ডেস্ক নিউজ:
জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তর সিদ্ধান্ত বাতিল না করায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। এ ইস্যুতে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে সকল সরকারি কলেজের ক্লাস বর্জনসহ কঠোর ও ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের আভাস দিয়েছেন তারা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

তবে এ ধরনের কর্মসূচি দেয়া হলে তা হবে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল- এমন মন্তব্য করেছেন সরকারিকরণকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি স্কুল ও কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এরই অংশ হিসেবে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৮৪টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য অর্থছাড়ের সম্মতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওইসব কলেজের সকল সম্পত্তি সরকারকে ডিড অব গিফট (দানপত্র) দলিল সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠান সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষরা। কিন্তু ১০ মাস পার হতে চললো বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি এবং সরকারিকরণকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে জাতীয়করণের সরকারি নির্দেশ (জিও) জারি করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা চাচ্ছেন আত্তীকৃত শিক্ষকদের ‘নন-ক্যাডার’ ঘোষণা করে বিধি জারি করতে। অপর সংগঠন চাচ্ছে, সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের ক্যাডারভুক্ত করতে। নিজ নিজ দাবি আদায়ে দুই সংগঠন গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা।

এর আগে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকরণের প্রতিবাদে গত ১৩ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। কর্মসূচি অনুযায়ী সকল বিভাগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং সমাবেশ থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার ঘোষণার আল্টিমেটামও দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হওয়ায় পরের দিন (১৭ নভেম্বর) ঢাকায় মহাসমাবেশ করে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকে কিছুটা সরে আসেন সংগঠনের নেতারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিমুল্লাহ খন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয়করণ করা কলেজ শিক্ষকদের কাডারে অন্তর্ভুক্তি হলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ হাজার শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের ক্ষতি করে কিছুতেই তাদের ক্যাডারভুক্তের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে না।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন। সে কারণে আমাদের কর্মসূচি কিছুটা পেছানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৪ নভেম্বর সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। আশা করছি ২৫ নভেম্বর থেকে লাগাতার ক্লাস বর্জনসহ কঠোর কিছু কর্মসূচি দেয়া হবে।

বিসিএস শিক্ষা সমিতির একাধিক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয়করণের ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন না। কারণ বদলি না হতে পারা হচ্ছে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বৈশিষ্ট্য। ক্যাডার কর্মকর্তারা বদলি হতে পারবেন। তবে বিষয়টি জটিল করে তুলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার বলেন, প্রাধনমন্ত্রীর অনুশাসন, সরকারি চাকরির বিধিবিধান ও শিক্ষানীতির আলোকে জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা না করে বিষয়টি আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে গেছেন। আমলতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে শিক্ষকরা ক্লাসবিমুখ হয়ে আন্দোলন করছেন। বিষয়টি মীমাংসা করতে সরকার যত বিলম্ব করবে শিক্ষাব্যবস্থা তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাল্টাপাল্টি মামলা হবে।

বিগত সময় জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে আসছে সরকার। বর্তমান সরকারের আমলে জাতীয়করণ করা ৪৬টি কলেজের শিক্ষকদের আত্তীকরণ করা হয়। ২০০০ সালে তৈরি করা আত্তীকরণ বিধিমালা অনুসরণ করে শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তিতে আপত্তি করেননি সমিতির নেতৃবৃন্দ।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, সরকারি কলেজবিহীন উপজেলায় কলেজ জাতীয়করণের সিদ্ধান্তের পরই বিরোধিতা করে আসছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা। তবে সংগঠনের নেতাদের দাবি, আগে সংখ্যা কম হওয়ায় তারা বিরোধিতা করেননি।

সরকারিকরণকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কলেজ জাতীয়করণ নিয়ে বিসিএস শিক্ষক সমিতির নেতারা ষড়যন্ত্র করছেন। এটা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ক্লাস বন্ধ করে আন্দোলন করছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এটা তারা করতে পারেন না।

তিনি আরো বলেন, ২০০০ সালের আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী কলেজের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জুন মাসের মধ্যে ডিড অব গিফট করে সরকারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন সরকারি নাকি বেসরকারি, সে পরিচয়ও দিতে পারছি না। বিসিএস শিক্ষক সমিতির বাধার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।