মো: আকতার হোছাইন কুতুবী :

বিখ্যাত লেখক আইনস্টাইনের উক্তি দিয়ে “এ পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না” যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করে না তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে। আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “তুমি সবসময় কিছু লোককে বোকা বানাতে পার, কিছু সময় সব লোককে বোকা বানাতে পার, কিন্তু সব সময় সব লোককে বোকা বানাতে পারো না।” তুবও বৃষ্টি আসুক পর্যালোচনা করতে গিয়ে কেমন জানি নিজেও হারিয়ে গিয়েছি বইটা পড়ে। এত সুন্দর শব্দ গোছন, হৃদয় নাড়া দেওয়ার মতো প্রতিটি লাইন কেমন জানি আমাকে খুব আক্ষ্টৃ করেছে। প্রেম বিরহের দু’টো শব্দকে নিয়ে লেখক শফিকুল ইসলাম যেভাবে গবেষণায় মগ্ন হয়ে মনে রাখার মতো স্মৃতির পাতাতে আমৃত্যু রয়েছে যাবে তার এই ধ্যান-জ্ঞান।
‘তবুও বৃষ্টি আসুক’ কবি শফিকুল ইসলামের অনন্য কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। তার কবিতা আমি ইতিপূর্বে পড়েছি। ভাষা বর্ণনা প্রাঞ্জল এবং তীব্র নির্বাচনী। ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’ গ্রন্থে মোট ৪১ টি কবিতা রচিত হয়েছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এ গ্রন্থ পাঠ করে পূর্বেই বলেছি, মন অনাবিল তৃপ্তিতে ভরে যায়।
বইটির প্রথম কবিতায় মানবতাহীন এই হিংস্র পৃথিবীতে কবির চাওয়া বিশ্ব মানবের সার্বজনীন আকাংখা হয়ে ধরা দিয়েছে। কবি বলেছেন–
‘তারও আগে বৃষ্টি নামুক
আমাদের বিবেকের মরুভূমিতে-
সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক,
আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা,হৃদয়ের গ্লানিৃ
(কবিতা:তবুও বৃষ্টি আসুক’)
প্রকৃতি, প্রেম, নারী, মুক্তিযোদ্ধা, মা এবং সুলতা নামের এক নারী তার হৃদয় ভরে রেখেছে। তাকে কিছুতেই ভোলা যায় না। মা তার কাছে অত্যন্ত আদরের ধন। মাকে তার বারবার মনে পড়ে।
মনে পড়ে সুন্দরী সুলতাকে, যে তার হৃদয়ে দোলা দিয়েছিল। বেচারা তার জীবন, মৃত্যুহীন মৃত্যু। তাই তিনি এখন ও সুলতাকে খুঁজেন । যার জন্য তিনি অনন্তকাল প্রতীক্ষায় আছেন। এই প্রিয়তমা তার হৃদয়-মন ভরে আছে। নদীর জল ও তীরের মত এক হয়ে মিশে আছে । এই প্রেম বড়ই স্বর্গীয়, বড়ই সুন্দর। একে ভোলা যায় না। প্রকৃতি আর সুলতা কখন একাকার হয়ে যায় হৃদয়ে।
জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে কাঙ্খিত ও অকাঙ্খিত কিছু না বলার স্মৃতি সকল নারী পুরুষের থাকে। যারা তাদের কাঙ্খিত আশা পূর্ণ করতে পারেন তারা হয়ত দুনিয়াবী জীবনে স্বর্গের প্রাসাদ গড়ে তোলেন। আর অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনা যখন মানুষের দুয়ারে এসে হাতছানি দিয়ে ডাকে তখন পৃথিবীটা মনে হয় দোযখের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তবে আমার প্রিয় লেখক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব প্রেম ও বিরহ নিয়ে লেখার জীবন্ত আলোকিত ব্যক্তিত্ব শফিকুল ইসলাম সাদা মনের ভিন্ন ধারার রোমান্টিক লেখক। কাব্যগ্রন্থটি পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। বইটির ছাপা অত্যন্ত সুন্দর। ধ্রুব এষের প্রচছদ চিত্রটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

তবুও বৃষ্টি আসুক

-শফিকুল ইসলাম

বহুদিন পর আজ
বাতাসে বৃষ্টির আভাস,
সোঁদা মাটির অমৃত গন্ধ-
এখনই বুঝি বৃষ্টি আসবে
সবারই মনে উদ্বেগ-
তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার ব্যস্ততা।
তবু আমার মনে নেই বৃষ্টি ভেজার উদ্বেগ
আমার চলায় নেই কোনো লক্ষণীয় ব্যস্ততা।
দীর্ঘ নিদাঘের পর
আকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির সম্ভাবনা
অলক্ষ্য আনন্দ ছড়ায় আমার তপ্ত মনে –
আর আমি উন্মুখ হয়ে থাকি
বৃষ্টির প্রতীক্ষায় –
এখনই বৃষ্টি নামুক
বহুদিন পর আজ বৃষ্টি আসুক।
দীর্ঘ পথে না থাকে না থাকুক বর্ষাতি –
বৃষ্টির জলে যদি ভিজে যায় আমার সর্বাঙ্গ
পরিধেয় পোশাক-আশাক-
তবুও বৃষ্টি আসুক –
সমস্ত আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামুক
বৃষ্টি নামুক মাঠ-প্রান্তর ডুবিয়ে।
সে অমিতব্যয়ী বৃষ্টিজলের বন্যাধারায়
তলিয়ে যায় যদি আমার ভিটেমাটি
তলিয়ে যাই যদি আমি
ক্ষতি নেই।
তবুও বৃষ্টি নামুক
ইথিওপিয়ায়, সুদানে
খরা কবলিত, দুর্ভিক্ষ-পীড়িত
দুর্ভাগ্য জর্জরিত আফ্রিকায়-
সবুজ ফসল সম্ভারে ছেয়ে যাক
আফ্রিকার উদার বিরান প্রান্তর।
তার ও আগে বৃষ্টি নামুক
আমাদের বিবেকের মরুভূমিতে
সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক,
আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা, হৃদয়ের গ্লানি।
মানুষের জন্য মানুষের মমতা
ঝর্ণাধারা হয়ে যাক
বৃষ্টির সাথে মিলেমিশে –
সব পিপাসার্ত প্রাণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
বয়ে যাক অনন্ত ধারাজল হয়ে।
বহুদিন পর আজ
অজস্র ধারায় অঝোরে বৃষ্টি নামুক
আজ আমাদের ধূলি ধূসরিত
মলিন হৃদয়ের মাঠ-প্রান্তর জুড়ে ॥

মো: আকতার হোছাইন কুতুবী ,সহ-সম্পাদক জাতীয় দৈনিক আমার কাগজ, দি গুড মর্নিং, প্রধান সম্পাদক জাতীয় ম্যাগাজিন জনতার কণ্ঠ ও উপদেষ্টা সম্পাদক জাতির আলো, ঢাকা।