শাহেদ মিজান, সিবিএন:
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো ২০১৭সাল। আর মাত্র একটি সূর্যোদয় আর দুটি সূর্যাস্তই বাকী রইল। আগামীকাল বর্ষের শেষ দিন। এই দিনটি বিশ্বের জন্য বিশেষ উপলক্ষ্য। বিশেষ সম্ভাষণে বললে হয় ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’। বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের প্রাক্কালই ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’। এই ক্ষণটি উদযাপনের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস চলছে হয়তো! তারই অংশ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের ‘রাজ্য’ কক্সবাজারেও ব্যাপক উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। দেশের পর্যটন রাজধানীতে এই উৎসব উদযাপন করতে এরই মধ্যে ছুটে এসেছে বিপুল পর্যটক। আজ রাতের মধ্যে পর্যটকে কানায় ভরে উঠবে সৌন্দর্য্যের রাণী কক্সবাজার। তাই কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরাও নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’কে ঘিরে কক্সবাজারে বিপুল পর্যটক সমাগম হবে। বর্ষবিদায়ের এই সপ্তাহজুড়ে পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে চলে এসেছেন। আজকের মধ্যে আরো অনেক পর্যটক কক্সবাজারে পদার্পণ করবেন। পর্যটক বরণে হোটেল-মোটেলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে রেখেছে। ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উপলক্ষ্যে সব বড় হোটেলে নানা ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে। একই ভাবে আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। তবে সবচেয়ে কথা হলো, বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে গোধূলী লগ্নে সমুদ্র সৈকতজুড়ে নামবে মানুষের কোলাহল।

তথ্য মতে, ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। এসব পর্যটকেরা কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পর্যটকদের বড় আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। পর্যটনে রাতের শহরে এবারও বাড়তি আনন্দ হয়ে যোগ হয়েছে এই মেলা। ট্রেন-নৌকা রাইড, শিশু গেমসহ শতাধিক স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে মেলায়। দিনে পর্যটন স্পট আর রাতে ও মেলায় প্রাণচঞ্চল সময় পার করছেন পর্যটকরা।

সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে মানুষ আর মানুষ। আবাল বৃদ্ধ-বণিতার ভীড়ে সৈকতে হাঁটাও দুষ্কর। বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যে কেউ কেউ সৈকতে হাঁটছেন, কেউবা চেয়ারে বসে গল্পের ফাঁকে সাগরে মিষ্টি হাওয়া উপভোগ করছেন। আবার কেউ কেউ শীতের মাঝেও সাগরে গোসলে মত্ত। অনেকেই বীচ ও ওয়াটার বাইকে চড়ে উপভোগ করছেন ঢেউয়ের নাচন।
কলাতলীর স্বপ্নালয়’র হোটেলের ব্যবস্থাপক কুতুব উদ্দীনের মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ও প্রকৃতি অনুকূল থাকায় এবারের মৌসুমটা ভালই কাটছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। সব বয়সের মানুষ বেড়াতে আসছেন কক্সবাজারে। ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক অবস্থানের আশা করা হচ্ছে।’

কলাতলী গেস্ট হাউস এলাকার স্বপ্নবিলাস সুইটস এর পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, ‘বিজয় দিবসের ছুটির পর থেকে শহর ও সাগরপাড়ের সকল হোটেলের প্রায় সমস্ত কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে যায়। চলতি সপ্তাহে শহরের অনেক হোটেল পূর্ণ বুকিং হয়ে আছে। যেসব গেস্ট হাউস আগাম বুকিং হয়নি তারাও ওয়াকিং গেস্ট নিয়ে ভালোই ব্যবসা করছেন। ভ্রমণ পিপাসুরা সমান তালে সেন্টমার্টিন দ্বীপেও ঘুরতে যাচ্ছেন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারি রেস্ট হাউসে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। গত কিছুদিন ধরে বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ ঘিরে আরো পর্যটক বাড়ছে।’

তবে অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজারে পর্যটকদের ভীড়কে পুঁজি করে এক শ্রেণির হোটেল মালিক ও কক্ষ দালাল গলাকাটা ব্যবসা করছে। কিছু কিছু হোটেলে ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা না থাকায় আসল ভাড়ার ৩-৪ গুণ হারে ভাড়া নিচ্ছে ওয়াকিং পর্যটকদের কাছ থেকে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা দেয়া আছে। পূর্বের সময়ের চেয়েও পর্যটক সেবার প্রতি বাড়তি নজর দিচ্ছে প্রশাসন। সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পর্যটন এলাকায় টহলে রয়েছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এইচএম রায়হান কাজেমী জানান, পর্যটক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সতর্ক রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটন স্পটসমূহে নিয়মের চেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সৈকতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে পর্যটকদের রাতদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা বিধান করছে পুলিশ।