আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ:
টেকনাফের নাফ নদ উপকূলীয় প্যারাবন ও জইল্যার দ্বীপে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার বাইন গাছ মরে যাচ্ছে। উঠতি চারাগুলোও নষ্ট করছে মহিষের পাল। রোহিঙ্গারাসহ এক শ্রেণীর লোকজন কেটে নিয়ে যাচ্ছে গাছগুলো। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেওয়ার পাশাপাশি জোয়ার ভাটার তোড়ে বেড়ীবাঁধ ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে।

নাফ নদ উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ছাড়াও হাজার হাজার বড় আকৃতির বাইন ও কেওড়া গাছ রয়েছে। গত এক মাস ধরে উপকূলীয় প্যারাবনে বাইন গাছ গুলোতে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘লেদা’ নামক এক থেকে দেড় ইঞ্চি সাইজের এক প্রকার পোকা বাইন গাছগুলোকে আক্রান্ত করছে। গত দুই/তিন বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে আসলেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যা বাইন গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি এক থেকে দুই মাস পর্যন্ত গাছকে দূর্বল করে রাখে। এসময় গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে যায় এবং ডালপালা শুকিয়ে প্রায় গাছগুলো মরে যায়। আবার দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কিছু কিছু গাছে নতুনভাবে পাতা গজায়। এই অজানা রোগটি গত তিন বছর যাবৎ বাইন গাছকে আক্রান্ত করে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত বাসিন্দারা এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করতেও দেখা গেছে। এদিকে প্রতিদিন মহিষের পাল প্যারাবনে চড়তে যাওয়ায় ছোট ছোট অঙ্কুরিত চারাগুলো নষ্ট করছে। এতে নতুনভাবে গজে উঠা চারাগুলো নষ্ট হওয়ায় বড় হতে পারছেনা। আবার স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ভাবে গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের প্যারাবনের গাছগুলো। এতে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি উপকূলীয় বেড়ীবাঁধ নাফ নদের জোয়ার ভাটায় ভেঙ্গে যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে এর বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। উপকূর রক্ষা করতে হলে গাছের বিকল্প নেই। আর সেই গাছগুলো যদি এভাবে নষ্ট হয় তাহলে হুমকীর মূখে পড়তে পারে উপকূল। এছাড়া ঘুর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে হাজার হাজার গাছ নষ্ট হয়ে যায়। সেই ক্ষতি ও সংকট কাটিয়ে উঠারে মুহুর্তে এভাবে রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাওয়ায় উপকুলবাসীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তাই দ্রুত এবিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন উপকূলীয় এলাকার সচেতনমহল।

এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা কোষ্টাল রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, পোকায় আক্রান্ত হয়ে বাইন গাছগুলো অধিকাংশ মরে যাচ্ছে। এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করে ফের পোকা ও গাছের ছবিসহ আবারো প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য পত্র প্রেরণ করেছে। এ নিয়ে সরেজমিন কাজ করে প্রতিবেদন পাঠানোর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতি পরিবর্তনের ফলে এধরনের অজানা রোগে বাইন গাছগুলো নষ্ট হচ্ছে। মহিষের পাল যাতে প্যারাবনে নামতে না পারে সে বিষয়ে স্থানীয়দেরকে সাবধান এবং গাছ কাটা থেকে বিরত থাকতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারীদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।