ইমাম খাইর, সিবিএন
কক্সবাজার পৌরসভায় ‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র’ তথা ‘স্মার্ট কার্ড’ বিতরণের সময়সুচি ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার (২৬ নভেম্বর) ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড দিয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। শেষ হবে ২৯ ডিসেম্বর। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলে বিতরণ কার্যক্রম চলবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা সিবিএনকে জানিয়েছেন, কক্সবাজার পৌরসভারসহ পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার সদরের প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার ভোটার স্মার্টকার্ড পাবে। ২০১৫ সালের আগে যারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তারাই মূলতঃ ‘স্মার্ট কার্ড’-এর আওতায় পড়েছে।
তবে এই স্মার্টকার্ড নেওয়ার সময় নাগরিকদের পুরনো কার্ড জমা দেওয়ার পাশাপাশি ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি দিতে হবে। এক্ষেত্রে কারও কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথমে পুরনো কার্ডটি তুলে তা জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড ১-২ ডিসেম্বর। ২ নং ওয়ার্ড ৩-৪ ডিসেম্বর। ৩ নং ওয়ার্ড ৫-৬ ডিস্বের। ৪ নং ওয়ার্ড ৭ ও ৯ ডিসেম্বর। ৫ নং ওয়ার্ড ১০-১১ ডিসেম্বর। ৬ নং ওয়ার্ড ১২-১৩ ডিসেম্বর। ৭ নং ওয়ার্ড ১৪ ও ১৭ ডিসেম্বর। ৮ নং ওয়ার্ড ১৮-১৯ ডিসেম্বর। ৯ নং ওয়ার্ড ২০-২১ ডিসেম্বর। ১০ নং ওয়ার্ড ২৩-২৪ ডিসেম্বর। ১১ নং ওয়ার্ড ২৬-২৭ ডিসেম্বর। ১২ নং ওয়ার্ড ২৮-২৯ ডিসেম্বর স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।
স্মার্ট কার্ড বিতরণের ৩ টিমের প্রতি টিমে ৫ জন করে অপারেটর থাকবে, যারা ভোটারদের চোখের আইরিশ ও দশ অঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ করবে। এছাড়া প্রতি টিমে ৩ জন সহযোগি থাকবে, যারা সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে কার্ডের তথ্য খুঁজে বের করে স্লিপ লিখে আবেদনকারীর হাতে দিবে। থাকবে একজন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট।
সদর নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, হালনাগাদ বাদে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৬৩৭, মহিলা ভোটার ৩৭৪৫। সর্বমোট ৭৩৮২ ভোটার। ২ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৪০৭৫, মহিলা ভোটার ৩৫২০। সর্বমোট ৭৫৯৫ ভোটার। ৩ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৯২৩, মহিলা ভোটার ২০১৩। সর্বমোট ভোটার ৫৯৩৬ জন। ৪ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৭৬৩, মহিলা ভোটার ৩৫৮৫। সর্বমোট ভোটার ৭৩৪৮। ৫ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩২০০, মহিলা ভোটার ৩১৭৮। সর্বমোট ভোটার ৬৩৭৮। ৬ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৭২২, মহিলা ভোটার ৩৩৭৯। সর্বমোট ভোটার ৭১০১। ৭ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৯৫৭, মহিলা ৪০৩০। সর্বমোট ভোটার ৭৯৮৭। ৮ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩২৯৮, মহিলা ভোটার ৩১৩০। সর্বমোট ভোটার ৬৪২৮। ৯ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩০৩১, মহিলা ভোটার ৩০৩৯। সর্বমোট ভোটার ৬০৭০। ১০ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৫৮৫, মহিলা ভোটার ২৯৬২। সর্বমোট ভোটার ৬৫৪৭। ১১ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩০৪৯, মহিলা ভোটার ২৪৬৬। সর্বমোট ভোটার ৫৫১৫। ১২ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৫২৩, মহিলা ভোটার ২৫২৯। সর্বমোট ভোটার ৬০৫১।
নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, স্মার্টকার্ড নেওয়ার সময় ভোটারদের নতুন করে কোনও ছবি তুলতে হবে না বা কোনও তথ্য দিতে হবে না। নির্বাচন কমিশনে প্রত্যেক ভোটারের যে ছবি ও অন্যান্য তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে, তারই ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে স্মার্ট কার্ড। অর্থাৎ ভোটারদের হাতে বর্তমানে যে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে, তার ছবি ও অন্যান্য তথ্যযুক্ত থাকবে নতুন স্মার্ট কার্ডে। তবে, কোনও ভোটার স্মার্ট কার্ড তৈরি হওয়ার আগে ছবি পরিবর্তন বা অন্যান্য তথ্য সংশোধন করে থাকলে স্মার্ট কার্ডে নতুন ছবি পাবেন।
এদিকে স্মার্ট কার্ড পাওয়ার পরও ভোটারদের ছবি বা অন্যান্য তথ্য সংশোধন/হালনাগাদের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিয়ে তাদের নিজ নিজ নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। সংশোধিত নতুন স্মার্টকার্ড তৈরি হলে ভোটারের মোবাইলে এসএমএস’র মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরে তারা উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তা সংগ্রহ করবেন।
পুরনো কার্ড জমা না দিয়ে নতুন কার্ড নয়:
প্রত্যেক ভোটারকে স্মার্ট কার্ড নেওয়ার সময় তাদের কাছে থাকা কার্ডটি জমা দিতে হবে। পুরনো কার্ড না দিয়ে নতুন কার্ড পাওয়া যাবে না। কারও কার্ড হারিয়ে গেলে কেবল পুলিশি ডায়রির কপি বা অন্য কোনও অঙ্গীকারনামা দিলেও হবে না। এক্ষেত্রে জিডি করে ভোটারকে ইসির নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আগে পুরনো কার্ড তুলতে হবে। এরপর সেই কার্ড জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হবে।
নতুন ভোটাররা পাবেন জমা স্লিপে স্মাট কার্ড:
গত ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নির্বাচন কমিশন ভোটার হালনাগাদ করলেও এই দ্ইু বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের এখনও কোনও কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। এসময়ে নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সময় যে স্লিপ দেয়া হয়েছে, তা জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড নেবেন। তবে, জরুরি প্রয়োজনে এসব নতুন ভোটারের মধ্য থেকে কেউ লেমিনেটেড জাতীয় পরিচত্রপত্র নিয়ে থাকলে স্মার্ট কার্ড নেওয়ার সময় সেই কার্ড ফেরত দিতে হবে।
কেন ১০ আঙ্গুল ও চোখের মণির ছবি:
এনআইডির তথ্যভা-ারে নাগরিকদের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনির ছাপ রয়েছে। ২০০৮ সালে এই ছাপ সংগ্রহে অনেক ত্রুটি ছিল। এছাড়া বয়স বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আঙ্গুলের ছাপে পরিবর্তন হতে পারে। এমনটা চিন্তা করে ইসি নতুন করে দুই হাতের ১০ আঙ্গুলের ছাপ চোখের মণির (আইরিশ) ছবি সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০-এ বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়ের জন্য একজন নাগরিকের বায়োমেট্রিক ফিচার যথা আঙ্গুলের ছাপ, হাতের ছাপ, তালুর ছাপ, আইরিশ বা চোখের কণিকা, মুখাবয়ব, ডিএনএ, স্বাক্ষর ও কণ্ঠস্বর সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এ কাজের অনেকটাই বাকি রয়ে গেছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড মিলে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ভোটার রয়েছে।
সদরের ইসলামপুরে ১০৯৬৪, ইসলামাবাদে ৯৫৪৬, ঈদগাঁওতে ১৮১২৮, জালালাবাদে ৯৫৪৬, পোকখালীতে ১২৯৯৮, ভারুয়াখালীতে ১৩৩৭, পিএমখালীতে ২০৩২৮, চৌফলদন্ডিতে ১৭৪৪০, খুরুশকুলে ২৬২৩৩ এবং ঝিলংজায় ২১৩২১ ভোটার রয়েছে। (সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ১৩-০৮-২০১৭ তারিখের সর্বশেষ তথ্য)
স্মার্টকার্ড এর বিস্তারিত:
জালিয়াতি রোধে জাতীয় পরিচয়পত্রকে আধুনিকভাবে তৈরি, যন্ত্রে পাঠযোগ্য জাতীয় পরিচয়পত্রকেই ‘স্মার্ট কার্ড’ বলে। একে ভোটার আইডি বলেও অভিহিত করা হয়। বর্তমানে যে পরিচয়পত্র বা কার্ড চালু রয়েছে তা সাধারণ পাতলা কাগজে প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করা। যার প্রথম পৃষ্ঠায় নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ ও আইডি নম্বর এবং অপর পৃষ্ঠায় ঠিকানা দেওয়া। ফলে এই কার্ডটি সহজেই নকল করা সম্ভব। অসাধু ব্যক্তিরা এটি সহজেই নকল করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে।
নাগরিক ভোগান্তি ও হয়রানি রোধ করতেই স্মার্ট কার্ড তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। এটি যন্ত্রে পাঠযোগ্য। অসাধু ব্যক্তিরা সহজেই নকল করতে পারবে না। ভোটারের বা পরিচয়পত্রধারীর আইডি নম্বর ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য এই আইডিতে সংরক্ষিত থাকবে। শুধুমাত্র যন্ত্রের সাহায্যে এসব তথ্য পাঠ করা যাবে। টেকসই ও সুন্দর অবয়বে এ কার্ড বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় তা সাধারণভাবে স্মার্টকার্ড হিসেবেই বিবেচিত হবে। স্মার্টকার্ডে প্রায় ২৫ ধরনের নাগরিক সেবা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ই-পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশন সেবাসহ বহুবিধ কাজে এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, স্মার্টকার্ড হবে মেশিন রিডেবল, যা কার্ড জালিয়াতির হাত থেকে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদান করবে। পরপর দুবার হারালেই কার্ড সংগ্রহে ভোটারকে জরিমানা দিতে হবে দুই থেকে চার হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, হালনাগাদ বাদে কক্সবাজার জেলায় বিদ্যমান ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৩৯ জন। সেখানে পুরুষ ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৩ এবং মহিলা ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৬ জন। আগের ভোটারের সঙ্গে ২৫ জুলাই থেকে হালনাগাদ হওয়া নতুন ভোটাররা যুক্ত হবে। মোট ভোটারের সাড়ে ৩ ভাগ নতুন ছবিযুক্ত ভোটার তালিকায় স্থান পাবে।