আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ:
মিয়ানমার থেকে সাগর আর নদী রুট দিয়ে প্রতিদিন পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গা। মোটেও কমছেনা অনুপ্রবেশ। এপারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে আরো হাজার হাজার রোহিঙ্গা। ২০ নভেম্বর টেকনাফ শাহাপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, টেকনাফের নাইট্যংপাড়া ও সাগর সৈকত পয়েন্ট দিয়ে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নৌকা ও ট্রলার যোগে এবং ৮০ জন নারি পুরুষ এবং শিশু ভেলায় ভেসে এপারে ঢুকেছে। টেকনাফ থানার এসআই আশরাফ উজ্জামান জানিয়েছেন, সকাল থেকে শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন সীমান্ত হয়ে আসা ২৬ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মানবিক সহায়তা পূর্বক রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া ভোর রাতে ট্রলারে করে বঙ্গাপসাগর হয়ে আসা দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু এপারে ঢুকে টেকনাফ বাস স্ট্যান্ডে জড়ো হয়। পরে থানা পুলিশ তাঁদেরকে সেনাবহিনীর ক্যাম্পে প্রেরণ করেছে।
এছাড়া নয়াপাড়া বিজিবি সুত্রে জানা গেছে, সকাল ১০ টার দিকে নাফ নদ দিয়ে একটি ভেলায় ভেসে ৮০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু নয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে এপারে ঢুকেছে। তাদের সকলকে উদ্ধার করে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের অমানবিক অত্যাচারের মধ্যে খাদ্য ও কাজ কর্ম না থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাপন করতে হয়েছে। তাই তারা এপারে চলে এসেছেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বুচিডং পেরুল্লা, পুইমালী, তিতুকপাড়া, ইয়ংসং, হরমোড়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এসব এলাকার দিয়ে এক সাথে ৪ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা বের হয়েছিল। ২ থেকে ৩ শত রোহিঙ্গা আসতে পারলেও বাকিরা ধনখালী চর ও গর্জনদিয়া চরে এপারে আসার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। বুছিডং থানার পেরুল্লা গ্রামের সত্তোর্ধ বৃদ্ধা ধৌলত খাতুন জানান, দেড় মাস পূর্বে পরিবারের অন্যান্য সদস্য এদেশে আশ্রয়ে আসলেও এক ছেলে ও এক নাতিসহ সে মিয়ানমারে রয়ে যায়। বৃদ্ধকালে নিজ জম্মভূমি ছেড়ে চলে আসতে না চাইলেও খাদ্য, চিকিৎসা ও কর্মের সংকট প্রকট হওয়ায় এপারে আসতে বাধ্য হয়েছি। গত ১৫ দিন আগে ঘর থেকে বের হলেও এপার থেকে নৌকা না যাওয়ায় রাখাইন সীমান্তের গর্জন দিয়া চরে অপেক্ষায় থাকি।
একই থানার ইয়ংসং গ্রামের আমিনা খাতুন (৩৫) জানান, পরিবারের ৭ জন সদস্য নিয়ে এপারে আশ্রয়ে আসার জন্য ৭ দিন ধরে গর্জনদিয়া চরে অপেক্ষায় থাকেন। সেখানে আরো ৫/৬ হাজার মতো রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে আছে। সেখানে সেনারা তালিকা তৈরী করছে। গ্রামে রাত দিন সেনাদের ভয়ে রাখাইনে বসবাস মুশকিল হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন আগেও পাশের বাড়ীর লালুর মেয়ে মোস্তাকিমকে সেনারা তুলে নিয়ে যায়। এখনো তার কোন খবর নেই।
নতুর করে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে আগুন ও নির্যাতনের বর্ণনা শুনা না গেলেও এখন খাদ্য, চিকিৎসা ও অঘোষিত অবরোধের একই কাহিনী সবার মুখে। তবে এবার আসা মানুষগুলো প্রায় হাড্ডিসার ও অসুস্থ অবস্থায় দেখা গেছে। যা খাদ্য ও প্রকট চিকিৎসা সংকট প্রতীয়মান।