মো. নিজাম উদ্দিন:
পর্যটন মৌসুম ও পর্যটক। এই দু’টি শব্দকে ঘিরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল থেকে শুরু করে শুঁটকি, ঝিনুকের তৈরি অলংকার, বার্মিজ আচার ও জুতাসহ নানান পণ্যের রমরমা বানিজ্য শুরু হয়ে যায়। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের টার্গেট থাকে পর্যটকদের প্রতি। কখন আসবে পর্যটন মৌসুম। প্রতি বছর সাগরের টানে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ঘুরতে আসেন দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক। এইসব পর্যটকদের মূল আকর্ষণ থাকে শুঁটকি, জুতা সেন্ডেল ও আচারের প্রতি। কক্সবাজারে এসে এসব পণ্য না কিনে ফিরে যাবে এটা যেন কল্পনাতীত। বেশিরভাগ পর্যটক শুঁটকি না নিলেও বার্মিজ মার্কেট ঘুরে আচার কিনবেনা এটা হতেই পারে না।

কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন নকল পণ্যে সয়লাব। বার্মিজ নামে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি বার্মিজ মার্কেটসহ পুরো শহর ও শহরতলির দোকানগুলো। নকল পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখে অসাধু ব্যবসায়িরা।

কক্সবাজার শহরে ও শহরতলিতে ভেজাল আচার ও চাটনী নামক দুটি পন্য ৫জনের সিন্ডকেটে কক্সবাজারে বিভিন্ন জায়গায় রঙ্গীন মোড়কে প্যাকেট করে বার্মিজ আচার নাম ভাঙ্গিয়ে বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি টাকার আচার মজুদ করেছে, তাদের দাবি এটির বিএসটিআই এর অনুমোদ আছে, কিন্তুু প্যাকেট দেখলে এতে কোন প্রকার বিএসটিআই এর অনুমোদএর কোন চিহ্ন, নেই,

ঢাকা থেকে আসা দুলন নামের একজন পর্যটক বলেন, আমি এখানে এসেছি গত দুইদিন আগে। এসে বার্মিজ মার্কেট থেকে ৪ প্যাকেট আচার কিনি। তারপর হোটেলে গিয়ে আচার খুলে দেখি, সবগুলো আচারে কেমন যেন গন্ধ হয়ে গেছে। খেতে গিয়ে দেখি সব গুলোই বিস্বাদ। প্রতিটা আচারের প্যাকেটের ভিতরেই বালুতে ভর্তি। পর্যটকের কথার সূত্র ধরে বিভিন্ন মহল ও আচার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনেক তথ্য উপাথ্য বের হয়ে আসে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন নকল পণ্যে সয়লাব। বার্মিজ নামে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি বার্মিজ মার্কেটসহ পুরো শহর ও শহরতলির দোকানগুলোতে। নকল পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।

কথিত বার্মিজ আচার ও স্যান্ডেলের উপর পর্যটকদের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। তাই দুটি পণ্যই ভেজাল ও নকল হচ্ছে দেদারছে। কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে ভেজাল আচার তৈরির জন্যই গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নকল কারখানা। যার কোনো অনুমোদন নেই। এমনকি কোথায় উৎপাদন করা হয় সেধরনের কোন ঠিকানাও নেই। এমনকি নকলের ভিড়ে আসল চেনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে পর্যটকদের কাছে। নকলের ঠেলায় আসল পণ্য উধাঁও হওয়ায় ভেজাল আচার কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন পর্যটকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারে ভেজাল আচার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর তৎপরতা ও ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ভেজাল আচার তৈরির কারখানা মালিক ও বিক্রেতাদের আটক পরবর্তী সাজা দেয়া হয়েছিল। কিছুদিনের জন্য তৎপরতা বন্ধ হলেও পর্যটন মৌসুমের শুরুতে বেড়ে যায় এদের তৎপরতা। এই পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই বিক্রির জন্য এসব ভেজাল আচার তৈরির কারখানায় এবং আচার বিক্রির দোকানগুলোতে মজুদ করা হয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকার হরেক রকমের ভেজাল আচার।

সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ছাতা ও ঝিনুক মার্কেটে, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলি পয়েন্ট, শহরের বিভিন্ন মার্কেটে, হোটেল মোটেল জোনসহ পর্যটক সমাগম এলাকায় বিক্রি হচ্ছে ভেজাল আচার। এসব আচারের স্থায়িত্ব রক্ষার নামে ব্যবহৃত হচ্ছে রং, কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর ফরমালিন।

বার্মিজ মার্কেট, সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট ও হোটেল-মোটেল জোন ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক দোকানে এসব ভেজাল আচার মজুদ করে রাখা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতেই রয়েছে বেশ কটি ভেজাল আচার তৈরির কারখানা। এদেও মধ্যে আছে, বাহারছড়ায় আমিনের ১টি , বিজিবি ক্যাম্প ঝিলংজায় বউ করিম , লারপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নোঙ্গর মাদকাসক্ত কেন্দ্রের উত্তর পাশে মোঃ ইউনুচ, ঝিলংজা দক্ষিণ ডিককুলে মোঃ পুতু, শহরের বন্দনপাড়ায় (সমিতিপাড়া) বাটপার জসিম উদ্দিন, লারপাড়া বাসটার্মিনালের দক্ষিণপাশে নেজাম উদ্দিন, লারপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নোঙ্গর মাদকাসক্ত কেন্দ্রের উত্তর পাশে মোঃ রহিম, , লারপাড়ায় মো ঃ ফরহাদ, পূর্ব লারপাড়ায় নুরুল আজিম, কলাতলি (গৈয়ামতলি ) এলাকায় নুরুল আলম, খুরুস্কুল ও সৈকতপাড়ায় মোঃ হাফেজ সহ আরো বেশ কয়েকজন বাসা ভাড়ায় কিংবা নিজস্ব বাড়িতে কারখানা খুলে ভেজাল আচার তৈরি করে দেদারছে সরবরাহ দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, নুরুল আজিমের রয়েছে কক্সবাজার শহরতলি নুরুল আজিম পূর্ব লারপাড়া ও বান্দরবানে ভেজাল আচার তৈরির কারখানা। মোঃ রহিম লারপাড়া,

, এই দিকে কক্সবাজারে শহরে বিভিন্ন এলাকায় এখন ৫ থেকে ৬ জনের আরেকটি সিন্ডকেট বর্তমানে সামনের মৌসুমে ব্যবস্যা করতে কয়েক কোটি টাকার ভেজাল আচার মজুদ করেছে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় তারা হলো

১/সিগমা নামক ম্যাঙ্গো চাটনী যার প্রস্তুুতকারক ইনসাফ ফুড় প্রোড়াক্টস প্লট নং৭০ ব্লক ড়ি সেকশন ২মিরপুর ঢাকা কক্সবাজারে এই কোং এজেন্ড হিসাবে কাজ করছে দিদার এন্ড ব্রাদাস প্রোঃ দিদারুল আলম মেরিনা বোড়িং এর নিচে, আজিজ মার্কেট কোরালরীফ এর সামনে প্রধান সড়ক কক্সবাজার।

২/সিয়াম এর প্রস্তুুতককারক এর এর নাম আছে মোড়কে মোল্লা ফুড় প্রোড়াক্টস আগৈলঝাড়া বরিশাল। কক্সবাজারে এজেন্ড কাজ করছে আল কালাম ষ্টোর প্রোঃ আবুল কালাম আইবিপি রোড় আশা শপিং কমপ্লেক্স কক্সবাজার।

৩/ভিআইপি কোয়ালিটি এটি বার্মিজ ভাষায় লেখা এবং কক্সবাজারে এজেন্ড হিসাবে কাজ করছে রাশেল ষ্টোর প্রোঃ রাশেল জমজম মার্কেট এবিসি রোড় বাজারঘাটা কক্সবাজার।

৪/আফফান বড়ই চাটনী প্রস্তুুতককারক আফফান এগ্রো ফুড় প্রোড়াক্টস কুরগাও মির্জানগর আশুলিয়া ঢাকা। কক্সবাজারে আছেন শাহ আমানত আচার বিতান চেউরি মার্কেট এবিসি রোড় বাজারঘাটা কক্সবাজার।

৫/জি- ওয়ান, প্রস্তুুতককারক এবিসি ফুড়স ঢাকা বাংলাদেশ লেখা কক্সবাজারে কাজ করছে সজিব ষ্টোর প্রোঃ সজিব এবিসি রোড় বাজারঘাটা কক্সবাজার।

এইদিকে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় দিদারএন্ড ব্রাদাস ও আল কালাম ষ্টোর বেপরোয়া হয়ে পড়েছে সামনের পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে তারা এই ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানীর নাম দিয়ে ও বার্মিজ ভাষায় আকর্ষনীয় মোড়কে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বার্মিজ আচার বলে চালিয়ে দিচ্ছে, এইদিকে সিয়াম নামদারী আল কালাম ষ্টোর এর আবূল কালাম এর দোকানে বিএসটিআই অনুমোদন বিহীন বড়ই, তেতুল, আমলকী সহ বিভিন্নজাতের আচার ও চাটনী বোতল জাত ও প্যাকেট জাত করে বাজারে ছাড়ছে যা সাস্হ্য সম্মত কিনা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারন জনগনের নামপ্রকাশে অনিশ্চুক জৈনক ব্যক্তি জানান এই আল কালাম ষ্টোরে নামে বেনামে বিভিন্ন প্রজাতের আচার ও চাটনি বিক্রী হয় যা আদৌ বাজারজাতের অনুমোদন নেই ও নিম্নমানের কিন্তুু প্রসাশনের নজরদারী না থাকায় তারা ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে, ৩—–
তৈরির কারখানা মালিক নুরুল আজিম এবং রহিম প্রতিমাসে প্রশাসনের জন্য এসব কারখানা মালিকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেন বলে অভিযোগ।

এব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। যদি অভিযোগ পাই সঙ্গে সঙ্গে আমরা এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। যারা এমন কাজ করছে তারা মারাত্মক ক্ষতির কাজ করছে বলেও জানান এই ওসি।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাক্তার মো: আব্দুস সালাম বলেন, ভেজাল আচার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এমনিতেই আচারটা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তার উপর নকল আচার তো আরো বেশি ক্ষতি করবে। আচারটা তৈরি হওয়ার পরে ওখানে পোকা হয়ে যায়। যা খালি চোখে দেখা যায় না। এর কারণে অনেকের এলার্জি, পাতলা পায়খানাও হয়। এছাড়া আরো নানান উপসর্গ দেখা দেবে। যারা এইসব ভেজাল আচার তৈরি করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার কথাও বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, নকল আচার প্রস্তুতকারীদের যদি সন্ধান পাই তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

ভেজাল আচার বিক্রির দোকানে আকর্ষণীয় ও রঙ্গিন মোড়কের প্যাকেটে মিয়ানমারের (বার্মিজ) ভাষায় টেকসই সুতির লুঙ্গি লেখা ও রাখাইন নারীর ছবি দিয়ে দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে এসব ভেজাল আচার। কিন্তু প্যাকেট খুলে গুণগত মান নিয়ে হতাশ পর্যটকরা।

স্নেহা বিশ্বাস নামের আরেক পর্যটক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি যে কয়েকবার আচার কিনে ঢাকায় নিয়ে গেছি প্রতিবারই খারাপ আচার পেয়েছি। হয় বালু থাকে, না হয় গন্ধ থাকে অথবা নষ্ট থাকে। এখানকার আচার আগে এমন ছিল না। কিন্তু দিন দিন এখানকার আচারের মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

এমন অভিযোগ স্বীকার করেন রহিম, নুরুল আজিম ও হাফেজ। তারা বলেন, ‘আমাদের এখানে ভালো আর অরিজিনাল আচারের পাশাপাশি নকল আচারও পাওয়া যায়। আমরা কি করবো বলেন? বার্মা থেকে ভালো আচার আনতে যে খরচ হয় তা ক্রেতারা দিতে চায় না। তারা শুধু কম দামী আচার খোঁজে। তাই আমাদেরকেও সব ধরনের আচার রাখতে হয়। কেউ ভালো চাইলে আমরা তাদের ভালোটাই দেই।’

তারা আরো বলেন, শহর ও শহরতলিতে বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি হচ্ছে। পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে অন্তত ১০ কোটির টাকা ভেজাল আচার দোকানে ও কারখানায় মজুদ করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের জমজম মার্কেটের এক বিক্রেতা জানান, বার্মা থেকে আমদানি করা আচারের প্যাকেটে মেয়াদ উর্ত্তীণের তারিখ থাকে না। কতিপয় নকল আচার প্রস্তুতকারী পুরাতন প্যাকেটে ঢুকিয়ে দেন সদ্য তৈরি করা আচার। এতে বুঝা যায় না।এথেকে আমরা বাচতে চাই এই ভেজাল আচার খেয়ে ঢাকা শহরের অনেক পর্যটক অসুস্হ হয়ে পড়ছে যা আমাদের অজানা। সকলে প্রসাশনের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাড়াসী অভিযানের জন্য আকুতি করেছেন সাধারন জনগন।