ছাড়িয়ে যাবে ২ লাখ ৯ হাজার ৫’শ ৭৮ মে.টন লক্ষ্যমাত্রা

সায়ীদ আলমগীর:

শুরুতে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলেও চাষের পর পরিমিত বৃষ্টিপাত এবং পর্যাপ্ত পরিচর্যায় কক্সবাজারে এবারও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ২ লাখ ৯ হাজার ৫’শ ৭৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৭৭ হাজার ৭শ ৩৩ হেক্টর জমিতে জেলায় এবার রোপা আমনের চাষাবাদ হয়। সব কিছু অনুকূলে থাকায় চাহিদার ছেয়ে ভাল ফলন ঘরে উঠবে চাষীদের। ইতিমধ্যে উৎপাদিত ফসল অধিকাংশই কেটে ঘরে তোলার কাজ চলছে। বাকিটুকুও দ্রুত মাড়াইয়ের জন্য আনা হচ্ছে। রূপালী ধানের আবহে চাষি পরিবারে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। ফলন ভাল হওয়ায় প্রত্যন্তাঞ্চলে নতুন চালের পিঠার উৎসব চলছে। এমনটি জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা কৃষি অধিদপ্তর।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নিবিড় বার্ষিক সফল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে জেলায় আমন মওসুমে ৭৭ হাজার ৭শ ৩৩ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৯ হাজার ৫’শ ৭৮ মেট্রিক টন। উপজেলা ভিত্তিক আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় চকরিয়ায় ১৯ হাজার ২শ ২৮ হেক্টরে ৫২ হাজার ১১মে. টন। পেকুয়ায় ৮ হাজার ৪শ ৫০ হেক্টরে ২২ হাজার ৫শ ৯৬ মে. টন। রামুতে ৯ হাজার ৪শ ৫ হেক্টরে ২৫ হাজার ৬শ ৬৬ মে. টন। সদরে ৯ হাজার ১শ হেক্টরে ২৪ হাজার ৫শ ৮৪ মে. টন। উখিয়ায় ৯ হাজার ১০ হেক্টরে ২৪ হাজার ৮শ ৪৭ মে. টন। টেকনাফে ১০ হাজার ৮শ ৪০ হেক্টরে ২৯ হাজার ১শ ৮৬ মে. টন। মহেশখালীতে ৮ হাজার ২শ হেক্টরে ২২ হাজার ৫শ ৬৮ মে. টন এবং কুতুবদিয়ায় ৩ হাজার ৫শ হেক্টরে ৮ হাজার ১শ ২০ মে. টন।

চাষে ৩ জাতের ধানে হাইব্রীড জাতের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪৫ হেক্টরে ৩০৮ মেট্রিক টন, উফশী জাতের ৬৮ হাজার ৯শ ৮৮ হেক্টরে ১ লাখ ৯৩ হাজার ১শ ৬৬ মে. টন এবং স্থানীয় জাতের ৭ হাজার ৮শ’ হেক্টরে ১৩ হাজার ১শ ৪ মে. টন চাল। যা ফলন হয়েছে এতে গড় হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ফসল উঠেছে হবে বলে আশা। সমস্ত ধান মাড়াই সম্পন্ন হলে উদৃত সম্পর্কে সঠিত তথ্য জানা যাবে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওর জালালাবাদ ফরাজীপাড়ার প্রান্তিক চাষি আমান উল্লাহ জানান, গত বছর ধানের দাম চাহিদার চেয়ে বাড়তি পাওয়ায় এবার আগ্রহ নিয়ে চাষ বাড়িয়েছি। পরিচর্যা ভাল হওয়ায় ফলনও আশানুরূপ হয়েছে। আশাকরি এ বছরও নায্যমূল্য পাব।

সদরের পিএমখালী বাংলাবাজার এলাকার ছাবের আহমদ বলেন, এবার আমন মৌসুমে বার বার নিম্নচাপ দেখা দেয়ায় ধান রোপনের পর ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দু:চিন্তায় ছিলাম। তবে আল্লাহর রহমতে আশার চাইতে বেশি ফসল ঘরে উঠছে। এখনো মাড়াই শেষ না হওয়ায় কি পরিমাণ ধান পড়েছে তা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না।

চকরিয়ার ডুলাহাজারা এলাকার কৃষক মাইনুল এহছান চৌধুরী বলেন, প্রথমে শংকা থাকলেও ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে। প্রায় ১৬ একর জমিতে প্রতি একরে প্রায় ২৫০ আরি ধান (প্রায় ৬২ মণ চাল) উঠেছে। নতুন ধান উঠার খবরে সন্তানদের পরীক্ষা শেষে সব স্বজনও বেড়াতে আসবে, তখন নতুন চালের পিঠার আয়োজন হবে। এনিয়ে খুশির আমেজ বিরাজ করলেও ধান কাটার মজুর খরচ গত সময়ের তুলনায় বেশি দিতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে একজন মজুর কাজ করতো ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চলতি বছর সেটা ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। যারা ধান কাটা ও মাড়ায় প্রাজ্ঞ তাদের দাম আরো বাড়তি।

এদিকে রামু-চকরিয়া-পেকুয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার সব জায়গায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষক ধান ঘরে তুলেছেন। বাকি যে টুকু ধান মাঠে আছে তাও দ্রুত ঘরে তুলতে খুশি মনে ব্যস্ত কৃষকরা। এসব প্রাপ্তির পিছনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের আন্তরিক পরামর্শ ও সহযোগিতা কাজ করেছে বলে দাবি কৃষকদের।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ জানান, চলতি অর্থ বছরে (২০১৭-২০১৮) খরিপ-২ (আমন) আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল উপজেলায় ১৯ হাজার ২২৮ হেক্টর আর চাষাবাদ করা হয়েছে ১৯ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে। সময়মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধানের ফলনও আশানুরুপ হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আমনের ফলন ভাল হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে চকরিয়ার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এবার আমন ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি দেখা যাচ্ছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. এনায়েত-ই-রাব্বীর মতে, কৃষকদের নিয়েই আমাদের কাজ। তাঁরা খুশি থাকলে আমরাও খুশি। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন বেশ ভাল হয়েছে। এখন প্রায় ৭৫ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) আ.ক.ম শাহারিয়ার জানিয়েছেন, মওসুমের শুরুতে ২ দফা বন্যার ধকল গেছে। এরপরও সকল সংকট কাটিয়ে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো হয়। নিবীড় পর্যবেক্ষণের কারণে বিগত বছরের মত এ বছরও আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। নিয়মিত উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় আমনের ফলন ভাল হয়েছে। এতে কৃষকের পাশাপাশি আমরাও খুশি।

জেলা কৃষি অফিসের এ প্রধান কর্মকতা বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি এবং কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করছে। তাই ন্যায্য মূল্যেই চাল কিনবে সরকার। সারাদেশে মাড়াই সম্পন্ন হলে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দর ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।