সিবিএন ডেস্ক:
সমগ্র জেরুজালেমে পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় পার্লামেন্টে একটি আইন পাস করেছে ইসরায়েলি আইনপ্রণেতারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত ‍দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নেসেটের (ইসরায়েলি পার্লামেন্ট) অনুমোদন পাওয়া ওই আইন অনুযায়ী জেরুজালেমের কোন অংশের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি রাষ্ট্রের আওতায় ছেড়ে দিতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন দরকার পড়বে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং ইসরায়েলভিত্তিক হারৎস-এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিমুক্ত করে পবিত্র ওই শহরের ওপর পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই বিলটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

৬ ডিসেম্বর বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি। এই নিয়ে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বজুড়ে তুমুল নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও পূর্ব জেরুজালেমের একাংশকে তাদের ভবিষ্যত স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চায়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়,ওই দাবিকে কঠিন করে তুলতেই এই বিল পাস করা হয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী জোটের প্রস্তাবিত বিলটি ৬৪ ভোট নিয়ে পাস হয়। প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেন ৫২ জন আইন প্রণেতা।

১৯৬৭ সালে জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে তারা জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার বৈধতা দেয়নি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি নেতারা দাবি করে আসছেন পূর্ব জেরুজালেম তাদের রাজধানী হবে। তবে ইসরায়েল শহরটি বিভক্ত করা বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে। জেরুজালেমের বেশিরভাগ ফিলিস্তিনির স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা থাকলেও ইসরায়েলি নাগরিকত্ব নেই। বিভিন্ন কারণে যেকোনও সময় তাদের সেখান থেকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর জানিয়েছে, ১৯৬৭ সালে জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েল প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দার অনুমোদন বাতিল করেছে।

পার্লামেন্টে বিলটির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা ইসাবি ফ্রেইজ বলেন, ‘নতুন জেরুজালেম আইন একটি প্রতিযোগিতা আইন। জেরুজালেম থেকে আরব বাসিন্দাদের নির্মূল করার জন্যই এই আইন।’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকার জেরুজালেমের মধ্য দিয়ে দেওয়াল নির্মাণের পর এবার শহরটির এক লাখ বাসিন্দাকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।’

বহুমুখী চাপ ও প্রতিবাদের মুখেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের রাজধানীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে জেরুজালেম সবার মনযোগের কেন্দ্রে রয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। এরপর জেরুজালেম বিষয়ে যেকোনও সিদ্ধান্ত অকার্যকর ঘোষণা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও প্রস্তাব পাস করা হয়।