সিয়াম মাহমুদ সোহেল:
অকুতোভয় এক সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ছাত্রসংগঠনটি। বর্তমান এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রতিটি সবুজ ক্যাম্পাসে প্রত্যেক ছাত্রের ন্যায্য অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যে সংগঠনটির সংবিধানে প্রতিটিঅক্ষরে স্পষ্ট বলিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুশৃঙ্খল রাখা, ছাত্রদের অধিকার আদায়, হতদরিদ্র ছাত্রদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের আবাস স্থল নিশ্চিতকরন ইত্যাদি সম্মেলিত আন্দোলনে গঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশ ও ছাত্রলীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছাত্রলীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ চিন্তা করা দুষ্কর।ছাত্রলীগের ইতিহাস মানে এক নব দিগন্তের ইতিহাস। ছাত্রলীগের ইতিহাস মানে ৫২ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। ছাত্রলীগের ইতিহাস মানে ৬২ শিক্ষা কমিশন, ৬৬ ছয় দফা ৬৮ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন এবং ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। ছাত্রলীগের ইতিহাস মানে ১৯৭১ সালের এক গৌরবের ইতিহাস। সেই ১৯৪৮ সালে ৪ঠা জানুয়ারী সৃষ্টিলগ্ন থেকে আজো পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে প্রথম সারিতে গিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে ছাত্রলীগ। যেখানে ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে হত দরিদ্রের অধিকার নিয়ে কথা বলছে ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন দিয়ে জাতির জনক ছয় দফা আন্দোলন সফল করেছিলেন। ছাত্রলীগের মাধ্যমেই বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছয় দফা বা বাংলার মুক্তির সনদ পৌছে দিয়েছেন। যখন ১৯৬৯ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারী আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় ভুলক্রমে বঙ্গবন্ধু’র স্থলে সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়েছিল তখন বাংলার ছাত্রলীগ রাজপথে মিছিল করে রাজপথ উত্তাল করে রেখেছিল। ছাত্রলীগ রাজপথ কাঁপিয়ে সচিবালয় আক্রমণ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া না দিলে রাজপথ হবে রক্তেরঞ্চিত। নীরব ভূমিকা পালনের পর হঠাৎ বঙ্গবন্ধু’র মুক্তি দাবিতে মাঠে নেমে পড়েন মওলানা ভাসানি। ১৯৬৯সালে ১৭ ফেব্রুয়ারী ছাত্র আন্দোলনের মাঝে ভাসানি বলেন শেখ মুজিবকে যেকোন মূল্যে জেল থেকে বের করতেই হবে। যদি আমাদের দাবি না মানে তাহলে জেলে তালা ভেঙ্গে শেখ মুজিবকে বের করে আনব। ভাসানির এই বক্তব্যে তৎকালীন ছাত্রলীগ শ্লোগান ধরেছিল
“জেলের তালা ভাঙ্গব
শেখ মুজিবকে আনবো।”
ছাত্রলীগ এবং বাংলার মানুষের তোপের মুখে ১৯৬৯ সালে ২২ ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। সেই তখন থেকে সামরিক শাসক জিয়া পর্যায়ক্রমে এরশারদের পতন ঘটান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে তৎকালীন কিছু ষড়যন্ত্রকারী নির্মমভাবে হত্যা করেন। জাতি হারালো জাতির পিতাকে। বিশ্ব হারালো এক মহান নেতাকে। আর শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনা হারালো তাদের বাবাকে। সেই পিতৃ হারানো মেয়ে দুটোকে দেশের মাটিতে আসতে দেয়নি সামরিক শাসক গোষ্ঠী। জাতির পিতা পায়নি তাঁর সুষ্ঠু বিচার। যার ডাকে ৭ কোটি বাঙালি একত্রিত হয়ে এই বাংলা এবং বাংলাদেশ নামক স্থান স্থাপন করেন বিশ্ব মানচিত্রে। যার ভাষণ নিয়ে বাঙালি গর্ববোধ করেন, যার মুক্তি লাভের জন্য পাখির মত মানুষ হত্যা হওয়ার পরও মুক্তি ছিনিয়ে এনেছিলেন, যার মুখের বলা “জয় বাংলা” নামে এই বাংলাদেশকে চিনতো সেই বঙ্গবন্ধু’র সুযোগ্য দুই কন্যাকে এই বাংলার মাটিতে প্রবেশ করতে দেয়নি বহুবছর। ছাত্রলীগের হাত ধরেই মুজিব কন্যা এই বাংলার মাটিতে প্রবেশ করেন। স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জননেত্রীর সাথে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এরপর ধর্ম ব্যবসায়ী বিরোধী এই বাংলার মাটিতে দূর্বার আন্দোলন অতীতের ন্যায় বর্তমানেও চলমান। যেখানে বঙ্গবন্ধুর চেতনা বিকশিত হতে বাঁধা সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দূর্বার আন্দোলন করে। যেখানে স্বাধীনতা বিরোধীর নামে কোন স্থান নাম করন হয় সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা দূর্বার গতিতে তা প্রতিরোধ করে।
ছাত্রলীগকে বলা হয় ভবিষ্যৎ আওয়ামীলীগ। যার উপর অগাধ বিশ্বাস আর নির্ভর করে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ অংশগ্রহন করে। ছাত্রলীগের হাত ধরেই মন্ত্রী-এমপি হয়। ছাত্রলীগের উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করে। ইতিহাস সাক্ষী দেয় ১৯৭১ সালে স্বাধীকার আন্দোলনে প্রায় ১৮ হাজার ছাত্রনেতা শহীদ হয়। ছাত্রলীগের ১১ দফার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর ৬ দফা বাস্তবায়িত হয়। ছাত্রলীগ নামটি বাংলাদেশ ইতিহাসে ক্যালেন্ডারে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন শেখ মুজিবকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করে।
দুঃখের সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে দেখি ছাত্রলীগের বিপক্ষে বললে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া যায়। কোন প্রোগামে ছাত্রলীগের বিপক্ষে না বললে হর্ষধ্বনি পাওয়া যায়না। মন্ত্রী-এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যবহার করে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে। যখন স্বার্থ পূর্ণ হয়ে যাবে তখন ঐসব ছাত্রনেতাদের সন্ত্রসী বলে আখ্যা দেয়। একজন ছাত্রলীগ নেতা খুন হলে খবরের কাগজের ভিতের ছোট্ট করে শিরোনাম হয়। কিন্তু ভুলক্রমে অথবা একদিনও ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে তার হাতে কেউ খুন হলে খবরে কাগজে প্রথম শিরোনাম হয়। ছাত্রলীগ শ্লোগান না দিলে মন্ত্রী এমপিরা মিছিল করে মজা পাইনা। আওয়ামীলীগ কোন আন্দোলনে উদ্যোগ নিলে সবটা ছাত্রলীগকে ঘিড়ে নেওয়া হয়।কারন ছাত্রলীগ যভাবে স্লোগান ও সামনে এগিয়ে যায় তা আওয়ামীলীগের পক্ষে সম্ভব হয়না। ছাত্রলীগ কোন অর্গানাইজ না করলে আওয়ামীলীগ কোন প্রোগ্রাম সফল করতে পারেনা। বড় বড় নেতারা যখন বক্তব্য দেয় তখন ছাত্রলীগ শ্লোগান না দিলে বক্তব্যে মজা পাইনা। কোন নির্বাচনী এজান্ডায় ছাত্রলীগের বিকল্প কোন কিছু খুঁজে পাইনা। উপরস্থ নেতাদের নির্দেশে যখন ছাত্রলীগ কাজ করতে গিয়ে খবরে শিরোনাম হয় তখন কর্মী পরিচয় দিতে অস্বিকৃতি জানাই। সে বিত্রুপের কারনে আজ সাধারন মানুষের কাছে ছাত্রলীগ মানে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ নামে পরিচিত।
সব দূয়াসা দূর করে ছাত্রলীগ এগিয়ে যাচ্ছে যাবে।কারন সংগ্রামের অপর নাম ছাত্রলীগ।