জাহাঙ্গীর আলম:
সুন্দর সম্পর্ক ও আচরণ দিয়ে বিশ্ব জয় করা সম্ভব। তবে আমি বলছি ইতিবাচক সম্পর্কের কথা। সকল সম্পর্ক গুলোতে এখন কৃত্রিমতা প্রবেশ করছে। প্রতিটি মানুষ যেন এক একটি রোবট হয়ে ওঠছে। জীবিকার তাগিদে সবাই যেন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত এবং সেটাই ঠিক। ভাই এর সাথে ভাই এর সম্পর্ক,পিতার সাথে পুত্রের সম্পর্ক,ছেলের সাথে মার সম্পর্ক,ভাই এর সাথে বোনের সম্পর্ক সবগুলো সম্পর্কতে এখন ফাটঁল দেখা যাচ্ছে। সম্পর্ক গুলোতে এখন আর পারস্পরিক সম্মানবোধ নেই। সামান্য কারন এবং সামান্য স্বার্থের কারনে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভেঙ্গে যাচ্ছে। ইগু আমাদেরকে গ্রাস করে ফেলছে দিন দিন। সে আমাকে আগে ফোন করেনি আমি কেন ফোন করব? সে আগে আমার বাসায় আসেনি, আমি কেন তার বাসায় যাব?,
সে আমাকে দাওয়াত দেয়নি, আমি কেন তাকে দাওয়াত করব? সে বেশী টাকা বেতন পায়। সে আমাকে ফোন করবে। আমি কেন তাকে ফোন করব? সে আমার ফেসবুকে লাইক দেয়না? আমি কেন তাকে লাইক দিব ?
এসমস্ত ছোট ছোট ইগুটিক কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার সুন্দর সম্পর্ক ভেঙ্গেঁ যাচ্ছে। কারও উপকার করেছেন। উপকার হলেই তো ভাল। যদি বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়, তাহলে সম্পর্ক শেষ। একটি সম্পর্কের অবসানের সাথে সাথে আরো কিছু মানুষ হারিয়ে যায়।
একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরী করতে বছরের পর বছর সময় লাগে একটির পর একটি পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু সামান্য কারণে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এক মিনিটেই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।একটি ভাল সম্পর্ক তৈরী করে সে সম্পর্কটাকে যারা ঠিকিয়ে রাখতে জানে আসলে তারাই বিশ্বজয়ী মানুষ। সম্পর্কে স্বার্থ থাকতে পারে কিছুটা। কিন্তু স্বার্থটা যেন মুখ্য না হয়। পারস্পরিক সম্মানবোধ না থাকার কারণে সম্পর্ক গুলোতে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। অতিরিক্ত স্বার্থ হাসিলের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্ক নষ্টের অন্যতম কারণ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সম্পর্ককে মজবুত করে।
উপকারের কথা ভূলে না যাওয়া সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অন্যতম কৌশল। জীবনের শুরু থেকে কবরে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত সুন্দর সম্পর্কের কোন বিকল্প নেই। আনুগত্য শব্দটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহন করে থাকে।
আমি ইতিবাচক আনুগত্যের কথা বলছি। যে সম্পর্কের মধ্যে আনুগত্যতা নেই সে সম্পর্ক হবে নিঃসন্দেহে ঢিলেঢালা সম্পর্ক। মুদির দোকানী কর্মচারীর মালিকের প্রতি আনুগত্য থাকা উচিৎ। একজন চাকরীজীবির উর্ধ্বতনের প্রতি আনুগত্য থাকা উচিৎ।
আনুগত্যতার অভাবের কারণে আমাদের সম্পর্কগুলো দিন দিন তিক্ততায় রূপ নিচ্ছে। এই তিক্ততা থেকেই হাজার হাজার সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আনুগত্যতা সবার উপরে। এর উপরে আর কিছুই হতে পারেনা। বিশ্বাস অর্জন করা খুব একটি কঠিন কাজ। আর এই এই যুগে এসে বিশ্বাস ধরে রাখা আরো বেশী কঠিন। যারা বিশ্বাস ধরে রাখতে পারে এবং ধরে রাখতে জানে- আসলে তারাই পারে বিশ্ব জয় করতে। সম্পর্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বাস অক্সিজেনের মত কাজ করে। যে একবার বিশ্বাস-আস্থা হারিয়ে ফেলেছে- সে বোঝে হারানোর বেদনা কত কঠিন। যে সম্পর্কে আস্থা থাকেনা সে সম্পর্কে শুধুই সন্দেহই থাকে। আর সন্দেহ দিন দিন বাড়তেই থাকে- কখনও কমেনা।
মুখে কথা বলতে টাকা খরচ হয়না মুখে কথা বলতে বলতে মানুষের মুখে ফ্যনা বের হতে দেখা যায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়েও দেখা যায় এমন অবস্থা। বিচারকের মুখের কথায় আসামীর ফাঁসি হয় আবার অন্যদিকে আসামী খালাস পায়। গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন একজন ব্যাক্তির মুখের কথায় অন্য একজন মানুষের জীবন/পরিবার/সমাজ পরিবর্তন হয়ে যায়। তাহলে নিঃসন্দেহে মানুষের মুখের কথার গুরুত্ব অনেক বেশী। এলোপাতাড়ি মুখের কথার কারনেও ভেঙ্গেঁ যাচ্ছে শতশত সম্পর্ক। আমাদের মুখ থেকে যত পরিকল্পিত এবং গঠনমূলক কথা বের হবে, তত বেশী সম্পর্ক গুলো মজবুত হবে। মানুষ উপকৃত হবে। ব্যক্তি-সমাজ উপকৃত হবে।
আমরা ইতিবাচক আনুগত্য এবং সুন্দর সম্পর্ক দিয়ে সুন্দর সমাজ তৈরী করতে চাই।

জাহাঙ্গীর আলম, উন্নয়নকর্মী।
jahangir.coast@gmail.com