পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের সংখ্যা ১১টি। গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে দেশে ৬৪টি জেলা থাকলেও এই ১১ প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পই রয়েছে পিরোজপুর জেলায়। যদিও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মহাপরিচালক বলছেন, পক্ষপাতিত্ব নয়, গুরুত্ব বিবেচনাতেই প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর সদর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যে পাঁচটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো— জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী ফেরীঘাট সংলগ্ন চর এলাকা বনায়নের মাধ্যমে ভূমির উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা প্রকল্প; পিরোজপুর সদর উপজেলায় রিভারভিউ ইকোপার্কের (ডিসি পার্ক) সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ ও বনায়ন প্রকল্প; জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সবুজ বেষ্টনী সৃজনের লক্ষ্যে মরাখালগুলো পুনঃখনন এবং বনায়ন ও পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প; পিরোজপুর সদরে পুলিশ লাইন ইকো পার্ক নির্মাণ প্রকল্প (চলমান প্রকল্পের সময় বাড়ানোর জন্য পুনরায় প্রস্তাব করা হবে) এবং ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় ভান্ডারিয়া থানা ইকো-পার্ক উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্প।

১১টি প্রকল্পের বাকি ছয়টি প্রকল্প হলো— বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক; গাজীপুরের বর্ধিতাংশে বায়োডাইভারসিটি পার্ক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প; ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ SFNTC-তে ইকোপার্ক স্থাপনের মাধ্যমে জনসাধারণের বিনোদনের সুযোগ তৈরি প্রকল্প; কুকরী-মুকরী ইকোর্পাক স্থাপন প্রকল্প; সুন্দরবন সংরক্ষিত বনে স্মার্ট প্যাপরোলিং প্রকল্প ও মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে সৌরবেষ্টনী স্থাপন প্রকল্প।

১১টি প্রকল্পের ছয়টিই পিরোজপুর জেলায় বরাদ্দ প্রসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মহাপরিচালক (সরকারের অতিরিক্ত সচিব) দীপক কান্তি পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখানে কোনও পক্ষপাতিত্ব হয়নি।’
পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ভান্ডারিয়ার চরখালী ফেরীঘাট সংলগ্ন চর এলাকা বনায়নের মাধ্যমে ভূমির উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের এপ্রিলে। চলতি ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাব কমানো; চর বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং সাইক্লোন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মাটির ক্ষয়রোধ ও জলোচ্ছ্বাস রোধ করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

এ ফান্ডের আওতায় জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল (খসড়া) সংশোধন ও পরিমার্জন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের জুন মাসে। দেশব্যাপী চলবে এ প্রকল্পের কাজ। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল (খসড়া) সংশোধন ও পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

গাজীপুর জেলয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বর্ধিতাংশে বায়োডাইভারসিটি পার্ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৫ সালের আগস্টে। ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে এ প্রকল্প। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় অবক্ষয়িত শাল বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নের মাধ্যমে ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নও প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য।

ফান্ডের আওতায় পিরোজপুর রিভারভিউ ইকোপার্কের (ডিসি পার্ক) সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন এবং বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি চলবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধি, বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের জিনপুল সংরক্ষণ, বাগান তৈরির মাধ্যমে কার্বন শোষণ, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন, স্থানীয়দের কর্মসংস্থান তৈরি এবং রাজস্ব আয় বাড়ানো এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ এসএফএনটিসিতে ইকোপার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিনোদনের সুযোগ তৈরি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পের এলাকা এসএফএনটিসি, কাজীরবাগ, ফেনী সদর, ফেনী। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও পিরোজপুর রিভারভিউ ইকোপার্ক প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অনুরূপ।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ভান্ডারিয়া উপজেলার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সবুজ বেষ্টনী তৈরির জন্য মরা খাল পুনঃখনন এবং বনায়ন ও পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এ বছরের ডিসেম্বরে। অন্যদিকে, পিরোজপুর পুলিশ লাইন ইকোপার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জুনে, শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছরে জুনে। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর জন্য পুনরায় প্রস্তাব করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। আর ভাণ্ডারিয়া থানা ইকোপার্ক উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কুকরী-মুকরী ইকোর্পাক স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়। এ বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০১৯ সালের ৩০ জুন।
অন্যান্য ইকোপার্কের মতো এসব ইকোপার্কেও ইকোট্যুরিজমের মাধ্যমে স্থানীয়দের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো ও দারিদ্র্য বিমোচন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, বন ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও আগ্রহী গবেষকদের গবেষণার সুযোগ তৈরি করাই এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

এই ফান্ডের আওতায় সুন্দরবন সংরক্ষিত বনে স্মার্ট প্যাপরোলিং প্রকল্প অন্যতম। এ বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ প্রল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সুন্দরবন সংরক্ষণের জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনা বাড়ানো; বাঘ ও এর শিকারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়াসহ বন্যপ্রাণী অপরাধ কমানো; বাঘ, শিকার ও এর আবাস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, বনগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পের অবস্থান হচ্ছে সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বাগেরহাট জেলার সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শরণখোলা রেঞ্জ, চাঁদপাই রেঞ্জ, খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ।

এ ফান্ডের আওতায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে সৌরবেষ্টনী স্থাপন প্রকল্প। এই প্রকল্পও শুরু হয়েছে এ বছরের জুলাইয়ে এবং বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০১৯ সালের ৩০ জুন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের ঝিনাইগাতি এবং শ্রীবর্ধী উপজেলায়। মানব-হাতি সংঘাত কমানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিরসনই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

বাংলা ট্রিবিউন