বর্বর নির্যাতনের শিকার আয়াত উল্লাহর খোঁজ নিলেন সদর ইউএনও, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ

প্রকাশ: ৮ জানুয়ারী, ২০১৮ ০৩:০৩ , আপডেট: ৮ জানুয়ারী, ২০১৮ ০৩:০৯

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


নির্যাতনের শিকার আয়াত উল্লাহর বাড়ীতে গিয়ে তার শারীরিক খোঁজ খবর ইউএনও নোমান হোসেন।

ইমাম খাইর, সিবিএন
কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ায় শিক্ষক নামধারী লোকদের হাতে করুণ নির্যাতনের শিকার আয়াত উল্লাহর পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন।
সোমবার (৮ জানুয়ারী) দুপুরে তিনি খরুলিয়া ঘাটপাড়াস্থ বাড়ীতে যান। ইউএনও নিজেই আহত আয়াত উল্লাহর চিকিৎসার খোঁজ নেন। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এ্যাকাডেমিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন।
এরপর খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে কথা বলেন প্রধান অভিযুক্ত শিক্ষক মাস্টার জহিরুল হক ও মাস্টার বোরহান উদ্দিনের সাথে।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সোলতান, ইউপ সদস্য শরীফ উদ্দিনসহ স্থানীয় গন্যমাণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাওয়ার অপরাধে আয়াত উল্লাহ নামক অভিভাবকের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠে স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। রবিবার (৭ জানুয়ারী) সকাল ১০টায় স্কুল মাঠে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে পুরো এলাকায়। তোলপাড় হয় বিভিন্ন গণমাধ্যম। নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ঘটনার শিকার আয়াত উল্লাহ খরুলিয়া ঘাটপাড়া এলাকার মাওলানা কবির আহমদের ছেলে। তিনি পেশায় চিত্রশিল্পী।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া জানান, ঘটনার পরপরই অভিযান চালানো হয়েছে। সবাই পালিয়ে গেছে। কাউকে পাওয়া যায়নি। ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, আয়াত উল্লাহর ছেলে শাহরিয়ার নাফিস আবির খরুলিয়া কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র। প্রথম শ্রেনীতে ছেলে কেন এ প্লাস পায়নি? তা জানতে রবিবার সকালে স্কুলে যায় আয়াত উল্লাহ। পূর্বঘোষণা ছাড়াই ভর্তি ও মাসিক কেন বাড়িয়েছে? তাও জিজ্ঞেস করে অভিভাবক আয়াত উল্লাহ। এ নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাস্টার বোরহান উদ্দিনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময়ে পার্শ্ববর্তী খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হককে ডাক দেয় বোরহান। স্কুল আঙ্গিনায় শুরু হয় ত্রি-মুখি তর্ক বিতর্ক। ঘটনাটি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। এ সময় আয়াত উল্লাহ ছিল সম্পূর্ণ একা।
মাস্টার জহিরুল হক আয়াত উল্লাহকে প্রশ্ন করে, কেন এসব জানতে চাচ্ছ? এতসব জানার তোমার কি দরকার? প্রশ্ন করে ধাক্কা দেয়। বোরহান উদ্দিনও মারে আরেক ধাক্কা। মাটিতে পড়ে যায় অসহায় অভিভাবক আয়াত উল্লাহ। এরপর রশি দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়। মারধর করতে থাকে দুই শিক্ষকসহ তাদের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী। আয়াত উল্লাহকে লাথি ও থুথু মারে শিক্ষক জহিরুল হক ও বোরহান উদ্দিন। ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। এ যেন আরেক নব্য জাহেলিয়াত!
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আয়াত উল্লাহকে এমনভাবে মারা হচ্ছে যেন সে একজন দাগি আসামী, চোর বা বড় সন্ত্রাসী। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করা হলেও কোন শিক্ষক বা ছাত্রছাত্রী তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়নি। সবাই দর্শকের ভূমিকায় ছিল। পরে শুর চিৎকার শুনে স্কুলের আঙ্গিনায় গিয়ে পৌঁছে পথচারীরা। শিক্ষক-ছাত্রদের পায়ের নীচ থেকে তাকে উদ্ধার করে। শিক্ষক নামধারী ওই নরপশুদের ধিক্কার জানিয়েছে এলাকাবাসী।
ঘটনার বিষয়ে আয়াত উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই স্কুলে প্রায় সময় অনিয়ম করা হয়। কিছু দিন আগে কোন ধরণের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ করা হয় খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। কেজি স্কুলে নানা অনিয়ম রয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনিয়ম করে অনেক শিক্ষক। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে।
তিনি বলেন, আমার ছেলের কাঙ্খিত ফলাফল কেন হয়নি? কোন যুক্তিতে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে? জানতে চাওয়ায় আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। দুই শিক্ষকই এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে। মাস্টার জহিরুল হক, মাস্টার নজিবুল্লাহ, নুরুল হকসহ আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক আমার উপর নির্যাতনে সরাসরি জড়িত।
কেন এমন ঘটনা সৃষ্টি করা হয়েছে? জানতে চাওয়া হয় খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের কাছে। তিনি বলেন, আয়াত উল্লাহ আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিল। বেয়াদবি করায় তাকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে। এমনকি আর কোন দিন ‘বেয়াদবি করবেনা’ মর্মে মুছলেকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তবে, একজন শিক্ষক হিসেবে হাত-পা বেঁধে মারধর করা উচিৎ হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সঙ্গে নিজেকে জড়িত নয় বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি ক্ষুব্ধ লোকজন ঘটিয়েছে।
অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের মুঠোফোনে (০১৮৫১২৩৫৯৫০) কল করলে ওপার থেকে নিজেকে বোরহান উদ্দিন নয় দাবী করে বলেন, ভর্তি ফি-মাসিক ফি ইত্যাদি বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মতে হয়। আমাদের কাছে জানতে চাওয়ায় আয়াত উল্লাহকে কমিটির কাছে যেতে বলা হয়। তাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে যান…এতটুকু উত্তর দিয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। নিজের সঠিক পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওই উত্তরদাতা।
কিছুক্ষণ পরে একই ব্যক্তি কল করে বলেন, ০১৮৩৪০৯৫৩৯০ এটি বোরহান স্যারের নাম্বার। কল দিলে বিস্তারিত জানবেন। কিন্তু ওই নাম্বারে ফোন করেও কোন সাড়া মেলেনি।
আয়াত উল্লাহকে যারা মারধর করছে সেখানে লুঙ্গিপরা এরা কারা? জিজ্ঞেস করলে এগুলো স্কুলের হোস্টেলের ছাত্র বলে উত্তর দেন।