জাহেদুল ইসলাম, লোহাগাড়া:

আশেকে রাসুল (স.) অলিকুল শিরোমনি মোজাদ্দেদে মাহফিলে সীরতুন্নবী (স.) প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রাহঃ আঃ) শাহ সাহেব কেবলা চুনতি কর্তৃক প্রবর্তিত ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি সীরত ময়দানে ১৯ দিন ব্যাপী সীরতুন্নবী (স.) মাহফিলের আখেরী মোনাজাত গত বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ১৯তম দিনে মানুষের ঢল নেমেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেছেন। বুধবার দিবাগত রাত ও বৃহস্পতিবার ফজরের আগ মূহুর্তে আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম বারাকাতী সাহেব। আখেরী মোনাজাতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য দোয়া চেয়েছেন। মায়ানমারে রাখাইন রাজ্যে মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন ও হত্যার নিন্দা জানিয়ে দোয়া চেয়েছেন। পুরো সীরত ময়দান আখেরী মোনাজাতে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত ছিল। সকাল থেকে আসতে থাকে ধর্ম প্রাণ মুসল্লীরা। আছরের নামাজের পর থেকে বাড়তে থাকে মানুষের ভীড়। এক সাথে জামায়াতে মাগরিবের নামাজ আদায় করেছে লাখো মুসল্লী। ১৩ একর বিশাল মাঠ পরিপূর্ণ।

বাদে জোহর তকরির পেম করেন কাজী মাওলানা নাছির উদ্দিন সাহেব। বাদে আছর তকরির পেশ করেন, চট্টগ্রাম বাযতুম শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আলহাজ¦ ড. মাওলানা সাইয়িদ আবু নোমান। মাগরিবের নামাজের পর তকরির পেশ করছেন বায়তুশ শরফের পীর বাহরুল উলুম শাহ মাওলানা কুতুব উদ্দিন (ম:জি:আ:)। তিনি বলেন, ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই রাসুল (সা.)কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। আর এ দ্বীন পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বাতিলদের অসংখ্য আঘাত সহ্য করতে হয়েছে। শত কষ্ট ও প্রতিকুল পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই তিনি ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।

ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাওলানা আহসান সাইয়িদ বলেছেন, জাতিগত সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলামের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। একমাত্র ইসলামেই জাতীগত সম্প্রীতি রক্ষায় যুগ ও সময়োপযোগী নির্দেশনা রয়েছে। পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী (স.) যখণ মক্কা শরীফে নবী হিসেবে আসলেন তখন আরবে মারামারি হানাহানি লেগেই ছিল। স্বীকৃতি পেয়েছিল আয়য়ামে জাহেলিয়াতের যুগ হিসেবে। এ রকম একটি কঠিনতম সময়ে নবী (সঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে আর্বিভূত হলেন। তিনি শত কষ্ঠ নির্যাতন সহ্য করে সেই আহেলিয়াতের যুগকে স্বর্ণের যুগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বাদে মাগরিব চুনতীর ঐতিহাসিক ১৯ দিন ব্যাপী সীরতুন্নবী (স.) মাহফিলের সমাপনী দিবসে তকরির পেশকালে এ কথা বলেন। সমাপনী দিবসের পৃথক ৪টি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন লোহাগাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ নুরুল আবসার চৌধুরী। তকরির পেশ করেন যথাক্রমে উত্তর বাড্ডা কামিল মাদরাসা মসজিদের খতিব মাওলানা জাকারিয়া আল-হোছাইনি, প্রখ্যাত মোফাচ্ছির অধ্যাপক ড. হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম বারাকাতি, প্রখ্যাত মোফাচ্ছির নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ইসলামিক ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের সাবেক মহাসচিব মাওলানা মুখলিছুর রহমান, বায়তুশ শরফের পীর আলহাজ¦ শাহ মাওলানা কুতুব উদ্দিন (ম:জি:আ:), ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাওলানা আহসান সাইয়িদ, বায়তুশ শরফ আর্দশ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সাইয়িদ আবু নোমান, আলহাজ মাওলানা কাজি নাছির উদ্দিন, জাফরাবাদ ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা ইউছুফ বিন নুরী প্রমূখ। বক্তারা সমাজে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে কাজ করার জন্য আহবান জানান।

চুনতির ঐতিহাসিক ১৯ দিন ব্যাপী সীরতুন্নবী (স.) মাহফিলের সমাপনী দিবসকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রান মুসলমানদের ঢল নেমেছে। জনতার ঢল সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খেয়েছে শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত সেচ্ছাসেবক ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। মাহফিল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্র জানায়, মাহফিল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অন্তত ৪ হাজার সেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিল। আর পুলিশ সদস্য ৪০ জন। তারা সকলে একটি টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানালেন মাহফিল পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহজাদা তৈয়বুল হক বেদার। লোহাগাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই সোহরাওয়ার্দী (সরওয়ার) বলেন, থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে ৪০ জন পুলিশ কাজ করেছে। মাহফিলে সাতকানিয়া সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মৌল্লা উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া মাহফিল কর্তৃপক্ষ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে মাহফিলের কার্যক্রম তদারিক করছে।

সমাপনি তকরির শেষে সীরত মাহফিলে আগত মুসল্লীদের উদ্দ্যশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাহ সাহেব কেবলার দৌহিদ্র শাহজাদা মাওলানা আবদুল মালেক ইবনে দিনার নাজাত। ১৯ দিন ব্যাপি সীরত মাহফিল পরিচালনা করেন, চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুল হক নিজাম ও মুহাদ্দেস ফারুক হোসাইন। মাহফিলে ছদর শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা শহীদুল ইসলাম বারাকাতী।##