দ্য গার্ডিয়ান:

জাতিসংঘ কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার সময় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি দেশটির সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের বিষয়টি ‘এড়িয়ে’ গেছেন।

সংঘাতকালীন যৌন সহিংসতা-বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেন এ মাসের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারে চার দিনের সফরে গিয়ে সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করলেও সু চি তা এড়িয়ে যান।

সফর নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে লেখা চিঠিতে প্রমিলা বলেন, সু চির সঙ্গে তাঁর ৪৫ মিনিট বৈঠক হয়েছে। এটি বেশ আন্তরিক হলেও ফলপ্রসূ ছিল না। কোনো ফলপ্রসূ আলোচনায় আগ্রহী ছিলেন না সু চি।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে গত বছরের অক্টোবর থেকে পরের মাসগুলোতে এসেছে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা নারী অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বর্ডার পুলিশের সদস্য এবং রাখাইনের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মিলিশিয়ারা ব্যাপক হারে ধর্ষণ করেছে।

বৈঠকে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি সু চি। তিনি প্রমিলাকে বলেন, ‘আপনি সফরের সময়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা উপভোগ করবেন।’

আর দেশটির সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা প্রমিলার কাছে দাবি করেন, সহিংসতার যে খবর প্রকাশ পেয়েছে তা মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অসত্য ও অতিরঞ্জিত প্রচারণা।

মহাসচিবের কাছে চিঠিতে প্রমীলা লেখেন, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, যারা পালিয়ে গেছে, তারা মূলত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্যই তারা পালিয়েছে।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিপক্ষে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনেছে। তবে সেনাবাহিনী দাবি করেছে, অভ্যন্তরীণ তদন্তে তারা এ ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি।

সফরের সময় অভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আয়ে উইনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রমীলা। তিনি তদন্তের পদ্ধতিগত বিষয়ে জানতে চান। এ বিষয়ে তিনি চিঠিতে বলেন, সামরিক কর্মকর্তারা উর্দি পরিহিত অবস্থায় বেসামরিক নাগরিকদের দলগতভাবে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করেছে। আর তাদের বক্তব্য ক্যামেরায় ধারণ করার পর সহযোগিতার নিদর্শনস্বরূপ রেশন দেওয়া হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে চাপ প্রয়োগ করে। প্রায় ৮০০ সাক্ষাৎকারে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যৌন বা অন্য কোনো ধরনের সহিংসতার তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক স্কাই হুইলার যৌন হয়রানির বিষয় নিয়ে তদন্ত করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার ‘ভয়াবহ সত্য’ অস্বীকার করছে।

মিয়ানমার ‘মর্মাহত’

রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মং মং সোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ‘মর্মাহত’ হয়েছে দেশটি। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির একজন মুখপাত্র গত মঙ্গলবার রাতে টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা প্রমাণ ছাড়া অনির্ভরযোগ্য অভিযোগের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা মর্মাহত হয়েছি।’