মোহাম্মদ শফিক:
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে আর্ন্তজাতিক সমুদ্র মহড়া। সোমবার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ কক্সবাজারের ইনানী বীচ সংলগ্ন হোটেল “রয়েল টিউলিপে” এ মহড়ার উদ্বোধন করবেন। হেলিকপ্টারে এ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধজাহাজসমূহের ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন করবেন। পরে তিনি বিচ কার্নিভালের উদ্বোধন করবেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রোববার বিকাল ৩ কক্সবাজার পৌঁছবেন। প্রথমে তিনি উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণ করবেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর মধ্যকার আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করছে।
সুত্রে জানা যায়, এ মহড়ায় আইওএনএস (IONS) এর ৩২ টি দেশের মধ্যে ২৩টি সদস্য ও ০৯টি পর্যবেক্ষক দেশসমূহের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং নৌপ্রধান, উর্দ্ধতন নৌ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞগণ অংশগ্রহণ করবেন। আগামী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সম্মিলিত মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভারত মহাসাগর উপকূলবর্তী ১১টি দেশের নৌবাহিনীর জাহাজ নৌমহড়ায় অংশ নেবে। এ মহড়ায় যুদ্ধজাহাজসমূহে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া, দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজ হতে জরূরী উদ্ধার অভিযান ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, সমুদ্রে জরুরী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপনে সহায়তা প্রদান, দূর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা এবং ফ্লিট রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে।বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ২ বছর ভারত মহাসাগরীয় নেভাল সিম্পোজিয়াম অপারেশন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী জানুয়ারিতে তার এ দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হবে। ভারত মহাসাগর উপকূলবর্তী নৌবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, সাগরে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা, ড॥যুক্তি হস্তান্তর, তথ্য আদান-প্রদান, নৌবাণিজ্য রুট জলদুস্যমুক্ত রাখাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন। সম্মেলনে আইওএনএস এর ২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব অমিরাত এবং যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে ৯টি পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে রয়েছে চীন, জার্মানী, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন।
এই সম্মেলন সফল করতে করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক প্রসুতি গ্রহণ করেছে। সরেজেিমন গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ছোট-বড় অনেক নৌজাহাজ ইনানী রেজুখাল বরারবর গভিরসাগরে নোঙ্গও করে আছে। বঙ্গোপসাগরে আসা বিদেশি জাহাজগুলো দিয়ে আগত নৌবাহিনীর সদস্য ও রাষ্ট্রীয় অন্যন্যা অথিতিরা যাতে হোটেল ও অন্যন্যা গন্তব্য স্থানে অসা যাওয়া করতে পারেন সেজন্য উখিয়া-রামুর রেজু খালের মোহনায় নৌবাহিনী কর্তৃক দৃষ্টি নন্দন ২টি কাটের বেইলি ব্রীজ, পন্তন, ও বালি দিয়ে বিশাল একটি দ্বীপ তৈরী করেছে। সেখানে বিভিন্ন কারোকাজ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। সাগরের গভিরতা নির্ণনয় করা জন্য স্থাপন করা হচ্ছে বয়া। চলছে ড্রেজিং কার্যক্রম এবং পুরোদমে চলছে অন্যান্য অবকাঠামোর কাজও। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য স্থানীয় ছোট বোটগুলোকে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের পতকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ের উপর নৌ সদস্যদের চলছে রির্হাসল।
এদিকে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে পুরো মেরিন ড্র্ইাভ সড়কে দু’ পাশে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্যানার পেষ্টুন। এছাড়া যেখানে মূল সম্মেলন চলবে ( তারকা মানের হোটেল রয়েল টিউলিব) কে করেছে দৃষ্টিনন্দন। বিভিন্ন দেশের পরিচয় বহন করতে হোটেলটির সামনে উত্তলন করা হয়েছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতকা। সাগর পাড়ে বসানো হয়েছে অতিথি আসন ও মঞ্চ। সব মিলিয়ে ওখানে সৃষ্টি হয়েছে অন্যরক মনমুºকর পরিবেশে। এছাড়াও জাহাজগুলো উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান নেওয়ায় রাত্রে উপকূলের পরিবেশ আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশে অনেকটা ভূমিকা রাখবে। বিদেশি প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কক্সবাজারের ব্র্যান্ডিং হবে। লাভবান হবে পর্যটন শিল্প। বিদেশি অতিথিরা পর্যটন স্থান হিসেবে কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে দেবেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আয়োজনে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলন উপলক্ষে পর্যটন শিল্পে কক্সবাজারের ব্র্যান্ডিং হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কক্সবাজারের প্রতি পর্যটক আকর্ষণ বাড়বে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, মহামান্য রাষ্ট্রপতির সফর ও বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর প্রতিনিধি সম্মেল সফল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সাদা পোশাকসহ ৩হাজার পুলিশ মোতায়ন থাকবে। এবং তাদের সাথে অন্যান্য প্রশাসাসনের লোকজনও সর্তক অবস্থানে থাকবে।
উল্লেখ্য যে, আইওএনএস এর ১ম সম্মেলন ২০০৮ সালে ভারতে, ২য় সম্মেলন ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ৩য় সম্মেলন ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়, ৪র্থ সম্মেলন ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবং ৫ম সম্মেলন ঢাকা, বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠিত হয়।