তানভিরুল মিরাজ রিপন

যৌগ্যতা সমগুন থাকতে হবে সমালোচনা করতে?বয়সও বিষয় না,বরং কনসেপ্ট এর সাথে দিনকাল মিশিয়ে বাস্তবতার পাল্লায় রেখে বিচার করতে জানাটা হলো সমালোচকের কাজ। এতে যৌগ্যতা হলো যুক্তি,স্ট্রং পয়েন্ট এবং বাস্তবিক ধারনা।প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে তা নয়।

বরং “ছাড়িয়ে ছেড়ে আসতে হবে।ভক্তি করা যায়,কিন্তু স্থির হয়ে যেতে নয়। ভয় রেখে সমালোচনা করতে হয়?রবীন্দ্রনাথ এর সমালোচনা করার জন্য রবীন্দ্রনাথ উৎপাদন হয়নি বরং এই সময়ের বর্ত্তমান লেখক, সাহিত্যবিশারদগনই সমালোচনা করছে।”

এখন কথা হলো আপনি সমালোচনা বলতে কি বুঝেন? “ছদনা?গীবত?পরচর্চা?নাকি সবকিছু বিচার করে আলোচনা?”

হুমায়ূন আহমেদ একেবারে নাকচ করবার মতো সাহিত্যিকতো ছিলেন না।অবশ্যই মানতে হয় তার লেখনিতে বাংলাদেশের নিজস্ব লেখনিসত্বা,ধাঁচ ফুটে উঠেছে এটি একেবারে নাকচ করবার মতো বিষয় নয়,আমিও তার পাঠক। পাঠকদের সস্তা আর মূল্যবান বলে দুটো ভাগ অবশ্যই করা যায় না। বই কেউ প্রশান্তির জন্য পড়ে কেউ বদলে যাবার জন্য পড়ে,প্রশান্তির জন্য যারা পড়ে তারা বিনোদন পাওয়ার জন্যই বই পড়ে। বইগুলো হুমায়ূন আহমেদ বিনোদনের জন্য  লিখে থাকেন তাহলে বিনোদনের মতো বাষ্পিত অনুভূতি আদতে আমাদের কি উপহার দিতে পারে?নিয়ম,নীতি,কলা,সংস্কৃতি সমাজবিধি,চিন্তা ধারা প্রবেশ করে দেওয়া বা অন্ধকারের ভাংগন বা মেনে নিতে পারার প্রবনতা বা সমাজের অন্ধতা এসব কি বিনোদনের মধ্য দিয়ে বদলানো যেতো উনি যদি মনে করতেন যে এই সমাজ বদলানো উচিত তখন অবশ্যই তিনি তার সে লেখনি দিয়ে বদলাতে পারতেন। সচেতন বলতে আমরা বুঝিটা কি?সচেতন বলতে তো এমনটাই তো বুঝি যে সময়ের সাথে মিশে যায় না,বরং নতুনের ডাক আসলে নতুনকে গ্রহন করে তুলনামূলক বিবেচনার মধ্য দিয়ে।”সময়ের সাথে সাথে যে তাল মিলিয়ে চলে সে আদতে উচ্চশিক্ষিত হোক বা জনদরদী হোক সে পঙ্গপালের নেতার চেয়েও নিম্ন” এরকম একটা কথা থেকে যায়,যে তার সময় নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো সে আদতে উচু শ্রেনীর ছিলেন?বা ছিলেন না সেটা বিবেচ্য বিষয়।”যে সন্তুষ্ট সে স্থির” সে স্থির সাহিত্যিকের যে চরিত্র বাস্তবিকতায় এনে দাড় করানোটা যথেষ্ট দুর্বোধ্য কাজ।তরুণদের হলুদ পাঞ্জাবি পরে,তরুণীরা নীল শাদাতে মানিয়ে নিচ্ছে।পাঠকের কাছে এভাবে পৌছাতে পারা খুবই কঠিন। উনি সহজ ও সাবলীল ভাষায় উনার বড় গল্পগুলো সাজিয়েছেন, চরিত্র এনে দিয়েছেন যেটি গ্রহন করছে।কিন্তু যে সকল পাঠক “হলুদ হিমু “সাজতে চেয়ে পোশাক পরে এবং মনে প্রানে উড়নচন্ডীতাকে সমর্থন করে না।বরং কথায় কথায় সাহিত্যকে নাক ছিটকিয়ে বলে “পেট চালানোর সময়  সাহিত্যের সূত্র খাটেনা।” তখন আদতে হুমায়ূন আহমেদ এর সৃষ্ট ” হিমু “কাপড়ের ধরে দামে হয়ে যাচ্ছে না?আর এই কর্পোরেট বিষয়টা রূপাদের বুঝাতে পারেননি বলেই “উড়নচন্ডী হিমু চরিত্রের “কোন পুরুষকে স্বপ্নেও দেখেন না।  তারা হিমু চাইনা মনে প্রানে মূলত দুজোড়া ল্যাকমি ব্র্যান্ডের কাজল বা অন্তর্বাস চাই।কর্পোরেট বিষয়টাকে যখন হূমায়ূন আহমেদ বাস্তবিক রূপাদের মস্তিষ্কে সহজ করে দেওয়ার চেষ্টা করেননি,তাই এই নগর জীবনে গোলপাতা  দিয়ে বানানো কুড়েঘর রূপার পছন্দ না।বাস্তবিক জীবনটাতে একটা মতবাদের প্রয়োজন পড়ে প্রতিটি মানুষের। হুমায়ূন আহমেদের লেখনির সমালোচনা করার মতো যৌক্তিকতা নেই খুব একটা তবে বই গুলো আদতে কি বার্তা দিচ্ছে?বা দিতে পারছে?জীবনমানে হিমু অস্থির রকম কর্পোরেট স্বপ্ন দেখা লোক বা মিসির আলীর মতো আশ্চর্য চরিত্র সৃষ্টি উনি করেছেন,চরিত্র খুবই আপেক্ষিক লেখকের কাছে।সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে আরো অনবদ্য কিন্তু জীবনমানের সাথে যদি না গিয়েই থাকে লেখনি তাহলে জনপ্রিয় হোক,তুমুল পাঠক প্রিয় হোক,সময় নিয়ে যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট তিনি সচেতনও হতে পারেন না,প্রশ্নই উঠেনা সময়ের সাথে খাঁপ খেয়ে যাওয়া ব্যক্তি কারা সেটা ইতোমধ্যে পাঠকের কাছে পরিষ্কার।

হুমায়ূন আহমেদ এর প্রথম দিকের বইগুলোর মর্মার্থ গভীর ছিলো,কিন্তু পরে পরে তিনি ধূলাবালির মতো সবার পায়ে,মুখে,বুকে মেখে গেলেন।এই মেখে যেতে পারাটা ভাল কিন্তু ধূলাবালি না ছাড়ানোটা মূলত ভালো নয়।
মধ্যবিত্ত সমাজ ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো তিনি স্পষ্টতর ভাবে বুঝতে পেরেছেন,কিন্তু সমাধানের ক্ষেত্রে তিনি সেসবের সমাধান খুজে দেননি।

লেখক:
হুমায়ূন আহমেদ পাঠক,ছাত্র গণ সাংবাদিকতা ও সম্প্রচার প্রকৌশল বিভাগ।