মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন:
আর কয়েক ঘন্টা পরেই নতুন বছরের সূর্য উদিত হবে। রাঙ্গা একটি ভোর। প্রতিদিনকার মতোই পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠবে সূর্য নামক গ্রহের রক্তিম আভায়। ২০১৭ সালে ৫ম ও ৮ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকলের জন্য শুভকামনা। জীবনের প্রথম বড় পরিসরে নিজেদের শেখন যোগ্যতা যারা অর্জন করলো। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন শেখন যোগ্যতার সাথে পরিচয় ঘটবে। কৈশোরকালীন সময়ে মনো-সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমেই শেখন যোগ্যতাগুলো অর্জন করবে এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম। সেটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
বাঙ্গালির জাতীয় জীবনে অন্যান্য বছরের মতোই ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক দাগ কেটে গেলো। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসের পরতে পরতে। ভৌগলিকভাবে ক্ষুদ্র আয়তনের একটি দেশ বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্রে আয়তনিকভাবে ছোট হলেও আমাদের রয়েছে সাগরের মহীসোপান। প্রকৃতি নানা সময়ে, নানা রূপে আবির্ভাবের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যক্তি হৃদয় ও অনেক বড় মাপের তা বিশ্ব সভায় আজ শুধুমাত্র প্রশংসার দাবী রাখে না অনেক ক্ষেত্রে সর্বজন স্বীকৃত। বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতির কারণে অনেক দেশের কাছে অনুকরনীয় হয়ে উঠেছে। আমরা এমন এক জাতি যে জাতি পৃথিবীর বুকে নিজের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে সঠিক সময়ে নিজের বুক মেলে ধরে সকল অন্যায় এবং অসত্যের বিরুদ্ধে। ভাষার প্রশ্নে পৃথিবীর আর কোন জাতির সূর্য সন্তানকে জীবন যেমন দিতে হয়নি তেমনি স্বাধীনতা পরবর্তী গণতন্ত্র রক্ষায় এবং সকল ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চা বজায় রাখার জন্য ও এ দেশের সন্তানরা নিজের বুকে ধারণ করেছে তরতাজা বুলেট। ২০১৮ সাল জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের মাধ্যমে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা চলমান রেখে গণতন্ত্রকে সুসংগঠিত করার বছর। সকলের উৎসব মুখর অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে যাঁরা দেশকে নিয়ে যাবেন সম্পূর্ণ স্বাবলম্বিতার দিকে। এই আশা বছরের প্রথম দিন থেকেই।
পর্যটন রাজধানীখ্যাত দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জন্য সারা বছরব্যাপী শুধু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এবং তার আপামর জনসাধারণের কাছেই নয়; পুরো পৃথিবীর বুকে সকলের কাছে পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজার জেলার সুনাম ও ঐতিহ্য রয়েছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন যেমন ঐতিহ্যময়; তেমনি সাগর, নদী ও পাহাড় ঘেরা মহেশখালীর গুরুত্বও সবার কাছে আলাদা আর সীমান্ত এলাকা হিসেবে টেকনাফ এবং উখিয়া তো দীর্ঘদিন ধরেই সবার কাছে পরিচিত।
সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমারের আরকান রাজ্যে সে দেশের সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনীর দমন পীড়নের মাধ্যমে কতো সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে তার যেমন সঠিক সংখ্যা কারো কাছে নেই। তেমনি এই সভ্য বসুন্ধরায় একটি দেশ, দেশের সরকার তার নাগরিকদের উপর কত নৃশংস হতে পারে। তা মনে পড়লেই গা শিউরে উঠে। বহু যুগ ধরে পৃথিবীর যাবতীয় আলোয় নিজেদের আত্ম পরিচয়ের সংকটে পড়া নিপীড়নের স্বীকার মায়ানমারের নাগরীকদের বড় একটি অংশ। যাদেরকে আমরা রোহিংগা হিসেবে জানি। মানবতার তাগিদে তাদের আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি। মানবতার সেবার অনন্য এইউদাহরণ সমসাময়িক বিশে^ দেখা যায়না বললেই চলে।
বর্তমান কালকে বৈশি^ক কাল হিসেবে গণ্য করেই বলবো, বৈশ্বিক এই কালে নাগরিকদেরর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহসী এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার মানুষ । পূর্ব থেকেই মায়ানমার নাগরিকদের একটি চাপ বাংলাদেশ নামক ক্ষুদ্র ভ’-খন্ডে আছে। ২০১৭ সালে প্রবেশ করেছে আরো অন্তত ১০ লাখ। আমাদের দেশে বসবাসরত মায়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার জেলার মানুষ যেমন ২৪ ঘন্টা তাদের আর্থ-সামাজিক বলয়ে কতোটা ঋনাতœক প্রভাব ধারন করছে। তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সাম্প্রতিক সময়ে বড় একটি অংশ এসে আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটে আরো ঋনাতœক করে তুলেছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। অভিবাদন বাংলাদেশের সকল বাহিনীর প্রতি। বিশেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি। জেলা প্রসাশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা এবং কোটি মানুষের প্রার্থনার মাধ্যমে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত মায়ানমারের নাগরিকরা আমাদের এই দেশটিতে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছে। আমরা জাতী হিসেবে গর্বিত সকলের একান্ত প্রচেষ্টা আর নিরলস শ্রমের মাধ্যমে গণতন্ত্রের আড়ালে থাকা মায়ানমারের বর্বর সামরিক জান্তার হত্যাযজ্ঞা থেকে অন্তত মানুষগুলোকে অন্তত বাঁচানো গেলে। রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের ‘সহানুভূতি’ এর চেয়ে বেশি কাজ করেছে ‘সহমর্মিতা’। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে ছিলাম। ফলে আমরা বুঝি নির্যাতিতের যন্ত্রণা। আর মায়ানমারের জোরপূর্বক স্থানচ্যূত/বাস্তুচ্যূত নাগরিক যারা সমসাময়িক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছে তারা সকলে ফিরে যাবে তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটি নিজেদের জন্মস্থান মায়ানমারের মাটিতে এই প্রার্থনা সবসময়ের। মনো-সামাজিক বিকাশের মাধ্যমে তৈরি হোক সুন্দর আগামী, সকলের জন্য বয়ে আনুক অনাবিল সুখ আর সমৃদ্ধি নতুন বছরে এই আমাদেরও প্রার্থনা। সহানুভূতি দিয়ে নয়; সহমর্মিতায় শুরু হোক ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ।

লেখক, উন্নয়ন কর্মী
anwarbarnaly@gmail.com