হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
সেন্টমার্টিনদ্বীপে আটকে পড়া ২ শতাধিক পর্যটক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের ট্রলারে করে টেকনাফে ফিরেছেন। রবিবার ১০ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা ৫টি ট্রলারে করে টেকনাফে পৌঁছেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাঠের ট্রলার চালানোর দায়ে ট্রলার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।

টেকনাফ সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সৈয়দ আলম বলেন ‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল না করায় আটকে পড়া পর্যটকেরা রবিবার ১০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে নয়টার পর সেন্টমার্টিনের জেটি ঘাটে ভিড় করেন। এসময় ৫টি ট্রলারে ২৪৪ জন যাত্রী ওঠানো হয়। এই পর্যটকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সাগরে মাঝপথে ট্রলারগুলো উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়লেও কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই ১২টা ১০ মিনিটের দিকে ৩টি ট্রলার টেকনাফ কায়ুকখালিয়া ঘাটে পৌঁছায়। ২০ মিনিটের পর বাকি ২টি ট্রলারও পৌঁছায়। ট্রলারগুলোয় ২০১ জন পর্যটক এবং ৪৩ জন স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বলেন ‘সাগরে সংকেত রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার না ছাড়ার জন্য ট্রলার মালিক সমিতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। যারা নিয়ম ভেঙ্গেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যান ফোন করে জানিয়েছে সাগর তেমন উত্তাল নয়। রোদ উঠেছে’।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন ‘সাগরে সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। কিন্তু সাগর তেমন উত্তাল নয়। সকাল থেকে বৃষ্টিও নেই। অন্য সময় এ ধরনের পরিস্থিতিতে ওই রুটে ট্রলার চলাচল করে। তাই পর্যটকেরা যেতে চাওয়ায় তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে’।

টেকনাফে ফিরে আসা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার ব্যবসায়ী নূরজ্জামান জানান, গত বৃহস্পতিবার পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়ে তিনি আটকা পড়েন। অন্যদের ফিরে আসতে দেখে তিনি ফিরে আসেন। মাঝপথে ঢেউয়ের দুলনিতে তাঁর ছোট সন্তান কয়েকবার বমি করে। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। রাজশাহীর বাগমারার বাসিন্দা আবদুর রহিম চৌধুরী বলেন ‘এক সপ্তাহ ধরে তিনি এলাকার বাইরে রয়েছেন। সেন্টমার্টিনে এসে চার দিন ধরে আটকা পড়েছিলাম। পকেটের টাকাও শেষ। বিকাশে টাকা এনে ট্রলার ভাড়া দিয়ে টেকনাফে আসি’।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার দিনভর উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়। সাগর উত্তাল ছিল। এ কারণে কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয় এবং সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে সেন্টমার্টিনদ্বীপে বেড়াতে গিয়ে ৬ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েন। তবে রবিবার ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে বৃষ্টি নেই। রোদও দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি এখন দুর্বল হলে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি এখন কক্সবাজার থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। তবে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত বহাল রয়েছে’।