সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সমিতির নির্বাচন কাল, ২১ পদে লড়ছে ৪১ প্রার্থী

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০৮:৩৪ , আপডেট: ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০৬:১৬

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী শহীদুল ইসলাম বাবুলের শোডাউন। ছবিটি মঙ্গলবার বিকালে শহরের লালদীঘিরপাড় থেকে তুলা।

ইমাম খাইর, সিবিএন:
বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজারস্থ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সমিতির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন আগামী কাল (৩০ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শহরের পেশকারাপাড়াস্থ আবু জার আল গিফারী একাডেমী প্রাঙ্গনে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে সভাপতি-সম্পাদকসহ মোট ২১টি পদে ৪১ জন প্রার্থী লড়ছেন। তবে, এর আগে সহ-কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ শাহ আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকী ২০টি পদে পত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করবে সমিতির ২৪০৮ ভোটার। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন জেলা সমাজসেবা অফিসার (প্রবেশন) সিরাজুল ইসলাম। কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন এস্তাফিজুর রহমান ও মাস্টার বোরহান উদ্দিন।

এদিকে কক্সবাজারে অবস্থানরত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসীর কাঙ্খিত এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মাঝে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, ঠিক তেমনি ভোটারদের মাঝেও আগ্রহ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। মূলতঃ ১৯৮৭ সালে সমিতি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রথম প্রত্যক্ষ নির্বাচন হওয়ায় সবার মাঝে আগ্রহ তৈরী হয়েছে। এর আগে মনোনয়নের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হতো। প্রথমবারের মতো নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা তাদের প্রচারণায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি প্রার্থীরা যাচ্ছে ভোটারদের দোকানে কিংবা বাসা বাড়ীতে। চলছে মিছিল, মিটিং, শো-ডাউন। গত দুই দিন ধরে কক্সবাজার শহর যেন মিছিলের নগরী। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সমিতির নির্বাচনী ঝড় উঠেছে চায়ের কাপে। প্রার্থীদের প্রচারণা দেখে মনে হয় তারা যেন কোন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সবার মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

গতকাল সকাল থেকে শহরের প্রতিটা অলিগলি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর ছিল। সড়কে উপ-সড়কে বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের মিছিল আর শো-ডাউন। মিছিলের উপস্থিতি কারো চেয়ে কারোর কম নয়। সভাপতি প্রার্থী ফরিদ আহমদ চৌধুরী জনবল ও সমর্থন নিয়ে শক্ত অবস্থানে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বড়বাজার কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে সবার মাঝে পরিচিত মুখ। বড়বাজার মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার একটা চমৎকার অবস্থান রয়েছে। ফরিদ আহমদ চৌধুরীর প্রতীক আনারস। অপরদিকে ছাতা প্রতীকে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আলহাজ্ব ইদ্রিস মিয়া। তিনি সমিতির জন্য নতুন মুখ হলেও শ্রমিক রাজনীতিতে তার অবস্থান রয়েছে। সেই অবস্থানটা তিনি নির্বাচনী মাঠে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ভোটারদের কাছে পৌঁছতে পেরেছেন বলে অনেকে মনে করেন। তবে, সব হিসেবে নিকেষ মিলালে সভাপতি পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ফরিদ আহমদ চৌধুরী এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।

সাধারণ সম্পাদক পদে জেবর মুল্লুক (চাকা) ও নজরুল ইসলাম (দেওয়াল ঘড়ি) শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। দুইজনই ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হওয়ায় ভোটাররা দুইজনকেই সমান তালে দেখছেন। শেষটা বোঝা যাবে ফলাফল গণনার পর।

গত তিন দিনের মাঠ জরিপে দেখা গেছে, সহ-সভাপতি পদে আমিনুল ইসলাম (বাই সাইকেল), রফিক মাহমুদ (হরিণ), মো. আবদুর রহমান (কলম) এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শ্রমিক নেতা সাহাব উদ্দিন (মোটর সাইকেল) বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে ভোটারদের মুখে শুনা যাচ্ছে। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে শহীদুল ইসলাম শহীদ (মোরগ), কোষাধ্যক্ষ পদে মোতাহের হোসেন (বাস), ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শহীদুল ইসলাম বাবুল (ক্যাপ), সহ-ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লোকমান হাকিম (হাতপাখা), দপ্তর সম্পাদক পদে সিরাজুল ইসলাম (আলমিরা), প্রচার সম্পাদক পদে আবদুল খালেক (মাইক) ভোটারদের মন গলাতে পেরেছেন বলে সমিতির সাধারণ সদস্যরা জানান।

তবে, প্রচার সম্পাদক পদে জহিরুল ইসলামকেও (টেলিভিশন) সহজে উড়িয়ে দিচ্ছেনা ভোটাররা। কয়েকজন প্রার্থী শেষ বেলায় ভোটার হিসেব পাল্টাতেও পারেন- এমনটি ধারণা অনেকের।

সদস্য পদে হামিদুল আজম বকুল (হাঁস), মো. ইউছুপ (ঘোড়া), আলমগীর (মিনার), আহমদ কবির (হারিকেন), আবদুল মান্নান (তালাচাবি), নাসির উদ্দিন সুমন (চশমা), কামাল উদ্দিন (আম) এবং রাশেদুল হক রাশেদ (ময়ুর) প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। শহীদুল ইসলামকেও (ব্যাগ) হিসেবে রেখেছেন ভোটারেরা। তবে, নেতৃত্ব নির্বাচনের বেলায় শিক্ষিত, আদর্শবান নেতৃত্বকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসী বেছে নেবেন। এক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ, টাকা ও প্রভাবশালীদের চাপ প্রভাব ফেলবেনা বলে মনে করা হচ্ছে।

ভোটারদের বিশ্লেষণ, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া এলাকার মানুষ খুবই রাজনৈতিক সচেতন। টাকা বা অন্য কিছুতে তাদের প্রভাবিত করা যায়না। নীতি নৈতিকতাকেই এখানকার মানুষ সব সময় প্রধান্য দিয়ে থাকে। এবারের নির্বাচনের বেলাও তার ব্যতিক্রম হবেনা বলে ভোটাররা মনে করেন।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সমিতির দ্বি-বার্ষিক এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিরাজুল ইসলাম জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে নির্বাচনের ব্যাপারে প্রচুর আগ্রহ দেখা দিয়েছে। ভোট গ্রহণে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।