কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া:
কক্সবাজার-টেকনাফ ৭৯ কিলোমিটার সড়কের উপর গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক মৌসুমী হাটবাজার। কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার পর থেকে এসব হাটবাজার গড়ে তোলা হলেও সরকার এ খাতে কোন রাজস্ব পাচ্ছেনা। উপরন্ত সড়কের উপর যত্রতত্র হাটবাজার বসার কারণে দুরপাল্লার যাত্রীবাহীসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা ভিআইপিদের যানজটে পড়ে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ছাত্র/ছাত্রী, পথচারী ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সড়কের উপর থেকে রোহিঙ্গা কেন্দ্রীক অবৈধ হাটবাজার অপসারণের দাবিতে গ্রামবাসী জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ করেছে।
উখিয়া কোটবাজার ট্রাক মালিক সমিতি সভাপতি মকবুল আহমদ জানান, উখিয়া-টেকনাফে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার পর থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ ৭৯ কিলোমিটার সড়কে প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক হাটবাজার গড়ে উঠেছে। এসব পয়েন্টে সীমান্ত বাণিজ্যের মালামাল পরিবহণে নিয়োজিত গাড়ীগুলো এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে যায়। এতে একদিকে গাড়ির মালিকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ অপরদিকে শ্রমিকেরাও বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
উখিয়া বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার অভিযোগ করে জানান, উখিয়া-টেকনাফে একটি সিন্ডিকেট সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সড়কের উপর অবৈধভাবে হাটবাজার স্থাপন করে নিয়মিত টোল আদায় করছে। আদায়কৃত টোলের সমস্ত টাকা সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে ভাগাভাগি হচ্ছে। অথচ এসব অবৈধ হাটবাজার গড়ে উঠার কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তীব্র যানজটে অসাবধানতায় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ১ সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনায় রোহিঙ্গা শিশু রশিদাসহ(৫) ৫ জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরো প্রায় ১৫ জন যাত্রী।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা,কোটবাজার,উখিয়া সদর, সী-বীচ সড়ক, হিজলিয়া, মুহুরীপাড়া, হাজামরাস্তার মাথা, বড়ুয়াপাড়া রাস্তার মাথা, কুতুপালং থেকে থাইংখালী পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার জুড়ে রোহিঙ্গা কেন্দ্রীক সকাল-সন্ধ্যা হাটবাজার বসছে।
এছাড়াও পালংখালী, উলুবনিয়া রাস্তারমাথা, লম্বাবিল, মিনাবাজার, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া,মধ্যম হ্নীলা, হ্নীলা, দক্ষিণ হ্নীলা থেকে টেকনাফে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক পয়েন্টে এখন রমরমা হাটবাজার বসছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
সড়কের উপর গড়ে তোলা অবৈধ হাটবাজার পরিচালনাকারী সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্যদের সাথে আলাপ করার জন্য ঘটনাস্থলে গেলে ওই সব সিন্ডিকেট উধাও হয়ে যায়। ফলে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, টেকনাফ এলাকায় প্রধান সড়কের উপর রোহিঙ্গা কেন্দ্রীক যে সমস্ত হাটবাজার অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ওইসব হাটবাজার উচ্ছেদ করা হবে। যেহেতু এখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে নিয়মিত ভিআইপি প্রতিনিধি দল আসছে। তাদের গাড়ীগুলো ঐসব হাটবাজার এসে যাতে যানজটে পড়তে না হয় এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান বলেন, বৃহত্তর উখিয়া উপজেলার বেশির ভাগ স্থানে রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গা কেন্দ্রীক হাটবাজার গড়ে উঠলেও সরকার এ খাতে কোন রাজস্ব পাচ্ছেনা। গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে এসব হাটবাজারের কারণে দেশ-বিদেশ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা ভিআইপিদের আসা-যাওয়া সহজ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কুতুপালং এলাকায় বেশ কিছু অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপথ পালংখালী ইউনিয়নের সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন বহুমূখী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন ছিদ্দিক করে জানান, বালুখালী পানবাজার এলাকায় প্রধান সড়কের উপর রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক হাটবাজার গড়ে উঠার কারণে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ,শিশু ওই বাজারে প্রতিনিয়ত ভীড় করছে। যার ফলে প্রধান সড়কের উপর নিত্য যানজট, জন চলাচল স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা গামী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে চরম ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বাজারটি স্থানান্তর করার জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত ভাবে অভিযোগ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আলী হোসেন জানান, প্রধান সড়কের উপর যে সমস্ত অবৈধ হাটবাজার গড়ে উঠেছে তা উচ্ছেদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।