আতিকুর রহমান মানিক:
বাগদা চিংড়ি ঘেরের লবণাক্ত পানিতে উৎপাদিত রকমারী প্রজাতির মাছে সয়লাব হয়ে গেছে জেলার হাট-বাজার। প্রায় দুইমাস আগে থেকেই বাটা, গুইল্যা (টেংরা) দাঁতিনা, কোরাল, ধুম, তাইল্লা ও লইল্যাসহ বিভিন্ন রকম মাছ বাজারে আসতে শুরু করে। এখন ঘেরে মাছ উৎপাদন ও আহরন বেশী হওয়ায় বাজারে মাছের সরবরাহও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার পৌরসভার বড়বাজার, কানাইয়া বাজার, সমিতি পাড়া বাজার, বাহারছড়া বাজার ও সদরের ঈদগাঁও বাজারসহ অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার চিংড়ি ঘেরে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ভরে গেছে।
চলতি বছর চিংড়ি উৎপাদন মৌসুমের শেষপ্রান্তে এখন বাজারে আসছে চিংড়ি ঘেরে চিংড়ির পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে উৎপাদিত রকমারী মাছ। গত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর ২২ দিনব্যাপী মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম চলার সময় জেলাব্যাপী ফিশিং বোটগুলো মাছ আহরনের জন্য সাগরে যায়নি। কক্সবাজার মৎস্য অবতরন কেন্দ্র, টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ জেটিঘাট, মহেষখালীর গুরকঘাটা ও কুতুবদিয়া উপজেলার গভীর সমূদ্রগামী ফিশিংট্রলার গুলো এসময় অলস বসে থাকার ফলে জেলা ব্যাপী সামুদ্রিক মাছের অকাল সৃষ্টি হয়েছিল। তখন প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়েছে এসব মাছ। গত মাসখানেক ধরে জেলার চিংড়ি ঘের সমূহ থেকে আহরণকৃত বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ বাজারে বিক্রির জন্য তুলছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এখন মাছের অকাল অনেকাংশেই কেটে গেছে। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকার চিংড়ি ঘেরে চিংড়ির পাশাপাশি এখন ধরা পড়ছে তাইল্যা, বাটা, দাতিনা, গুইল্যা, ঘঘ, ভেটকি (কোরাল), কেচকি ও লইল্যাসহ বিভিন্ন প্রজাতির লবনাক্ত পানির সু-স্বাদু মাছ। তাজা এসব মাছ ভোক্তাদের চাহিদা মিঠিয়ে পাঠানো হচ্ছে জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারে। অনেক ঘেরে রুই-কাতলা-মৃগেল ও কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছেড়েছিলেন চাষীরা। মৃদু লবণাক্ততায়ও মিঠা পানির এসব মাছ ভালভাবে বেড়ে উঠেছে। এখন ভোক্তাদের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা যোগানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে উপরোক্ত সব প্রজাতির মাছ।
এদিকে বাজারে মাছের সরবরাহ বেশী হওয়ায় ব্রয়লার মুরগী ও গরু-মহিষের মাংসের দাম এখন কিছুটা কমে গেছে। ইতিপূর্বে প্রতিকেজি ১৬০/১৭০ টাকার মুরগী এখন ১০০/১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে ও গরুর গোস্ত ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৪০০/৪৫০ টাকায় নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। কমেছে ডিমের দামও। জেলার বিভিন্ন বাজারের কাঁচাবাজারস্থ মাছ বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চিংড়ি প্রজেক্ট থেকে আহরিত রকমারী প্রজাতির বিপুল পরিমাণ মাছের সমারোহ। বাজারে উঠা মাছের মধ্যে তাইল্যা মাছ প্রতি কেজি ১৫০, বাটা ৩০০, গুইল্যা ২৮০, দাতিনা ২৫০, বিভিন্ন সাইজের কোরাল মাছ ২০০-৪০০, ঘ-ঘ মাছ ১৫০-২০০, কেঁচকি ১০০-১৫০, রুই-কাতলা-মৃগেল ১৫০-২০০ টাকা, লইল্যা চিংড়ি ৩২০-৩৫০, চাগা চিংড়ি (ভানামী) ৪০০-৫০০ ও বাগদা চিংড়ি আকারভেদে ৫০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঘের থেকে আহরনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাজা এসব মাছ বাজারে তোলা হচ্ছে। ফরমালিনমুক্ত টাটকা এসব মাছ পেয়ে ক্রেতারা আগ্রহ ভরে কিনে নিচ্ছেন। অনেকে আবার বেশী পরিমানে কিনে ফ্রীজ ভর্তি করে রেখে দিচ্ছেন। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ( সদর) ডঃ মঈন উদ্দীন আহমদ জানান, জেলায় উপকূলীয় ৫১৮৮ টি ঘেরে মোট ৪১ হাজার ৩৬৭ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডঃ মোঃ আবদুল আলীম বলেন, চলতি বছর চিংড়ি উৎপাদন মৌসূম শুরু হওয়ার পর থেকে চাষীদের সার্বক্ষনিক প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালে জেলায় ২২ হাজার ৩০২ মেট্রিক টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।