ইমরান হোসাইন, পেকুয়া
করাত কলের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পেকুয়ার বনাঞ্চল। অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দিনদিন গাছগাছালি কমছে উপজেলার প্রায় দুই হাজার একর বনভূমির। যে বন রক্ষায় সরকারের এত আয়োজন, সেই বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র নজরদারির অভাবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায় জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করাত কল। অথচ বন বিভাগের নীতিমালায় রয়েছে, সংরক্ষিত বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। করাতকল চালাতে হলে প্রয়োজন হবে লাইসেন্সের। কিন্তু এসব নিয়মনীতি মানেন না পেকুয়ার করাতকল মালিকেরা।

স্থানীয় পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, এই করাতকল মালিকরা প্রভাবশালী। তাদের সঙ্গে বনবিভাগের যোগসাজস রয়েছে। প্রতিটি করাত কল থেকে বনবিভাগ মাসে নিদিষ্ট হারে মাসোহারার টাকা পায়। তাই তারা টুঁশব্দ করেনা। এছাড়া প্রতিনিয়ত দখল হয়ে যাচ্ছে বনভূমি। কমে আসছে বনাঞ্চলের আয়তন। বিপন্ন হচ্ছে পশুপাখি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পেকুয়ার সংরক্ষিত বনের এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে অর্ধডজন করাত কল। তিন কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে আরও ৮-১০টি করাত কল। করাত কল গুলো স্থাপন করা হয়েছে লাইসেন্স ছাড়াই। এগুলোতে দিনরাত দেদারছে চলছে সংরক্ষিত বনের কাঠ চেরাই। লাইসেন্সবিহীন এসব করাতকলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ উপকূলীয় বাঁধ রক্ষা, সামাজিক বনায়নের গাছ অহরহ চেরাই চলছে। ফলে উপকূলীয় বনাঞ্চল এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে। গত একযুগে বেড়িবাঁধের বাইরে মাইলের পর মাইল বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

উপকূলের বাসিন্দারা জানান, প্যারাবন উজাড় হওয়ায় উপকূলের বেড়িবাঁধ গুলো চরম ঝুকিপুর্ণ হয়ে আছে। দুর্যোগকালীন ঝুঁকিতে রয়েছে লাখো মানুষের জীবন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপজেলার সড়ক সমূহে উপকূলীয় বনবিভাগ সৃজিত হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রাতের আধারে কেটে সংলগ্ন করাতকলে চেরাই করে চেহারা পাল্টে দেয়া হচ্ছে এসব গাছের। এছাড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মূল্যবান গর্জন, সেগুন সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাদারট্রি কেটে নদীপথে পাচার করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায়। পেকুয়া বাজার কেন্দ্রিক প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত রয়েছে। এদিকে বনাঞ্চলসহ পরিবেশ রক্ষার্থে উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটি থাকলেও এর কার্যক্রম পেকুয়ায় দৃশ্যমান নয়।

টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের হাজী বাজারের পশ্চিম পাশে দুটি করাতকল রয়েছে। অথচ এখান থেকে টইটং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। এভাবেই কোন ধরনের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই করাত কল নির্মিত হয়েছে। চলছে গাছ চেরাইয়ের কাজ।

পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ জানান, যে যার মতো যেখানে সেখানেই স্থাপন করছে করাতকল। আমার ইউনিয়নে প্রায় এক ডজন করাত কল স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এসব করাত কল থেকে বনাঞ্চলের দুরত্ব খুবই কম।

রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ নূর জানান, পাহাড় বেষ্টিত টইটং ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেষেই আবর শাহ বাজারে স্থাপন করা হয়েছে করাত কল। যার মাধ্যমে খুব সহজেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ চলে যাচ্ছে উপকূলের বিভিন্ন উপজেলায়।

এব্যাপারে বনবিভাগের বারবাকিয় রেঞ্জ কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল বলেন, পেকুয়ায় অবৈধ করাত কলের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছ। শীঘ্রই এসব করাত কল উচ্ছেদ করা হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে শীঘ্রই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।