হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:
সেন্টমার্টিনদ্বীপে টেকনাফ সংবাদিক ইউনিটির যৌথ আলোচনা সভায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে বক্তাগণ সরকার প্রধানের প্রতি জোরালো দাবী তুলেছেন। সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে এ যৌথ আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। দ্বীপে টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির ২ দিনের (২ ও ৩ জানুয়ারী) বিভিন্ন কর্মসুচীর অন্যতম ছিল সেন্টমার্টিনদ্বীপের সার্বিক বিষয় নিয়ে যৌথ আলোচনা সভা। দ্বীপে বার্ষিক বনভোজন, আনন্দ ভ্রমণ ও শীতবস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি গুরুত্ব অনুধাবন করে যৌথ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। স্বল্প পরিসরে এবং স্বল্প সময়ের আহ্বানে হলেও আলোচনায় দ্বীপের মুল বিষয়গুলো চিহ্নিত করে স্থান পায়।
টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম সাইফীর উপস্থাপনায় অনুষ্টিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টমার্টিনদ্বীপ বিএন ইসলামিক হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বাবু উজ্জল ভৌমিক, পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর মোঃ ইয়াকুব। বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য মোঃ হাবিব উল্লাহ প্রকাশ হাবিব খান, আবদুর রব, আবু বকর ছিদ্দিক, নজরুল ইসলাম, দৈনিক প্রথম আলোর গিয়াস উদ্দিন, দৈনিক সমকালের আবদুর রহমান, টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির সেক্রেটারী নুরুল হোসেন, দৈনিক পূর্বকোণের হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান ও সেন্টমার্টিনদ্বীপ বিএন ইসলামিক হাইস্কুল এন্ড কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি আলহাজ্ব নুর আহমদ বলেন ‘দ্বীপ বাঁচলেই সব কিছু। দেশের সরকার প্রধাণের কাছে দ্বীপবাসীর পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম এবং একমাত্র দাবি হচ্ছে আগে দ্বীপকে বাঁচান। দ্বীপের অস্তিত্ব না থাকলে উন্নয়ন কোথায় করব। দ্বীপের চতুর্দিকেই ভাঙ্গণ ধরেছে। তম্মধ্যে উত্তর ও পশ্চিম অংশের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ইতিমধ্যেই শত শত বসতবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। গত ২০ বছরের তুলনায় বর্তমানে দ্বীপের আয়তণ অনেক কমে গেছে। এভাবে অব্যাহত থাকলে হয়ত অদুর ভবিষ্যতে বিশ্বময় সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়া দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। সেন্টমার্টিনদ্বীপে সাড়ে ৮ হাজার বাসিন্দা, ৬ হাজার ৩০৩ জন ভোটার এবং ১ হাজার ৩৫৪টি পরিবার রয়েছে। কিন্ত দ্বীপবাসীর স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নেই। প্রতিদিন এ দ্বীপ দেখার জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটক, শিক্ষার্থী, ভিআইপি আসেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জরুরী পণ্য তো বটেই, টেকনাফ থেকে পানি আনতেও সরকারের অনুমতির জন্য শিকার হতে হয়। দেশের পণ্য দেশের একটি অংশে আনতে প্রশানের অনুমতি লাগে তা দুনিয়ার আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। মাথা গোঁজার ঠাঁই, লেট্রিন, বসবাসের ঘর মেরামত করতে বাধা আসে। আর বহিরাগত ব্যবসায়ীরা বড় বড় হোটেল-মোটেল, কটেজ, বহুতল ভবন করে যাচ্ছে। যত আইন, যত কড়াকড়ি, যত হয়রানী, যত নীতিমাল সবই দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে শান্তিতে জন্মভুমিতে বসবাস করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী সমীপে আমরা এই অসহ্য অবস্থা থেকে উত্তোরণ চাই। দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য চতুর্দিকে বেড়ি বাঁধ অথবা জিও ব্যাগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। সাগরের মাঝখানে ছোট্র একটা দ্বীপ। সাগরের সাথে যুদ্ধ করে ঠিকে আছে দ্বীপের মানুষ। দুর্গম ও সরকারীভাবে সব দিক দিয়ে অবহেলিত এবং সুবিধা বঞ্চিত। জনসংখ্যা অনুপাতে বরাদ্দের কারণে সব সময় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে’।
মেম্বার হাবিব খান বলেন ‘মাত্র ৩টি মাস দেশ-বিদেশের মানুষ সেন্টমার্টিনদ্বীপের কথা মনে রাখে। এরপর সকলেই ভুলে যান। এ পর্যন্ত অনেক আশার বাণী শুনেছি। কিন্ত দ্বীপ ছেড়ে চলে গেলে সকলেই দ্বীপের সমস্যার কথা ভুলে যান। বসন্তের কোকিলের মত মৌসুমী কুহু কুহু করে চলে যায়। দ্বীপের মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে চরমভাবে বঞ্চিত। আমরা দ্বীপের পরিকল্পিত উন্নয়ন চাই। সেন্টমার্টিনে ১০ শয্যার বিশাল ভবনের হাসপাতাল আছে। চালু হয়নি। মৌলিক অধিকারের অন্যতম চিকিৎসা সুবিধার জন্য আমরা ১০ শয্যার হাসপাতাল চালু করার জোর দাবি করছি। দ্বীপের একমাত্র জেটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে আয়ের কোন উৎস নেই। দ্বীপের একমাত্র সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১ জন শিক্ষক। দ্বীপে এমবিবিএস ডাক্তার অবস্থান করতে পারলে শিক্ষক কেন তদবির করে বদলী হয়ে যান। এটা খুবই দুঃখজনক’।
সেন্টমার্টিনদ্বীপ বিএন ইসলামিক হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বাবু উজ্জল ভৌমিক, বলেন ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা-ঔষধ দেব কোথা। দ্বীপের মানুষ গরীব। একজন জেএসসি পরিক্ষার্থীকে টেকনাফে গিয়ে হোটেলে অবস্থান করে পরিক্ষা দিতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। দ্বীপে জেএসসি পরিক্ষা কেন্দ্র চালু করার জন্য এলাকার এমপির সুপারিশসহ যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছে। কিন্ত কোন ফলোদয় হয়নি। মাঝখানে বাধাগ্রস্থ হওয়ার কারণে দ্বীপে শিক্ষার উন্নয়ন হচ্ছেনা। স্কুল ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পর্যাপ্ত আসবাবপত্র নেই’।
মেম্বার আবদুর রব বলেন ‘দ্বীপে বঙ্গবন্দু সড়কটি অতি গুরুত্বপুর্ণ। কিন্ত তা সামান্য অংশ করে বরাদ্দের অভাবে কাজ বন্দ রয়েছে। সড়কটি দ্বীপের সর্ব দক্ষিণ পর্যন্ত নির্মাণ করা হলে দেশী-বিদেশী পর্যটক, শিক্ষার্থী, ভিআইপি স্বল্প সময়ে ছেড়াদিয়াসহ দ্বীপের সর্বত্র ঘুরে দেখার সুযোগ পাবে’।
পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর মোঃ ইয়াকুব সেন্টমার্টিনদ্বীপের সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির প্রধান উপদেষ্টা হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম। দ্বীপে টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির ২ দিনের কর্মসুচীর মধ্যে আলোচনা সভা, দুঃস্থ ও হেফজখানার শিক্ষার্থীদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ ছাড়াও র্যাফেল ড্র, বিনোদনমুলক বিভিন্ন কর্মকান্ড, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময়, সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ বিষয়ে ইনহাউজ সিদ্ধান্ত ছিল উল্লেখযোগ্য। এতে উপদেষ্টা জেড করিম জিয়া, সহ-সভাপতি ছৈয়দুল আমিন চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম মাহমুদ, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ মামুন, সদস্য যথাক্রমে এটিএন ফায়সাল, এম আমান উল্লাহ আমান, আবুল আলী, নুর হাকিম আনোয়ার, নুরতাজুল মোস্তফা শাহিনশাহ, মোঃ রাশেদুল করিম, জাহাঙ্গীর আলম, হারুন সিকদার, শাহ মিসবাহুল হক চৌধুরী বাবলা, আবদুল কাইয়ুম, আমান ওয়াহিদ, নুর মোহাম্মদ, জয়নাল আবেদীন, রহিম উল্লাহ, কেফায়ত উল্লাহ খান উপস্থিত ছিলেন। ##
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।