ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার :

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সপ্তম শ্রেণীর এক শিশু কন্যাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দুই দিন কয়েক দফা গণধর্ষন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দেওয়ায় আসামীদের পক্ষ থেকে ২ দফা হামলা, লুটপাট, মারধর ও পুনরায় অপহনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যায় ধর্ষিতার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং তার বড় বোনকে ব্যাপক মারধর ও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে মারাত্বকভাবে জখম করে। আহত নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আতংকিত অবস্থায় রয়েছে ধর্ষনের শিকার স্কুল ছাত্রী ও তার পরিবার।
এ ঘটনায় কক্সবাজার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলা (সি,পি মামলা নং-৮৮৫/২০১৭) করা হয়। দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ রয়েছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত ১১ টার দিকে উখিয়ার উপজেলার লম্বরী জালিয়া পালং এলাকার মৃত বাদশা মিয়া’র ছেলে মোহাম্মদ কালামুল্লাহ (২৫) ও একই উপজেলার জালিয়া পালং এর বাইলা খালী’র মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ কবির (২২) সহ আরো দুই অজ্ঞাত ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙ্গে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীর ঘরে ঢুকে। ওই সময় তার মা বাধা দিতে আসলে তাকে মারধর করে বেঁধে রাখে। আর অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে তার মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। তারা ওই ছাত্রীকে সিএনজি (চট্টমেট্টো ১১-৪৬১২) করে প্রথমে কোটবাজার নিয়ে আসে। পরে আরেকটি সিএনজি কক্সবাজার শহরে নিয়ে যায়। প্রতিমধ্যে ছাত্রীটিকে রাস্তার পাশে জঙ্গলে ঢুকিয়ে ধর্ষণ করে মোহাম্মদ কালা মুল্লাহ। তারা ভোর ৫ টার দিকে বাস টার্মিনাল পৌছায়। এরপর শহরের লিংকরোড এলাকার মোহাম্মদ নাছির (৪০) ও চট্টগ্রাম লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকার আয়াত কোম্পানী’র মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনে’র (৪২) হাতে ওই ছাত্রীকে তুলে দেয় টাকার বিনিময়ে। তারা ছাত্রীটিকে কলাতলীর গ্রীন হাউস কটেজের ৪ নং রুমে তুলে। আর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। দুপুরের দিকে তারা ওই ছাত্রীকে রুমে তালা লাগিয়ে বাহিরে গেলে মোহাম্মদ ওসমান সরওয়ার নামে এক ব্যক্তি তাকে মুক্ত করে। আর বলে বাড়ি চলে যেতে। কিন্তু শিশু কন্যাটি বাসটার্মিনাল পর্যন্ত পৌছালেই পুনরায় মোহাম্মদ নাছির ও মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন তাকে ধরে নিয়ে যায়। আর সিম্পনি নামক আরেকটি আবাসিক হোটেলে তুলে এবং পুনরায় ধর্ষণ করে। পরে শিশু কন্যাটি সুযোগ পেয়ে অজ্ঞাত দুইটি নাম্বার থেকে তার মা’কে ফোন করে। আর এই বিপদের কথা জানায়। তার মা টুরিষ্ট পুলিশের সহযোগিতা মেয়েকে উদ্দার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি পুলিশ বুরো ইনবেস্টিকেশন (পিবিআই) এর তদন্তাধিন রয়েছে।
এই মামলা উঠিয়ে না নেওয়ায় গত ১৭ অক্টোবর সোমবার বিকালে পুনরায় হামলা চালায় আসামী পক্ষের লোকজন। দ্বিতীয়বারের হামলাকারীরা হলেন, উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং এলাকার বাইলাখালীর মৃত হাফেজ আহম্মদের ছেলে নুর আলী (৪৯), তার ভাই নুরুন নবী (৪০), নুরুন নবী’র ছেলে ইমরান (২২), ও নুর আলী’র ছেলে মোঃ হারুন (৩২) সহ ৬-৭ জন লোক।
ওই সময় হামলাকারীরা তাদের ঘর-বাড়ি ভাংচুর করে। পুনরায় অপহরনের চেষ্টা করে এবং শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামী করে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
এর পরেও মামলা উঠিয়ে না নেওয়ায় সর্বশেষ গত শনিবার সকাল ৮ টায় ওই স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে পুনরায় হামলা চালানো হয়। এবার তার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। আর তার বড় বোনকে ব্যাপক মারধর ও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করা হয়। তাকে আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি উখিয়া থানায় অবহিত করা হয় এবং এটিরও মামলার পক্রিয়া চলছে।
আহত বড় বোন জানান, ‘তার বোনকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করার ঘটনায় মামলা তুলে না নেওয়ায় তার উপর হামলা চালানো হয়। তারা তার শ্লীনতাহানীর চেষ্টা করেছে এবং গাছ দিয়ে পিটিয়ে মারাত্বকভাবে জখম করে।
ওই স্কুল ছাত্রীর মা’ জানান, তার মেয়েছে ধর্ষণ করার ঘটনায় মামলার কারার কারনে আসামী পক্ষের লোকজন বার বার হামলা চালাচ্ছে। তারা হামলার পাশাপাশি লুটপাটও চালাচ্ছে। তার মেয়েকে যখন অপহরণ করা হয়েছিল তখন তারা আলমিরা ভেঙ্গে নগদ ৩০ হাজার টাকাও ৯০ হাজার টাকার স্বর্ণ লোট করে। এ অবস্থায় তারা খুবই আতংকিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। তারা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে ওই মামলার এডভোকেট আবদুল মান্নান জানান, স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষনের কারনে যে মামলাটি দায়ের করা হয় তা (পিবিআই) এ তদন্তে রয়েছে। আসামী পক্ষের লোকজন মামলাটি উঠিয়ে নিতে বললে তারা অপারগতা জনালে আবারো অপহরন করে এবং ধর্ষণেন চেষ্টা চালায়। পরে দুটি মামলা হয়। আর এসব মামলা উঠিয়ে না নেওয়ায় তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত শনিবারে ধর্ষিতার বড় বোনের উপর নির্যাতন চালানো হয়। এই ঘটনায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে।