেছে বলে জানালেন একাধিক বাগান মালিকেরা। বিগত বছর গুলোতে রাবারের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে বাজার দর পতনে প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে। আচমকা দর পতনে রাবার মালিকেরা হতাশ হয়ে পড়েছে বলে জানান। এই অবস্থায় রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের মাসিক বেতন ভাতা পরিশোধ করতে মালিকগণ হিমশিম কাচ্ছে বলে জানালেন আরিফ এন্টার প্রাইজ রাবার বাগান মালিক আলহাজ্ব মোঃ আলা উদ্দিন কোম্পানী।

গতকাল এই প্রতিবেদক সরজমিনে রাবার শিল্প নগরী হিসাবে খ্যাত বাইশারীর বিভিন্ন রাবার বাগান ঘুরে মালিক, শ্রমিক, সুপার ভাইজার ও ব্যবস্থাপকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান অবস্থায় বাজার দর পতনের কারণে উৎপাদিত রাবার বিক্রি করে মাসিক বেতন ভাতা পরিশোধ করার মুশকিল হয়ে পড়েছে। ডিবাইন রাবার গার্ডেন এর সিনিয়র ব্যবস্থাপক রবিউল হাসান এর সাথে দীর্ঘক্ষন আলাপকালে তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, তার বাগানে বর্তমানে নিয়মিত অনিয়মিত মিলে এক শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। বিগত মাসের উৎপাদিত রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ সম্ভব হয় নাই। তিনি আরো বলেন, এই অবস্থায় চলতে থাকলে বাগান মালিকেরা উৎপাদন বন্ধ রাখার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আয়ের চেয়ে ব্যয় এখন বেশী হয়ে পড়েছে। অপর দিকে নাজমা খাতুন রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক আল আমিন বলেন, বর্তমানে উৎপাদিত রাবার পন্যও বিক্রি হচ্ছে না। গত মাসের উৎপাদিত রাবার এখনো গোদামে মওজুদ রয়েছে। দিন দিন ব্যবসায়ীরাও মূখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয়দের দাবী রাবার সেক্টর বন্ধ হলে শ্রমিকদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করছেন স্থানীয়রা। একাধিক ব্যবসায়ীদের দাবী দেশীয় পন্যের বাজার জাত করে দেশ ও শ্রমিকদের বাঁচানো। সচেতন মহলের দাবী রাবার সেক্টরের প্রতি সরকারের নজর দিয়ে রাবারের দাম বাড়ানো।

অপরদিকে একাধিক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, একটি মহল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশীয় পন্যকে ধংশের মূখে ঠেলে দিয়ে বিদেশী পন্য আমদানী করে বাজার সয়লাভ করেছেন। অথচ রাবারের দর পতন হলেও রাবার থেকে উৎপাদিত পন্য সামগ্রীর কোন ধরণের দাম কমে নাই। বাজারে বর্তমানে রাবার থেকে উৎপাদিত পন্যের দাম এখনো চড়া। কিন্তু রাবারের দাম কেন এত নি¤েœ তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনে প্রশ্ন জেগেছে। তাই দেশীয় শিল্পকে বাঁচানোর জন্য রাবার বাগান মালিকেরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।